লোকসভায় বিরোধী দলের নেতা ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। —ফাইল চিত্র।
পটনায় বিরোধী শিবিরের বৈঠকের কোনও প্রত্যক্ষ প্রতিফলন এ রাজ্যের কংগ্রেস রাজনীতিতে পড়বে না বলে ফের দাবি করলেন লোকসভায় বিরোধী দলের নেতা ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। তাঁর বক্তব্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘স্বৈরাচারী শাসনে’র বিরুদ্ধে বাংলায় কংগ্রেসের লড়াই চলবে। রাজ্যে দলের কর্মীরা যখন তৃণমূল কংগ্রেসের হাতে আক্রান্ত, সেই সময়ে কংগ্রেস ও সিপিএমের নেতারা পটনায় বসে মমতার সঙ্গে ‘সেটিং’ করছেন বলে আক্রমণ শানাচ্ছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এর প্রেক্ষিতে শুভেন্দুর ‘বিশ্বাসযোগ্যতা’ নিয়েই পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন অধীর।
পঞ্চায়েত নির্বাচন উপলক্ষে কলকাতা প্রেস ক্লাবে রবিবার ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর। সেখানে সিংহ ভাগ প্রশ্নই ছিল পটনার বৈঠক এবং রাজ্যে শাসক তৃণমূল ও বিরোধী কংগ্রেসের সমীকরণ সংক্রান্ত। অধীরের মতে, ‘‘দেশ জুড়ে ‘ভারত তোড়ো’র নীতির বিরুদ্ধে ‘ভারত জোড়ো’র বার্তা নিয়ে কংগ্রেস নেমেছে বিজেপিকে পরাস্ত করার লক্ষ্যে। পটনায় একটা বৈঠক হয়েছে। নীতীশ কুমার ডেকেছিলেন। তার সঙ্গে কংগ্রেসের অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ সব জুড়ে দিয়ে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছে গেলে মুশকিল!’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘ওই বৈঠকে না গেলে বলা হত, বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে কংগ্রেস আন্তরিক বা দায়িত্বশীল নয়!’’ পটনার ওই বৈঠককে ‘লক্ষ্মীপুজোর নেমন্তন্ন’ বলে আগেই মন্তব্য করেছিলেন। আর এ দিন তিনি বলেছেন, ‘বিয়েবাড়ির নেমন্তন্ন’!
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু এ দিনই পঞ্চায়েতের প্রচারে গিয়ে বলেছেন, ‘‘নির্বাচনে যদি নরেন্দ্র মোদীর সরকার চলে যায়, তার পরে এখানে দুর্নীতির মামলা একটাও এগোবে? রাজ্যে বাম, কংগ্রেসের কর্মীরা মার খাচ্ছেন, রক্ত ধরাচ্ছেন আর পটনায় তাঁদের নেতারা তৃণমূলের সঙ্গে বসে বিরিয়ানি-কফি খাচ্ছেন! বোঝাই যাচ্ছে সেটিং কেমন! আসল লড়াইটা শুধু বিজেপি লড়ছে।’’ এই নিয়ে প্রশ্নের জবাবে অধীরের বক্তব্য, ‘‘বিজেপির যারা সেটিং বলছে, তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা আছে? এ ঘর, ও ঘর করতে করতে সে ঘরে গিয়ে যারা বিপ্লবী সাজছে, তাদের কথায় মানুষ বিশ্বাস করবে? মোদীর লক্ষ্য, কংগ্রেসমুক্ত ভারত। তারা এ সব বলবেই। আমরা চাই মোদীমুক্ত ভারত।’’ সেই সঙ্গেই তাঁর সংযোজন, মমতা এবং তাঁর স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের লড়াই যেমন চলার, তেমনই চলবে।
শুভেন্দুর আক্রমণের জবাবে রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষও বলেছেন, ‘‘পটনায় বিরোধী ঐক্যের বৈঠকের পরে আতঙ্ক থেকে এ সব বলছেন! কর্নাটকে বিজেপি হেরেছে, দাক্ষিণাত্যে মুছে গিয়েছে। বিজেপি এখন আরও হারবে। আর নারদ-কাণ্ডে এফআইআরে নাম থাকা সত্ত্বেও সিবিআই শুভেন্দুকে ডাকেনি, দল বদলে বেঁচেছে। তার মুখে দুর্নীতির মামলার কথা মানায় না।’’ আর বাংলায় কংগ্রেসের অবস্থান প্রসঙ্গে তৃণমূলের কুণালের কটাক্ষ, ‘‘রাজ্যে বিজেপির দুই ভাই, সিপিএম ও কংগ্রেস (আই)! পঞ্চায়েতেও ওরা বিজেপির সঙ্গে মিলে-মিশে আছে। বিজেপির সঙ্গে লড়াই করছে তৃণমূলই।’’ পাশাপাশিই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি উল্লেখ করেছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কংগ্রেস বা বামেরা কেউই দুর্বলতা দেখায়নি।
সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যে পরিমাণ কেন্দ্রীয় বাহিনী লাগবে, তা নিশ্চিত করতে পঞ্চায়েত ভোট একাধিক দফায় করার কথা রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে ভেবে দেখতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন অধীর। মনোনয়ন-পর্ব এবং প্রচারে যে সব ঘটনা ঘটছে এবং সংবাদমাধ্যমের উপরে আক্রমণের অভিযোগ আসছে, তার প্রেক্ষিতে এ দিন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসকে চিঠি দিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি আর্জি জানিয়েছেন, পঞ্চায়েত ভোটে সংবাদমাধ্যমের জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করুন তিনি।