সোমবার প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে হবে আরজি কর মামলার শুনানি। —ফাইল চিত্র।
আরজি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসক খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় গত শুনানিতে সিবিআই তদন্তে বিস্ময় প্রকাশ করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। আদালত জানিয়েছিল, তদন্তের অগ্রগতির রিপোর্ট বলছে তদন্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছে। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চ জানায়, সিবিআইয়ের রিপোর্ট দেখে আমরা বিচলিত। তদন্তের দিশা স্পষ্ট করতে সিবিআইকে আরও সময় দেওয়া প্রয়োজন। শীর্ষ আদালতের ওই মন্তব্যের পরে কেটে গিয়েছে ১২ দিন। সোমবার প্রায় দু'সপ্তাহ পরে সুপ্রিম কোর্টে উঠছে আরজি কর-কাণ্ডের মামলা। এখন তদন্ত কোন পর্যায়ে রয়েছে? তদন্তে নতুন কিছু উঠে এল কি না? সোমবার আরজি কর মামলার পঞ্চম শুনানিতে ওই সব প্রশ্নগুলি ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট সূত্রে খবর, দুপুর ২টো নাগাদ ১ নম্বর কোর্টে মামলাটির শুনানি হবে। আদালতের পূর্ব নির্দেশ মতো মামলায় যুক্ত বিভিন্ন পক্ষ বক্তব্য জমা দিয়েছে। এই মামলায় এখনও পর্যন্ত ৪৪টি পক্ষ রয়েছে। তাদের হয়ে দাঁড়িয়েছেন ২০০-র বেশি আইনজীবী।
ওই ঘটনার তদন্ত কতদূর এগোল সোমবার তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে রিপোর্ট দিতে পারে সিবিআই। গত ১২ সেপ্টেম্বর সিবিআইকে একটি চিঠি দিয়েছিলেন নির্যাতিতার বাবা। সেখানে তিনি তদন্ত সম্পর্কিত বেশ কিছু বিষয় তুলে ধরেন। শীর্ষ আদালত ওই বিষয়গুলি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেয়। গত শুনানিতে সিবিআইয়ের আইনজীবী তথা কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা জানিয়েছিলেন, নির্যাতিতার বাবার সঙ্গে দেখা করবেন ওই তদন্তের সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকেরা। তাঁর উদ্বেগের বিষয়গুলি বিবেচনা করা হবে। সেই মতো সিবিআই কী পদক্ষেপ করেছে সোমবার সুপ্রিম কোর্টকে তা জানানোর কথা।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ ছিল, উইকিপিডিয়াকে নির্যাতিতার নাম ও ছবি সরিয়ে ফেলতে হবে। ভারতীয় আইন অনুযায়ী নির্যাতিতার নাম ও ছবি প্রকাশে বাধা রয়েছে। ওই বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে কি না তা জানতে চাইতে পারে শীর্ষ আদালত। রাজ্যকে শীর্ষ আদালত বলেছিল, আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে জেলাশাসক, মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপাল ও সিনিয়র বা জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা করে হাসপাতালে বিশ্রাম কক্ষ, শৌচাগার এবং সিসি ক্যামেরা বসানো নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ওই বিষয়টিও কতদূর এগোল সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে তা উঠতে পারে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে বেশ কয়েকটি দাবি জানায় জুনিয়র ডক্টরস' ফ্রন্ট। তার কয়েকটি দাবি তিন দিনের মধ্যে রাজ্যকে বিবেচনা করতে বলেছিল সুপ্রিম কোর্ট। ওই নির্দেশগুলি কতগুলি কার্যকর হয়েছে তা জানতে পারে তিন বিচারপতির বেঞ্চ। অন্য দিকে, জুনিয়র ডাক্তারেরা কাজে যোগ দিলেও প্রতিবাদ, বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের সমস্ত দাবি এখনও মানা হয়নি বলে অভিযোগ। এমতাবস্থায় সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য কী অবস্থান নেয় তা দেখার।
এই মামলায় এখনও পর্যন্ত ৪২টি পক্ষ যুক্ত হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে অন্যতম প্রধান ন'টি পক্ষ। বিগত শুনানির মতো রাজ্যের হয়ে সওয়াল করবেন আইনজীবী কপিল সিব্বল ও মেনকা গুরুস্বামী। এসজি তুষার মেহতা লড়াই করবেন সিবিআইয়ের হয়ে। নির্যাতিতার পরিবারের হয়ে থাকবেন আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভার ও শামিম আহমেদ। গত শুনানিতে বৃন্দা নির্যাতিতার বাবার অভিযোগ সুপ্রিম কোর্টে তুলে ধরেন। ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টের হয়ে লড়বেন আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংহ। আইনজীবী করুণা নন্দী ও সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস ওয়েস্ট বেঙ্গলের হয়ে। ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের হয়ে সওয়াল করেন প্রবীণ আইনজীবী মনিন্দর সিংহ। এই মামলায় যুক্ত হয়েছে দিল্লি মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন। তাদের আইনজীবী বিজয় হংসরিয়া। আরজি কর কাণ্ড নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। আইনজীবী হিসাবে তিনি সিদ্ধার্থ লুথরা ও বাঁশরী স্বরাজকে দাঁড় করিয়েছেন। অন্য আরেক জনস্বার্থ মামলাকারী বিজয়কুমার সিঙ্ঘলের হয়ে সওয়াল করবেন আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি।
ওই হাসপাতালের ঘটনার ৫০ দিন হয়ে গেল। ন্যায়বিচারের দাবিতে নানা জায়গায় প্রতিবাদ, বিক্ষোভ চলছে। বিচারের আশায় পথে নামছেন মানুষ। এই অবস্থায় সুপ্রিম কোর্ট কী নির্দেশ দেয় সে দিকে তাকিয়ে রাজ্য তথা দেশবাসী।