RG Kar Case Verdict

১৬০ পাতার রায়ে সঞ্জয়কে দোষী সাব্যস্ত, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সমালোচনা-সহ কোর্টের পর্যবেক্ষণ আর কী

সিবিআইয়ের দেওয়া চার্জশিটে ধর্ষণ এবং খুনের মামলায় একমাত্র অভিযুক্ত হিসাবে সঞ্জয় রায়ের নামই উল্লেখ ছিল। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪, ৬৬, ১০৩ (১) ধারায় তাঁকে অভিযুক্ত করেছিল সিবিআই।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১৮:৪৩
What observations did the judge make in his judgment in RG Kar Case

প্রিজ়ন ভ্যানে সঞ্জয় রায়। —ফাইল চিত্র।

আরজি করের মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের মামলায় রায়ে মূল অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করা ছাড়াও আরও কয়েকটি বিষয়ে তাঁর পর্যবেক্ষণ জানিয়েছেন শিয়ালদহ আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস। তার মধ্যে রয়েছে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সমালোচনাও।

Advertisement

সিবিআইয়ের চার্জশিটের উপর ভিত্তি করে চার্জগঠন এবং বিচারপ্রক্রিয়া শেষে মোট ১৬০ পাতার রায় ঘোষণা করলেন বিচারক। তাতে কয়েকটি বিষয়ের উপর জোর দেন তিনি। সিবিআইয়ের চার্জশিটে ধর্ষণ-খুনের মামলায় একমাত্র অভিযুক্ত হিসাবে সঞ্জয়ের নামই ছিল। বিচারক তাঁর রায়ে অভিযুক্তের পরিচয়ের উপরেও জোর দিয়েছেন। কে তিনি, কোথায় কাজ করতেন ইত্যাদি বিষয় বিচারক দাস তাঁর রায়ে উল্লেখ করেছেন।

সোমবার দোষী সঞ্জয়ের সাজা ঘোষণার পরই ১৬০ পাতার রায়ের প্রতিলিপি আদালতের ওয়েবসাইটে ‌‘আপলোড’ করা হবে বলে জানা গিয়েছে।

শুধু অভিযুক্ত নন, নির্যাতিতার বিষয়ও বিচারক তাঁর রায়ে রেখেছেন। পাশাপাশি কোথায় ঘটনা ঘটেছে, ঘটনার দিন নির্যাতিতার কাজের সময় (ডিউটি আওয়ার) কী ছিল, তিনি কত ক্ষণ হাসপাতালে ছিলেন, শেষ কখন তাঁকে জীবিত দেখা গিয়েছিল, সেই বিষয়গুলিও রায়দানের সময় বিচারকের পর্যবেক্ষণে এসেছে।

নির্যাতিতাকে কোথায় এবং কখন মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়, রায়ে তা-ও জানিয়েছেন বিচারক দাস। নির্যাতিতার মৃত্যুর কারণ, মৃত্যুর সময়ও রায়ে উল্লেখ করেছেন বিচারক। সিবিআই চার্জশিটে দাবি করেছিল, নির্যাতিতাকে প্রথমে ধর্ষণ করা হয়। তার পরে খুন। চিকিৎসকের উপর যৌন নির্যাতন হয়েছিল কি না, বিচারকের পর্যবেক্ষণে আছে সেই প্রশ্নের জবাবও। সিবিআই চার্জশিট দেওয়ার পর থেকেই নির্যাতিতার বাবা-মা, জুনিয়র ডাক্তার এবং সমাজের একাংশের প্রশ্ন ছিল, ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় শুধু কি একা সঞ্জয় জড়িত? না কি আরও কেউ ছিলেন? বিচারপ্রক্রিয়া চলাকালীন সিবিআই আদালতে জানায়, সেই বিষয়টি তারা আরও খতিয়ে দেখছে। শনিবারের রায়ে সেই বিষয়টিও গুরুত্ব পেয়েছে। খুনি একা ছিলেন? না আরও কেউ ছিলেন? বিচারক তাঁর পর্যবেক্ষণে সেই বিষয়ে জোর দিয়েছেন।

গত ৯ অগস্ট আরজি করের সেমিনার হল থেকে মহিলা চিকিৎসক-পড়ুয়ার দেহ উদ্ধারের পরদিনই সঞ্জয়কে গ্রেফতার করেছিল কলকাতা পুলিশ। তার পরে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে সিবিআই ওই মামলার তদন্তভার নেয়। তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় ধৃত সঞ্জয়কে। তদন্তের পরে সিবিআই যে চার্জশিট আদালতে জমা দিয়েছে, তাতে সঞ্জয়কেই ‘একমাত্র অভিযুক্ত’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল। অপরাধ সংঘঠিত হওয়ার পর অভিযুক্তের মোবাইল টাওয়ারের লোকেশন কোথায় কোথায় ছিল, তা-ও বিচারক তাঁর রায়ে উল্লখ করেছেন।

ঘটনার পর থেকেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। পুলিশ কেন দেরিতে এফআইআর করেছিল, সেই প্রশ্নের পাশাপাশি ঘটনার পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ‘তৎপরতা’ নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। কর্তব্যে গাফিলতি, তথ্যপ্রমাণ লোপাটের চেষ্টার মতো অভিযোগও আসে। পুলিশ এবং হাসপাতালের ভূমিকাও ছিল বিচারকের আতশকাচের নীচে। হাসপাতালের তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ, সুপার সঞ্জয় বশিষ্ট, বিভাগীয় প্রধানদের ভূমিকা নিয়েও বিচারকের পর্যবেক্ষণ রয়েছে। রায়দানের সময়ে বিচারক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সমালোচনাও করেন।

সিবিআইয়ের চার্জশিটে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪, ৬৬, ১০৩(১) ধারায় সঞ্জয়কে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। সেই ভিত্তিতে বিচারপ্রক্রিয়া শেষে শনিবার সঞ্জয়কে দোষী সাব্যস্ত করেন বিচারক। রায়দানের সময় বিচারক জানিয়েছেন, ধর্ষণের ঘটনায় সর্বোচ্চ ১০ বছর বা তার বেশি কারাদণ্ড হতে পারে। খুনের ঘটনায় ২৫ বছর থেকে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। যে ভাবে সঞ্জয় গলা টিপে ওই চিকিৎসককে হত্যা করেছেন, তাতে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হতে পারে তাঁর। কিন্তু কী সাজা হবে তা সোমবারই জানাবেন বিচারক। আদালতকক্ষে শনিবার আবার নিজেকে ‘নির্দোষ’ বলে দাবি করেন সঞ্জয়। রায় ঘোষণার পরে তিনি বিচারককে কিছু বলতে চাইলে বিচারক জানান, সোমবার সাজা ঘোষণার আগে তাঁর বক্তব্য শুনবেন তিনি।

(ধর্ষণ বা শ্লীলতাহানির ঘটনায় যত ক্ষণ না অভিযুক্তকে ‘দোষী’ সাব্যস্ত করা হচ্ছে, তত ক্ষণ তাঁর নাম, পরিচয় প্রকাশে আইনি বাধা থাকে। আনন্দবাজার অনলাইন সেই নিয়ম মেনেই আরজি কর পর্বের প্রথম দিন থেকে অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের নাম বা ছবি প্রকাশ করেনি। শনিবার আদালত তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করায় আমরা তাঁর নাম এবং ছবি প্রকাশ করা শুরু করছি।)

Advertisement
আরও পড়ুন