Saline Controversy

গিনিপিগের মতো মানুষের শরীরেও স্যালাইন? প্রসূতি মৃত্যুতে প্রশ্নের মুখে রাজ্য, কোর্ট-শুনানিতে কী কী হল?

হাই কোর্ট ইতিমধ্যেই স্যালাইন-কাণ্ডে রিপোর্ট তলব করেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতর এবং রাজ্যের মুখ্যসচিবের কাছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে ক্ষতিপূরণও দিতে বলা হয়েছে রাজ্যকে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ ১৩:০৪
মেদিনীপুর মেডিক্যালে স্যালাইন হাতে নিয়ে রোগীর পরিবারের বিক্ষোভ।

মেদিনীপুর মেডিক্যালে স্যালাইন হাতে নিয়ে রোগীর পরিবারের বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।

স্যালাইন-কাণ্ডে কলকাতা হাই কোর্টে প্রশ্নের মুখে পড়ল রাজ্য সরকার। গত ১০ ডিসেম্বর ড্রাগ কন্ট্রোলার একটি নির্দিষ্ট সংস্থাকে ‘রিঙ্গার্স ল্যাকটেট’ স্যালাইন উৎপাদন বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়ার পরেও কেন হাসপাতালে হাসপাতালে সেই স্যালাইন ব্যবহার হল, প্রশ্ন উঠে তা নিয়ে। জনস্বার্থ মামলাকারীর আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি প্রশ্ন তুললেন, ‘‘গিনিপিগের মতো মানুষের শরীরে পরীক্ষার জন্যই কি ওই স্যালাইন হাসপাতাল থেকে তুলে নেওয়া হয়নি এত দিন?’’

Advertisement

হাই কোর্ট ইতিমধ্যেই স্যালাইন-কাণ্ডে রিপোর্ট তলব করেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যাণ দফতর এবং রাজ্যের মুখ্যসচিবের কাছে। হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, স্যালাইন প্রস্তুতকারক সংস্থার বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, তা নিয়ে ‘অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট’ জমা দিতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্যও রাজ্যকে নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত।

শুনানিতে যা যা হল...

রাজ্যকে প্রধান বিচারপতি: সংবাদপত্রে দেখলাম, সিআইডি তদন্ত করছে। আপনারা কি তদন্ত শুরু করেছেন? ওই সংস্থার বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ করেছেন?

রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি): ওই সংস্থা তিনটি করে ব্যাচের স্যালাইন প্রস্তুত করে। প্রতি ব্যাচে ১১ হাজার করে মোট ৩৩ হাজার স্যালাইন থাকে। পাঁচটি অভিযোগ এসেছে। এক জনের মৃত্যু হয়েছে।

রাজ্য: ওই সব স্যালাইনের নমুনা সংগ্রহ করে দু’টি পরীক্ষা করা হয়েছে। প্রথমে রাজ্যের ল্যাবে হয়েছে। দ্বিতীয় পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠানো হয়েছে মুম্বইয়ের এনএবিএল ল্যাবে।

প্রধান বিচারপতি: ওই প্রস্তুতকারক সংস্থাকে নোটিস দিয়েছেন?

রাজ্য: প্রথমে তদন্ত করে বিষয়টি দেখা উচিত। সব পদক্ষেপ করা হচ্ছে।

জনস্বার্থ মামলাকারীর আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি: কয়েক বছর আগে উত্তরবঙ্গের এক চিকিৎসক ওই স্যালাইন নিয়ে অভিযোগ করেছিলেন। উল্টে তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হয়। গত বছর মার্চ মাসে ওই সংস্থাকে তিন বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে কর্নাটক সরকার। সেখানে রোগীর মৃত্যু হয়। বিষয়টি সে রাজ্যের সরকার পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে জানায়। কিন্তু এই রাজ্য সরকার কিছু করেনি।

ফিরোজ: গত বছর ১০ ডিসেম্বর ড্রাগ কন্ট্রোলার ওই সংস্থাকে স্যালাইন উৎপাদন বন্ধ করতে বলে। প্রস্তুত বন্ধ রাখা হলেও সরবরাহ কেন বন্ধ করা হল না? কেন সব হাসপাতাল থেকে ওই স্যালাইন তুলে নেওয়া হল না? গিনিপিগের মতো মানুষের শরীরে পরীক্ষা করার জন্য?

ফিরোজ: হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করার পরে রাজ্য সরকার কালো তালিকাভুক্ত করেছে ওই সংস্থাকে। স্বাস্থ্য সচিব কেন পদক্ষেপ করলেন না? কেন সব হাসপাতালকে বলা হল না ওই সংস্থার স্যালাইন দেওয়া বন্ধ করার জন্য?

এজি: এটা কোনও নিষিদ্ধ ওষুধ নয়। প্রচুর জায়গায় দেওয়া হয়। এমনকি আমার উপরেও প্রয়োগ করা হয়েছে। এটা কোনও বাতিল ওষুধ নয়। সব বিষয় বিবেচনা করে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।

অন্য মামলাকারীর আইনজীবী: কয়েক জনের উপর স্যালাইনের প্রভাব পড়ছে, এই ধারণা ভুল। হতে পারে ওই স্যালাইনের প্রভাব ধীরে রোগীর শরীরে প্রতিক্রিয়া শুরু করে। তামিলনাড়ুতেও ওই স্যালাইনের কারণে রোগীর উপর প্রভাব পড়েছে।

প্রধান বিচারপতি: ফুড সেফটি অফিসার একটি হিমঘরে গেলেন। একটি জিনিস পরীক্ষা করে খারাপ পেলে ফ্রিজ় করার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর পক্ষে তো ১০০টি দ্রব্য যাচাই করা সম্ভব নয়। ড্রাগ কন্ট্রোলার ওই সংস্থাকে স্যালাইন প্রস্তুত বন্ধ রাখতে বলেছে মানে নিশ্চয়ই কিছু হয়েছে। কেন রাজ্য পদক্ষেপ করল না? মৃতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে?

রাজ্য: রাতারাতি এত কাজ সম্ভব হয়নি। পদক্ষেপ করা হচ্ছে। ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।

Advertisement
আরও পড়ুন