জীবনের পডকাস্ট সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
কার মধ্যে তিনি ভবিষ্যতের সম্ভাবনা দেখেন? আগামী ২০-৩০ বছর পর কারা রাজনীতির মুখ হয়ে উঠতে পারেন? একটি সাক্ষাৎকারে এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি জানিয়েছেন, রাজনীতিতে দলগঠনই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীনই সেই কাজে মনোনিবেশ করেছিলেন তিনি। এখনও সেই কাজ করে যাচ্ছেন।
তবে ভবিষ্যতের সম্ভাবনাময় মুখ হিসাবে কারও নাম করতে চাননি মোদী। তিনি বলেন, ‘‘অনেকের মধ্যেই সম্ভাবনা রয়েছে। আমি কী ভাবে আমার দলকে তৈরি করছি, তার উপরেই আমার সাফল্য নির্ভর করে। সকলে একটি লক্ষ্য ধরে এগিয়ে চলেন। পরিশ্রম করেন। আমি আলাদা করে কারও নাম নেব না। তা হলে অন্যদের প্রতি অবিচার করা হবে। আমার সামনে অনেক সম্ভাবনাময় মুখ রয়েছে। আমি সকলের কথাই জানি। কিন্তু কারও সঙ্গে যাতে অবিচার না হয়, সেটা দেখার দায়িত্বও আমার।’’
সাফল্যের চাবিকাঠি
রাজনীতিতে সাফল্যের চাবিকাঠি কী? সাক্ষাৎকারে মোদী বলেছেন, ‘‘রাজনীতিবিদ হওয়া এক জিনিস, কিন্তু রাজনীতিতে সফল হওয়া আর এক। তার জন্য সমর্পণ, একাগ্রতা, মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মানসিকতা দরকার। দলের সঙ্গে মানিয়ে চলার মতো খেলোয়াড় হতে হবে। যদি আপনি নিজেকে সবার চেয়ে বড় বলে মনে করেন, ভাবেন বাকিরা আপনাকেই অনুসরণ করবেন, তা হলে আপনি হয়তো ভোটে জিততে পারবেন। কিন্তু রাজনীতিতে আপনার সাফল্যের কোনও নিশ্চয়তা নেই।’’
উচ্চাকাঙ্ক্ষা নয়, লক্ষ্য
এ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়েই মোদী বলেন, ‘‘আমাদের সব নেতাকে দেখুন, সকলে আলাদা আলাদা আন্দোলন থেকে উঠে এসেছেন। তাঁদের ভাবনার পদ্ধতি, অভিজ্ঞতা সব আলাদা আলাদা। তাঁদের কথা এবং ব্যবহার থেকেই বোঝা যায়, সমাজের প্রতি তাঁরা কতটা দায়বদ্ধ। তাই আমি মনে করি, ভাল মানুষদের আরও বেশি করে রাজনীতিতে আসা দরকার। তবে কোনও উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে নয়, লক্ষ্য নিয়ে।’’
গোধরা পর্ব
গুজরাতে রাজনীতি এবং গোধরাকাণ্ডের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মোদী বলেন, ‘‘২০০২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি আমি প্রথম বার বিধায়ক হয়েছিলাম। গোধরায় যখন ওই ঘটনা ঘটেছিল, বিধায়ক হিসাবে আমার বয়স মাত্র তিন দিন। প্রথমে আমরা ট্রেনে আগুনের খবর পাই। তার পর একে একে মৃত্যুর খবর আসতে থাকে। আমি বাড়িতেই ছিলাম। খুব চিন্তা হচ্ছিল। গোধরা যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু হেলিকপ্টার একটাই ছিল। সিঙ্গল ইঞ্জিন কপ্টার হওয়ায় আমাকে তাতে উঠতে দেওয়া হচ্ছিল না। আমি ওদের সঙ্গে ঝগড়া করে ঝুঁকি নিয়ে গোধরা গেলাম। এত মৃতদেহ, এত বেদনার সব দৃশ্য— আমার নানা রকম অনুভূতি হচ্ছিল। কিন্তু নিজেকে বোঝাচ্ছিলাম, আমি এমন একটা জায়গায় আছি যেখানে আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। স্বাভাবিক প্রবণতাকে দমন করতে হবে।’’
গান্ধী এবং সাভারকর
মহাত্মা গান্ধী এবং বিনায়ক দামোদর সাভারকরের পথ আলাদা ছিল, কিন্তু তাঁদের লক্ষ্য, আদর্শ ছিল একটাই। মোদী বলেন, ‘‘আদর্শের চেয়ে আদর্শবাদ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আদর্শ ছাড়া রাজনীতি হয় না। কিন্তু আদর্শবাদও জরুরি। স্বাধীনতার আগে সকলের আদর্শ ছিল দেশকে স্বাধীন করে তোলা। গান্ধী এবং সাভারকরের পথ আলাদা ছিল, কিন্তু তাঁদের আদর্শ ছিল এক।’’ নিজের আদর্শ প্রসঙ্গে মোদী বলেন, ‘‘আমি সবসময় দেশকে প্রথমে রাখি। সুবিধা অনুযায়ী নিজের অবস্থান বদল করব, তেমন মানুষ নই। আমার আদর্শ ‘নেশন ফার্স্ট’ (আগে আমার দেশ)। এই আদর্শই আমাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। আমার জীবন আমি তৈরি করিনি। পরিস্থিতি আমাকে তৈরি করেছে। ছোটবেলায় আমি যে জীবন কাটিয়েছি, তা থেকে অনেক শিক্ষা পেয়েছি।’’
ভারত নিরপেক্ষ নয়
ভারত নিরপেক্ষ নয়। বিশ্বের সকল রাষ্ট্র ভারতকে ভরসা করে। বিদেশনীতি প্রসঙ্গে মোদী বলেন, ‘‘সারা বিশ্ব ভারতকে ভরসা করে। কারণ, আমাদের মধ্যে নকল কিছু নেই। আমরা যা বলি, স্পষ্ট করেই বলি। অনেক কঠিন পরিস্থিতিতেও আমরা বার বার বলেছি, আমরা নিরপেক্ষ নই। আমরা শান্তির পক্ষে। তার জন্য যা প্রয়োজন, আমি করব। আমি এটা রাশিয়া, ইউক্রেন, ইরান, প্যালেস্টাইন, ইজ়রায়েল সকলকে বলেছি। তারা আমাকে বিশ্বাস করে।’’