মুখ্যমন্ত্রীর ‘ধমক’-এর পরেই কি এ বছর শ্রীভূমিকে ঘিরে বিশ্রি জট খুলে গেল? গ্রাফিক: সৌভিক দেবনাথ।
শ্রীভূমি স্পোটিং ক্লাবের পুজো উদ্বোধনে গিয়ে রাজ্যের দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুকে রাস্তা বন্ধ না-করার ‘পরামর্শ’ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাতে অবশ্য কিছুটা ‘ধমকের সুর’ও ছিল। চতুর্থী, পঞ্চমী, ষষ্ঠীর পর সপ্তমীর সন্ধ্যা বা রাত বলছে ভিআইপি রোডে ভিড় থাকলেও, যানজট নেই। গতি কিছুটা ধীর হলেও, যান চলাচল অব্যাহত। যা দেখে অনেকেই মনে করছেন, মুখ্যমন্ত্রীর বলার পরেই কি শ্রীভূমিকে ঘিরে ‘বিশ্রি জট’ খুলে গেল ভিআইপি রোডে? এ বছর ভিড় নিয়ন্ত্রণে কি সফল হলেন সুজিত? পুলিশও? ভিআইপি রোডের ছবি বলছে ভিড় হোক বা যান নিয়ন্ত্রণ— সপ্তমীর রাত পর্যন্ত অন্তত সফল সুজিত।
এ বছর শ্রীভূমির থিম রোমের ‘ভ্যাটিকান সিটি’। কলকাতার বুকে রোমের স্মৃতিসৌধ দেখতে মানুষের উৎসাহ তুঙ্গে। উদ্বোধনের পর থেকেই ভিড় শুরু হয় এই মণ্ডপে। রাস্তা যাতে অবরুদ্ধ না হয়, তার জন্য লেকটাউন এলাকায় পঞ্চমী থেকে নেওয়া হয় বিশেষ ব্যবস্থা। মণ্ডপ-দর্শনার্থীদের প্রবেশের জন্য অনেক দূর থেকেই পথ নির্দিষ্ট করে দেয় পুলিশ। যান চলাচলের রাস্তায় ভিড় যাতে উপচে না-পড়ে তার জন্য আলাদা রাস্তা করা হয়। ফলে যে কোনও জায়গা দিয়ে দর্শনার্থীরা মণ্ডপে প্রবেশ করতে পারছেন না। মণ্ডপ সংলগ্ন মূল রাস্তা বরাবর উঁচু টিনের দেওয়াল তুলে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। ফলে পুলিশের নির্দিষ্ট করা পথ এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। পুলিশ সূত্রে খবর, ওই এলাকা সচল রাখতে উল্টোডাঙা থেকে বাগুইআটি পর্যন্ত ট্রাফিক ব্যবস্থার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে গোলাঘাটা থেকে দক্ষিণ দমদম পর্যন্ত মাঝখানের দু’টি যাত্রী প্রতিক্ষালয়। এই পুরো ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে ভিড়ের সঙ্গে যানবাহন চলাচলকে। অর্থাৎ, দর্শনার্থীদের ভিড় এক পাশে, আর অন্য পাশের রাস্তা দিয়ে চলছে যানবাহন।
বিধাননগর পুলিশ জানাচ্ছে, তিন দিন ধরে শ্রীভূমিতে ভিড় অত্যধিক হয়েছে। এ ছাড়া দক্ষিণ দমদমের কয়েকটি পুজোয় ভিড় প্রচুর হচ্ছে। তাই উল্টোডাঙা থেকে বিমানবন্দরের দিকে চাপ কিছুটা বেশি রয়েছে। তবে তা এখনও পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে। আর বিমানবন্দর থেকে ইএম বাইপাসগামী রাস্তায় চাপ কিছুটা কম। কারণ, উল্টোডাঙার দিকে ছাড়া বেশির ভাগ গাড়ি লেকটাউনের কাছে বেইলি ব্রিজ হয়ে সল্টলেকে ঢুকে যাচ্ছে। এ বছরের ব্যবস্থা দেখে খুশি দর্শনার্থীরাও। পুজো দেখতে আসা কিশোর চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘অন্য বছরের তুলনায় এ বছর ভিড় নিয়ন্ত্রণে খুবই ভাল ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অনেক কম সময়ে মণ্ডপ পরিদর্শন করা যাচ্ছে।’’ অনির্বাণ রায়ও শ্রীভূমির পুজো দেখতে এসেছিলেন। বললেন, ‘‘মণ্ডপ দর্শনে ব্যবস্থা ভাল নেওয়া হয়েছে ঠিকই, তবে বাস ধরতে অনেকটা দূরে হেঁটে যেতে হচ্ছে। অন্য বছর এই পরিশ্রমটা হয়নি।’’ নিজস্ব গাড়ি করে যাওয়ার পথে কেষ্টপুরের কাছে এসে সুবর্ণ দাশ বললেন ‘‘পুজোয় ছেলে বাড়ি ফিরছে। ওকে আনতে বিমানবন্দরে যাচ্ছি। ভয় পাচ্ছিলাম শ্রীভূমির কাছে আটকে পড়ব কি না। কিন্তু এসে দেখি যানজট একেবারেই নেই। গত বছরের অভিজ্ঞতা খুবই খারাপ ছিল।’’
প্রতি বারই সুজিতের শ্রীভূমির মণ্ডপ থেকে প্রতিমা— দুইয়েই চমক থাকে। সেই টানে কাতারে কাতারে মানুষ এখানে ভিড় করেন। অনেক সময় ভিড়ের চাপে স্তব্ধ হয়ে যায় বিমানবন্দরগামী ব্যস্ত ভিআইপি রোড। এ নিয়ে অনেকের অভিযোগও রয়েছে। প্রবল ভিড়ের কারণে ভিড় গত বছর পুজোর শেষ ক’দিন মণ্ডপ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই বছর মন্ত্রী সুজিতের পুজোর উদ্বোধনে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীও ভিড় এবং যানজট নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘‘বিমান ধরতে লোকে রাস্তায় বেরোতে পারল না এমন যেন না হয়। সাধারণ মানুষ যাতে সব ক’টি পুজো দেখতে পান সেই ব্যবস্থা করতে হবে। ও যদি রাস্তা বন্ধ করে, পুলিশ আমাকে জানাবে।’’ জানা গিয়েছে, মমতার ‘ধমক’-এর পরে আরও বাড়তি ব্যবস্থা নেন শ্রীভূমি কর্তৃপক্ষ। অবাধ যান চলাচলের উপর জোর দেয় পুলিশও।