West Bengal Panchayat Election 2023

না থেকেও বীরভূমে আছেন অনুব্রত, হাজারেরও বেশি আসনে পঞ্চায়েতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী তৃণমূল

রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর্ব ঘিরে অশান্তি দেখা গিয়েছে। কোথাও ঘটেছে মৃত্যুও। কিন্তু হিংসার ছাপ তুলনামূলক ভাবে অনেক কম তৃণমূলের বীরভূম দুর্গে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
বোলপুর শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০২৩ ১৫:৫৭
TMC wins huge seats in three tiers of panchayat in Birbhum without the presence of Anubrata Mondal

অনুব্রত মণ্ডল। — ফাইল চিত্র।

গরু পাচার মামলায় তিহাড় জেলে বন্দি বীরভূমের তৃণমূল জেলার সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। নিজে এলাকায় না থাকলেও, তাঁর বীরভূমে রাজনৈতিক ভাবে প্রায় ‘অটুট’ রয়েছে তৃণমূলের প্রভাব। পঞ্চায়েতে মনোনয়ন পর্ব মিটে যাওয়ার পর দেখা গিয়েছে, অনুব্রতের জেলায় ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে হাজারেরও বেশি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেছে তৃণমূল। তবে গত বার অনুব্রতের এলাকায় থাকাকালীন বীরভূমে তৃণমূলের যে জয়ের ধারা দেখা গিয়েছিল তার কিছুটা আগেই থেমেছে এ বারের আসনসংখ্যা।

গত বার, অর্থাৎ ২০১৮ সালে বীরভূম জেলা পরিষদে আসন ছিল ৪২টি। সব ক’টি আসনেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিল তৃণমূল। ওই বছরই পঞ্চায়েত সমিতিতে প্রায় সব আসনই দখল করে শাসকদল। বিরোধীদের মতে, গত বারের নির্বাচনে বীরভূমে প্রায় ৯৩ শতাংশ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিল তৃণমূল। তা নিয়ে প্রশ্নও তুলেছিল বিরোধীরা। এ বার পঞ্চায়েত নির্বাচনের অনেকটা আগে থেকেই সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দলীয় নেতা-কর্মীদের বার্তা দিয়েছিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে তার পরেও রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর্ব ঘিরে অশান্তি দেখা গিয়েছে। কোথাও ঘটেছে মৃত্যুও। কিন্তু হিংসার ছাপ তুলনামূলক ভাবে অনেক কম তৃণমূলের বীরভূম দুর্গে। তবে সেখানেও মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে। এই আবহেই ভিন্ন ভূমিকায় দেখা গিয়েছে লাভপুরের বিধায়ক অভিজিৎ সিংহকে। মনোনয়নপত্র পেশে ‘বিরোধীদের ভরসা জোগাতে’ গাড়িতে চড়ে গ্রামে ঘুরে ঘুরে মাইকে এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার বার্তা দেন তিনি।

Advertisement

সেই মনোনয়নপর্ব মেটার পর ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের আসন তালিকা প্রকাশ্যে আসতেই দেখা গেল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ে রাজ্যে এগিয়ে রয়েছে অনুব্রতর বীরভূম। কমিশনের পরিসংখ্যান বলছে—

TMC wins huge seats in three tiers of panchayat in Birbhum without the presence of Anubrata Mondal

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

অনুব্রত গ্রেফতার হতেই বীরভূমে বিরোধী শিবিরের তৎপরতা বাড়তে শুরু করেছিল। ঘন ঘন বীরভূম সফর শুরু করেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বীরভূমে দলীয় সংগঠনকে চাঙ্গা করতে নেমে পড়েন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও। এমনকি, গত এপ্রিলে বীরভূম সফর করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সিউড়িতে সভাও করেন তিনি। তার পরেও পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে অনুব্রতের জেলায় তৃণমূলের জয়ের ধারা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। এ নিয়ে সন্ত্রাসের তত্ত্বকেই তুলে ধরছে বিজেপি। বিজেপির বীরভূম জেলার সভাপতি ধ্রুব সাহা বলেন, ‘‘তৃণমূল মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে বাধ্য করেছে বিরোধী প্রার্থীদের। যে কয়েকটি আসনে নির্বাচন হচ্ছে সেই সব জায়গার প্রার্থীদের আমরা কোনও ভাবে দলীয় কার্যালয়ে নিয়ে এসে রেখে রক্ষা করছি। ২০১৮ নির্বাচনের পর লোকসভা ভোটে তৃণমূল এই জোরজুলুম করার ফল পেয়েছিল। এ বারও সাধারণ মানুষ এর জবাব দেবে।’’

পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার আগে বীরভূমের বিভিন্ন এলাকায় শাসক দল ছেড়ে বাম বা কংগ্রেস শিবিরে যোগদানের ঢল নেমেছিল বলে দাবি করেছিলেন ওই শিবিরের নেতারা। পঞ্চায়েত নির্বাচন হওয়ার আগেই তৃণমূলের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় নিয়ে তাঁদেরও ব্যাখ্যা বিজেপির মতোই। সিপিএমের বীরভূম জেলার সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলেন, ‘‘শাসক দলের অত্যাচারের চোটে বিরোধী প্রার্থীরা মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছেন। আমরা চেষ্টা করেছিলাম সমস্ত আসনেই প্রার্থী দেওয়ার। কিন্তু মনোনয়ন পর্ব শেষ হওয়ার পরেও শাসকদল সন্ত্রাস চালিয়েছে। তারই ফল এই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়। তবে আমরা বা আমাদের কর্মীরা পিছিয়ে আসছি না। আমরা মাঠে থেকে লড়াই করব।’’

অনুব্রতর গ্রেফতারের পর বীরভূমের দায়িত্ব নিজে নিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী। বীরভূমের জন্য তৈরি করেছিলেন তৃণমূলের কোর কমিটি। সেই কমিটিতে ঠাঁই দিয়েছিলেন নানুরের তৃণমূল নেতা কাজল শেখকেও। এলাকায় অনুব্রতর বিরোধী গোষ্ঠী হিসাবেই পরিচিত কাজল। যদিও কাজলের বক্তব্য, অনুব্রতই তাঁর ‘রাজনৈতিক গুরু’। এই আবহে বীরভূমের ফলে উল্লসিত তৃণমূল শিবির। বিরোধীদের অভিযোগ শুনে তৃণমূলের বীরভূম জেলা কোর কমিটির আহ্বায়ক বিকাশ রায়চৌধুরীর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘বিরোধীরা যদি প্রার্থী দিতে না পারে সে ক্ষেত্রে শাসক দলের কী করার আছে?’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘সকলেই দেখেছেন শাসক দলের নেতারা বিরোধীদের মনোনয়ন দিতে সাহায্য করেছেন। তার পরেও তারা শাসক দলের উপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছেন। সাধারণ মানুষ সব বোঝেন। তাঁরা এ সবের উত্তর দিয়ে দেবেন।’’ বীরভূমে পঞ্চায়েতের বাকি আসনগুলিতেও তৃণমূলের এই জয়ের ধারা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন বিকাশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement