শনিবার শিয়ালদহ আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন সঞ্জয় রায়। ছবি: সংগৃহীত।
নির্যাতিতার জন্য বিচার চেয়ে প্রতিবাদ-আন্দোলন চলাকালীন ‘সাবধানি’ ভূমিকা নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার শিয়ালদহ আদালতের রায় ঘোষিত হওয়ার পরেও তেমনই ‘সাবধানি’ প্রতিক্রিয়া তাঁর দলের। বিরোধী শিবিরে অবশ্য দু’রকম বয়ান। বিজেপি-কংগ্রেস প্রায় এক সুরে বলেছে, ‘তথ্যপ্রমাণ লোপাট’ না হলে সঞ্জয় রায় ছাড়াও আরও অনেককে কাঠগড়ায় দেখা যেত। সিপিএমের প্রতিক্রিয়া সবচেয়ে আলাদা। বাবরি মামলার রায়ের উদাহরণ টেনে রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ‘‘রায় হয়েছে, বিচার হয়নি।’’
আরজি কর-কাণ্ডে এই প্রথম কেউ ‘দোষী’ সাব্যস্ত হলেন। শিয়ালদহ আদালত সোমবার তাঁর শাস্তি ঘোষণা করবে। কিন্তু সিবিআইয়ের পেশ করা তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে সঞ্জয় যে ধর্ষণ-খুনে দোষী প্রমাণিত, সে কথা শনিবারই বিচারক জানিয়ে দিয়েছেন। আদালত এ কথাও শনিবার জানিয়ে দিয়েছে যে, ওই অপরাধে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড, সর্বনিম্ন যাবজ্জীবন কারাবাস।
রায়ের পরে তৃণমূলের তরফে রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেছেন, ‘‘শনিবার রায় ঘোষণা হয়েছে। সোমবার সাজা ঘোষণা হবে। তাই এখনই উপসংহারমূলক কোনও মন্তব্য করছি না। তবে ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কলকাতা পুলিশ যাকে গ্রেফতার করেছিল, সেই সঞ্জয় রায়কেই দোষী সাব্যস্ত করেছে আদালত। সিবিআইয়ের তদন্ত এটা দেখাল যে, কলকাতা পুলিশ ঠিক দিকেই অগ্রসর হচ্ছিল।’’ সম্ভাব্য শাস্তি প্রসঙ্গে কুণাল বলেন, ‘‘এটা বিচারব্যবস্থার বিষয়। এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না। তবে এটুকু বলতে পারি, ধর্ষক এবং খুনির ফাঁসির দাবিতে মুখ্যমন্ত্রীই প্রথম রাস্তায় নেমেছিলেন।’’
রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, ‘‘আমরা চাইব সর্বোচ্চ সাজা হোক।’’ কিন্তু শুধু সঞ্জয়ের নয়, আরও অনেকেরই সাজা হওয়ার কথা ছিল বলে ইঙ্গিত সুকান্তের। তাঁর কথায়, ‘‘যে পাঁচ দিন কলকাতা পুলিশের হাতে তদন্তের ভার ছিল, সেই পাঁচ দিনে কী কী তথ্যপ্রমাণ কোথায় গিয়েছে, তা নিয়ে আমাদের যথেষ্ট সন্দেহ আছে। যদি সঠিক তথ্যপ্রমাণ থাকত, তা হলে আরও কী কী হত, তা এখন আর বোঝার উপায় নেই।’’ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও রায়ের প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। দলের আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘‘আরজি কর-কাণ্ডে সঞ্জয় রায়ের দোষী সাব্যস্ত হওয়া ন্যায়ের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ।’’ পাশাপাশিই তিনি লিখেছেন, ‘‘কলকাতা পুলিশ বা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, যাঁরা প্রমাণ লোপাটে এবং অপরাধ চাপা দেওয়ার চেষ্টায় যুক্ত ছিলেন, এই সাজা ঘোষণা তাঁদের দোষস্খালন করছে না।’’
কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়া অনেকটাই বিজেপির কাছাকাছি। প্রদেশ কংগ্রেসের অন্যতম মুখপাত্র সুমন রায়চৌধুরীর কথায়, ‘‘আদালতের প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা রেখেও বলছি, এই ক্ষেত্রে আগে প্রহসন ঘটেছে। তার পর বিচারপ্রক্রিয়া চলেছে। তথ্যপ্রমাণ লোপাট করে প্রশাসন অপরাধীদের নিরাপত্তা দিয়েছে।’’ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সেলিমের বক্তব্যে ঝাঁজ আরও বেশি। তিনি বলেছেন, ‘‘বাবরি মামলার পরে যা বলেছিলাম, এ ক্ষেত্রেও তাই বলছি। রায় হয়েছে। বিচার হয়নি। প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ষণ এবং খুনকে আড়াল করা হয়েছে তদন্তে। প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তর থেকে এই সংগঠিত অপরাধ ঘটানো এবং আড়াল দুটি কাজই করা হয়েছে। এটা আদালতের রায় হয়েছে। নির্যাতিতার প্রতি প্রকৃত ন্যায়বিচার হয়নি।’’
(ধর্ষণ বা শ্লীলতাহানির ঘটনায় যত ক্ষণ না অভিযুক্তকে ‘দোষী’ সাব্যস্ত করা হচ্ছে, তত ক্ষণ তাঁর নাম, পরিচয় প্রকাশে আইনি বাধা থাকে। আনন্দবাজার অনলাইন সেই নিয়ম মেনেই আরজি কর পর্বের প্রথম দিন থেকে অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের নাম বা ছবি প্রকাশ করেনি। শনিবার আদালত তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করায় আমরা তাঁর নাম এবং ছবি প্রকাশ করা শুরু করছি।)