— ফাইল চিত্র।
রাজ্যে মিড ডে মিলে অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের ‘সিবিআই তদন্তের সুপারিশ’ ঘিরে শুরু হল রাজনৈতিক চাপানউতর। কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকার শনিবার দাবি করলেন, বাধ্য হয়েই শিক্ষা মন্ত্রককে পদক্ষেপ করতে হয়েছে। অন্য দিকে, শুক্রবার রাতে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সিবিআই তদন্তের সুপারিশ সংক্রান্ত মন্তব্যকে খোঁচা দিয়ে রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু পোস্ট করেছেন এক্স হ্যান্ডলে।
শুক্রবার কৃষ্ণনগরে বিজেপির সভা শেষে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, ‘‘মিড ডে মিলে সিবিআই তদন্ত হচ্ছে।’’ যদিও কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে তখনও পর্যন্ত এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনও ঘোষণা হয়নি। শুভেন্দুর দাবি শনিবার কার্যত মেনে নিলেন সুভাষ। তিনি বলেন, ‘‘মিড ডে মিল নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে প্রচুর অনিয়ম দেখা গিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের পরিদর্শক দল কয়েক বার এসেছে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনিয়ম ধরা পড়েছে।’’ এর পরেই তাঁর ঘোষণা, ‘‘শিক্ষা মন্ত্রক বাধ্য হয়েছে এ বিষয়ে সিবিআই তদন্তের সুপারিশ করে চিঠি লিখতে।’’
ব্রাত্য তাঁর পোস্টে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ‘মিড ডে মিল’ শব্দবন্ধ ব্যবহার না করে কেন্দ্রের দেওয়া পরিবর্তিত নাম ‘পিএম পোষণ স্কিম’ লিখেছেন। ‘লজ্জাজনক’ শিরোনামের ওই এক্স হ্যান্ডল পোস্টে তাঁর অভিযোগ, ‘‘আশা করি কেউ ভুলে যাবেন না অস্বাভাবিক দ্রুততায় যৌথ সমীক্ষক দলের (জেআরএম) রিপোর্ট পেশ হয়েছিল। রাজ্যের এক মাত্র প্রতিনিধি তাতে সইও করেননি।’’ কিসের ভিত্তিতে মিড ডে মিলে রাজ্য সরকারের ১০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি তোলা হচ্ছে সে প্রশ্নও তুলেছেন ব্রাত্য। লিখেছেন, ‘‘কার্যক্ষেত্রে রাজ্য সরকার ১৮ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা বাঁচিয়েছে।’’ সেই সঙ্গেই শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণা, ‘‘তবে আমরা যে কোনও তদন্তকেই স্বাগত জানাই।’’
প্রসঙ্গত, গত এপ্রিলে একটি রিপোর্ট পেশ করেছিল মিড-ডে মিল নিয়ে তদন্তের জন্য রাজ্য ঘুরে যাওয়া কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের দল। ওই রিপোর্টে দাবি করা হয়, রাজ্য সরকার ১৬ কোটি মিড-ডে মিলের ভুয়ো হিসাব পেশ করেছে। এর ফলে, ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে ১০০ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ের হিসাবে রাজ্য হিসাব চাইলে ১৬ কোটি অতিরিক্ত মিড-ডে মিল দেখিয়েছে। শুধু তাই নয়, নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে ৭০ শতাংশ কম খাবার পড়ুয়াদের সরবরাহ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ।
প্রসঙ্গত, এই রাজ্যে মিড-ডে মিল প্রকল্পেও দুর্নীতি হচ্ছে বলে আগে থেকেই সরব হয়েছিল রাজ্য বিজেপি। বগটুইকাণ্ড-সহ বিভিন্ন ঘটনায় ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের পরিবর্তে মিড-ডে মিলের টাকা খরচ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ ওঠে। প্রধানমন্ত্রী পোষণ প্রকল্পের দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের তরফে একটি প্যানেল তৈরি করা হয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখে শিক্ষা মন্ত্রকের জয়েন্ট রিভিউ প্যানেল একটি রিপোর্ট তৈরি করে। এপ্রিলে সেই রিপোর্ট জমা পড়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। তাতেই এমন চাঞ্চল্যকর দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়। বলা হয়, ২০২২ সালের প্রথম দুই অর্থবর্ষে রাজ্যের তরফে ১৪০ কোটি ২৫ লক্ষ মিড-ডে মিলের রিপোর্ট পেশ করা হয়। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনের রিপোর্টে ১২৪ কোটি ২২ লক্ষ মিড-ডে মিলের উল্লেখ রয়েছে। এই ফারাকের মধ্যেই দুর্নীতি রয়েছে বলে দাবি ওই রিপোর্টে।