(বাঁ দিকে) নওশাদ সিদ্দিকি। শওকত মোল্লা (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।
গত দুই বছরে তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে নানা খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সম্প্রতি পঞ্চায়েত ভোট ঘিরে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের (আইএসএফ) সঙ্গে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনার পর পরস্পরকে আক্রমণ করেছিলেন তাঁরা। ক্যানিং পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক শওকত মোল্লা বলেছিলেন, ‘‘নওশাদ আসলে সমাজবিরোধী। ভাঙড়ে যবে থেকে এসেছে অশান্তি করে যাচ্ছে।’’ আর পাল্টা ফুরফুরা শরিফের এই পিরজাদা বলেছিলেন, ‘‘গুন্ডাবাহিনী নিয়ে ক্যানিং থেকে ভাঙড়ে এসেছেন শওকত মোল্লা।’’
কিন্তু সোমবার বিধানসভায় নওশাদ-শওকতকে দেখা গেল পরস্পরের পাশাপাশি, মুখে শান্তির বাণী নিয়ে। আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ বিধানসভায় এসেছিলেন কমিটির বৈঠকে যোগদান করতে। বৈঠকে যোগদানের আগে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলছিলেন তিনি। সেই সময় বিধানসভায় আসেন শওকতও, বৈঠক থাকায় গাড়ি বারান্দায় নেমেই চলে যাচ্ছিলেন বৈঠক করতে। কিন্তু বিধানসভার মূল দরজায় তখন দাঁড়িয়ে নওশাদ। সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরাই শওকতকে অনুরোধ করেন নওশাদের পাশে দাঁড়াতে। এরপর পাশাপাশি দাঁড়িয়েই একে অপরকে দাদা ও ভাই সম্বোধন করেন তাঁরা।
বয়সে নবীন নওশাদ ক্যানিং পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক শওকতকে দাদা বলেই ডাকেন। সোমবারও তাঁর ব্যতিক্রম হয়নি। আর পাশে দাঁড়িয়ে শওকতও তখন বিরোধী নওশাদকে ভাই বলে ডাকলেন। দু’জনের গলাতেই তখন শান্তিস্থাপনে দৃঢ় সঙ্কল্প। নওশাদ বললেন, ‘‘শওকতদা আমার দাদার মতো, তাঁকে পাশে নিয়েই আমি শান্তি ফেরাতে চাই।’’ উল্লেখ্য, গত সপ্তাহেই ভাঙড়ে শান্তি ফেরানোর লক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে নবান্ন পৌঁছে গিয়েছিলেন আইএসএফ বিধায়ক। কিন্তু দেখা হয়নি।
অপরদিকে, নওশাদকে পাশে নিয়ে তৃণমূল নেতা শওকত বলেন, ‘‘আমরা সবসময় শান্তির পক্ষে। শান্তিস্থাপনের পক্ষেই আমরা কাজ করে যাব। ওরা (নওশাদ) যদি ভাঙড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চায় তা হলে আমরা সবসময় রাজি।’’ বাংলার রাজনীতি কারবারিদের একাংশের মতে, বিধানসভায় মুখোমুখি হয়ে যাওয়াতেই দুই নেতা সৌজন্যবশত এমন কথা বলেছেন। কিন্তু ভাঙড়ের রাজনীতি সম্পর্কে যাঁরা ওয়াকিবহাল, তাঁরা জানেন মুখের কথা শান্তি ফিরবে না। তাই বিধানসভায় শাসক-বিরোধী সৌজন্য দেখা গেলেও, বাস্তবের মাটিতে তার কতটা প্রতিফলন দেখা দেবে তা নিয়ে সন্দিহান রাজনীতির কারবারিদের একাংশ। কারণ, এই শওকতকেই ফুরফুরা শরিফে গিয়ে ‘চোর চোর’ ধ্বনি শুনে ফিরে আসতে হয়েছিল। সেই সময় কিন্তু নওশাদ সৌজন্য দেখিয়ে তাঁর ‘দাদা’ শওকতের পাশে দাঁড়াননি।