বনভোজনে কোন কোন পদ? ছবি: সংগৃহীত।
শীতের মরসুম মানেই বাইরে ঘোরা, বনভোজন। বনভোজনে সাধারণত বাইরে গিয়ে অনেকে মিলে রেঁধেই খাওয়া হয়। তবে অনেকই এই মরসুমে বাড়ি থেকে রান্না করে নিয়ে গিয়ে বাইরে কোথাও বসে একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করেন। রোদে পিঠ দিয়ে খোলা আকাশের নীচে মিলেমিশে খাওয়ায় বেশ একটা বনভোজনের আবহ তৈরি হয়।
এমন কোনও পরিকল্পনা করেছেন নাকি? তা হলে মেনু নিয়েও ভাবতে হবে। কী কী রাখতে পারেন সেই তালিকায়?
কড়াইশুঁটির কচুরি
শীতের দিনে বনভোজন বা চড়ুইভাতি মানেই কড়াইশুঁটির কচুরি কিন্তু রাখতেই পারেন। তার সঙ্গে নতুন আলুর গা মাখা দমের যুগলবন্দি অনবদ্য। কড়াইশুঁটির কচুরি বানানো বেশি ঝক্কিরও নয়। প্রথমেই ময়দা ময়ান দিয়ে ভাল করে মেখে রাখুন। পুরের জন্য কাঁচা কড়াইশুঁটি মিক্সিতে ঘুরিয়ে নিন। কড়াইয়ে হিং, জিরে ফোড়ন দিন। এ বার কড়াইশুঁটি বাটা দিয়ে নাড়াচাড়া থাকুন। কাঁচা ভাব চলে গেলে স্বাদ মতো নুন, হলুদগুঁড়ো, লঙ্কার গুঁড়ো, ভাজা জিরেগুঁড়ো, চিনি মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি ঘন এবং শুকনো হয়ে গেলে নামিয়ে নিন। তার পর ময়দার লেচি কেটে তার মধ্যে কড়াইশুঁটির পুর ভরে কচুরির মতো বেলে ছাঁকা তেলে ভাজলেই তৈরি হয়ে যাবে বনভোজনের খাবার।
নতুন আলুর দম
কড়াইশুঁটির কচুরি হোক বা পোলাও— নতুন আলুর গা মাখা দম বনভোজনের মেনুতে অবশ্যই রাখতে পারেন। নতুন আলুর খোসা ছাড়িয়ে নুন দিয়ে সেদ্ধ করে নিন। কড়াইয়ে সর্ষের তেল গরম হতে দিন। তেজপাতা, শুকনো লঙ্কা, গোটা জিরে ফোড়ন দিতে হবে। এ বার পাতলা করে কাটা পেঁয়াজ ভেজে নিন। পেঁয়াজে বাদামি রং ধরলে যোগ করতে হবে আদা, রসুন বাটা, স্বাদ মতো নুন। মশলা কষানো হয়ে গেলে দিতে হবে টম্যাটো বাটা। সমস্ত উপকরণ কষানোর সময় দিয়ে দিন স্বাদ মতো হলুদ, লঙ্কার গুঁড়ো, ধনে, জির গুঁড়ো। মশলা কষার পর তেল ছেড়ে গেলে সেদ্ধ করা আলু দিয়ে মিনিট পাঁচেক কষিয়ে গরম জল ঢেলে ফুটতে দিন। মাখা মাখা হয়ে গেলে ধনেপাতা কুচি ছড়িয়ে নামিয়ে নিন।
সব্জি দিয়ে মশলা পোলাও
শীতের সব্জি দিয়ে মশলাদার পোলাও রাখতে পারেন এমন বনভোজনে। কড়াইয়ে সাদা তেল এবং ঘি দিন পরিমাণ মতো। ফোড়নে দিতে হবে গোটা গোলমরিচ, শুকনো লঙ্কা, তেজপাতা। এ বার পেঁয়াজ কুচি তেলে ছেড়ে দিন। ভাজা হয়ে এলে একে একে দিয়ে দিন ফুলকপি, গাজর, কড়াইশুঁটি থেকে শুরু করে পছন্দের অন্যান্য সব্জি। তবে সেগুলি যেন সরু এবং লম্বা করে কাটা হয়। সব্জি ভাজার সময় দিয়ে দিতে হবে স্বাদ মতো হলুদ, নুন। এ বার যোগ করুন ফেটিয়ে নেওয়া টক দই। সমস্ত উপকরণ মিলেমিশে গেলে দিতে হবে কাশ্মীরি লঙ্কার গুঁড়ো, ধনে, জিরেগুঁড়ো। দিয়ে দিন ঘিয়ে ভাজা কাজুবাদাম। সমস্ত উপকরণ মিলেমিশে গেলে যোগ করুন আগে থেকে ধুয়ে রাখা বাসমতী চাল। যতটা চাল নেওয়া হবে, তার দ্বিগুণ জল লাগবে। তবে ঠান্ডা নয়, গরম জল ব্যবহার করুন। চাপা দিয়ে চাল সেদ্ধ হতে দিন। এই পর্যায়ে একটু খেয়াল রাখতে হবে। চাল সুসিদ্ধ হবে, অথচ পোলাও হতে হবে ঝরা। চাইলে পোলাও রাঁধার সময় স্বাদ মতো চিনিও যোগ করতে পারেন।
দরবারি চিকেন
পোলাওয়ের সঙ্গে মাংস না হলে কিন্তু চলে না। একঘেয়ে কোনও পদ নয়, বরং বানিয়ে নিতে পারেন দরবারি চিকেন। হাড় ছাড়া বা হাড় দেওয়া মুরগির মাংস— পছন্দ মতো যে কোনও একটি ব্যবহার করতে পারেন। এই পদের জন্য প্রয়োজন বিশেষ একটি মশলা। গোটা জিরে, ধনে, শুকনো লঙ্কা, মৌরি, দারচিনি, এলাচ, লবঙ্গ, কাজু এবং কাঠবাদাম শুকনো কড়ায় নাড়াচাড়া করে গুঁড়িয়ে নিন। এবার কড়াইয়ে ঘি দিয়ে তাতে পেঁয়াজ ভেজে বেরেস্তা করে নিন। কয়েক টুকরো টম্যাটো এবং পেঁয়াজ বেরেস্তাটি মিক্সিতে ঘুরিয়ে নিন। এ বার মাংসে মশলা মাখানোর পালা। মাপ মতো আদা, রসুন বাটা, ভাজা পেঁয়াজ বাটা, তৈরি করে রাখা মশলা, জল ঝরানো টক দই, স্বাদমতো নুন, সাদা তেল দিয়ে মাংস মাখিয়ে নিন। অন্তত আধ থেকে এক ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। এর পর কড়াইয়ে তেল এবং ঘি দিয়ে মশলা মাখানো মাংস আঁচ কমিয়ে-বাড়িয়ে কষিয়ে, ঢাকা দিয়ে রেঁধে নিতে হবে। মাংস সেদ্ধ হয়ে গেলে শেষ ধাপে কসৌরি মেথি ছড়িয়ে দিন। স্বাদ বৃদ্ধিতে দিতে পারেন ক্রিমও।
হোয়াইট সস্ পাস্তা
সঙ্গে খুদে থাকলে তার দিকটিও মাথায় রাখতে হবে। চিজ় দেওয়া পাস্তা ছোটরা সাধারণত ভালই বাসে। পাস্তা নুন দিয়ে সেদ্ধ করে জল ঝরিয়ে রাখুন। কড়ায় তেল দিয়ে রসুন কুচি নেড়ে নিন। যোগ করুন পেঁয়াজ, সুইট কর্ন, মুরগির মাংসের হাড় ছাড়া ছোট টুকরো। দিয়ে দিন স্বাদ মতো নুন। সব্জি হালকা ভেজে নিন। অন্য একটা কড়াইয়ে মাপমতো মাখন দিন। মাখন গলে গেলে সামান্য ময়দা দিয়ে নাড়াচাড়া করুন। যোগ করুন জ্বাল দেওয়া ঘন দুধ। আঁচ কমিয়ে নাড়তে থাকলেই তৈরি হবে হোয়াইট সস্। এতে যোগ করুন অরিগ্যানো, গোলমরিচ। এ বার ভেজে রাখা সব্জি সসে্ মিশিয়ে নাড়াচাড়া করে নিন। যোগ করুন পাস্তা। সমস্ত উপকরণ মিনিট ৫-৭ রান্না করে নিন। শেষ ধাপে উপর থেকে চিজ় দিয়ে আঁচ কমিয়ে ঢাকা দিয়ে রাখুন। চিজ় গলে গেলেই প্রস্তুত পাস্তা।