(বাঁ দিকে) ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শমীক ভট্টাচার্য (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
শীতকালীন অধিবেশনে ঘটনাচক্রে ‘লাস্ট বয়’ ছিলেন। বাজেট অধিবেশনে এক লাফে উঠে এলেন প্রায় শীর্ষে। প্রশ্নসংখ্যার নিরিখে তৃণমূলের ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার রাজ্যসভা সাংসদদের মধ্যে এ বার দ্বিতীয় স্থানে। তাঁর থেকে একটি প্রশ্ন বেশি করে প্রথম স্থানে এ বারেও বিজেপির শমীক ভট্টাচার্য। পশ্চিমবঙ্গ থেকে লোকসভায় রয়েছেন যাঁরা, তাঁদের মধ্যেও প্রশ্নসংখ্যায় শীর্ষে এক বিজেপি সাংসদ। তিনি খগেন মুর্মু। শীতকালীন অধিবেশনেও খগেন ছিলেন শীর্ষে।
ঋতব্রত এই নিয়ে দ্বিতীয় বার রাজ্যসভার সদস্য হয়েছেন। এর আগের বার গিয়েছিলেন সিপিএমের টিকিটে। পূর্ণ মেয়াদের জন্য। যদিও শেষ দিকটা তাঁকে ‘দলহীন সাংসদ’ হয়ে থাকতে হয়েছিল। এ বার ঋতব্রত রাজ্যসভায় গিয়েছেন তৃণমূলের জহর সরকার মেয়াদ ফুরোনোর আগেই ইস্তফা দেওয়ায়। আগের বার ছ’বছরে ৭২৩টি প্রশ্ন করেছিলেন ঋতব্রত। কিন্তু নিজের দ্বিতীয় ইনিংসের প্রথম অধিবেশনে তাঁর একটাও প্রশ্ন ছিল না। ঋতব্রতের কথায়, ‘‘আমি শপথ নিয়েছিলাম ১৬ ডিসেম্বর। ২০ তারিখ অধিবেশন শেষ হয়ে যায়। পাঁচ দিন অধিবেশনে যোগ দিতে পেরেছি। প্রশ্ন আগাম জমা দেওয়ার তারিখ তার আগেই পেরিয়ে গিয়েছিল। আমার প্রশ্ন করার কোনও সুযোগই ছিল না।’’ তখনই ঋতব্রত দাবি করেছিলেন যে, ‘বাজেট অধিবেশনে ছবিটা এ রকম থাকবে না।’ হলও তাই। ‘ফার্স্টবয়’ হয়ে উঠতে পারেননি ঠিকই, কিন্তু যে অধিবেশনে প্রথম বার প্রশ্ন জমা দেওয়ার সুযোগ পেলেন, সেই অধিবেশনেই নিজের রাজ্যের সাংসদ-তালিকায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রশ্নকর্তা হয়ে উঠলেন।
রাজ্যসভায় পশ্চিমবঙ্গের ১৬ জন সদস্য রয়েছেন। তৃণমূলের ১৩ জন, বিজেপির দু’জন, সিপিএমের এক জন। বিজেপির শমীক রাজ্যসভার বঙ্গীয় সাংসদদের মধ্যে শীতকালীন অধিবেশনেও সর্বোচ্চ প্রশ্ন করেছিলেন। বাজেট অধিবেশনেও তিনিই সর্বোচ্চ। ৪১টি প্রশ্ন করেছেন শমীক। তাঁর থেকে মাত্র একটি প্রশ্ন কম করে যুগ্ম ভাবে দ্বিতীয় স্থানে তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েন এবং ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। ৩৯টি প্রশ্ন করে তৃতীয় স্থানে তৃণমূলেরই নাদিমুল হক। রাজ্যসভায় কোনও প্রশ্ন করেননি বাংলার চার জন সাংসদ। তিন জন তৃণমূলের— সুব্রত বক্সী, সুখেন্দুশেখর রায়, মমতাবালা ঠাকুর। কোনও প্রশ্ন ছিল না সিপিএমের বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যেরও।
লোকসভায় পশ্চিমবঙ্গের আসনসংখ্যা ৪২। তাঁদের মধ্যে দু’জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তাঁরা প্রশ্ন করতে পারেন না, প্রশ্নের উত্তর দেন। বসিরহাটের সাংসদ হাজি নুরুল ইসলামের প্রয়াণের কারণে একটি আসন খালি। বাকি ৩৯ জন সাংসদের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রশ্ন করেছেন উত্তর মালদহের বিজেপি সাংসদ খগেন। তিনি বাজেট অধিবেশনে মোট ৪৭টি প্রশ্ন করেছেন। ৩৩টি প্রশ্ন করে দ্বিতীয় স্থানে দমদমের তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। ২৮টি প্রশ্ন করে তৃতীয় স্থানে হুগলির তৃণমূল সাংসদ রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলা থেকে নির্বাচিত ১০ জন লোকসভা সাংসদ কোনও প্রশ্ন করেননি বাজেট অধিবেশনে। তাঁদের মধ্যে ন’জনই তৃণমূলের— সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, শত্রুঘ্ন সিন্হা, শতাব্দী রায়, মিতালি বাগ, পার্থ ভৌমিক, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, অসিত মাল, শর্মিলা সরকার এবং জগদীশচন্দ্র বর্মা বসুনিয়া। বিজেপির সাংসদ তথা প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কেও বাজেট অধিবেশনে কোনও প্রশ্ন করতে দেখা যায়নি। এঁরা কেউই শীতকালীন অধিবেশনেও সংসদে কোনও প্রশ্ন করেননি।