Belgachia

নর্দমার পাঁক-জলে বাস আর কত দিন, হাওড়া বেলগাছিয়ায় বিক্ষোভ বাসিন্দাদের

বাসিন্দাদের অভিযোগ, নোংরা জল মাড়িয়ে ছেলেমেয়েদের স্কুলে যেতে হচ্ছে। অনেকেরই চর্মরোগ এবং পেটের গোলমাল শুরু হয়ে গিয়েছে। সব দেখেও ব্যবস্থা নিচ্ছে না হাওড়া পুরসভা ও জেলা প্রশাসন।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২৫ ০৯:১৫
ভোগান্তি: হাওড়ায় বেলগাছিয়া ভাগাড়ের বিপর্যয়ের পরে নর্দমার উপচে পড়া জলে জলমগ্ন হয়ে রয়েছে পার্শ্ববর্তী এলাকা। মঙ্গলবার।

ভোগান্তি: হাওড়ায় বেলগাছিয়া ভাগাড়ের বিপর্যয়ের পরে নর্দমার উপচে পড়া জলে জলমগ্ন হয়ে রয়েছে পার্শ্ববর্তী এলাকা। মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র।

হাওড়ার বেলগাছিয়া ভাগাড়ে ধসের জেরে ওই এলাকার মূল নিকাশি নালা ভেঙে যাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সেখানকার নিকাশি ব্যবস্থা। নর্দমার জল উপচে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে এলাকার সমস্ত অলিগলি। সেই নোংরা, পাঁক জল ঢুকেছে বাড়ির ভিতরেও। গোদের উপরে বিষফোড়া হয়ে দেখা দিয়েছে নর্দমার জলের সঙ্গে পুরসভার পানীয় জল মিশে যাওয়া। সব মিলিয়ে দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে বাস করছিলেন এলাকার লোকজন। প্রায় দু’সপ্তাহ এমন চলার পরে মঙ্গলবার ধৈর্যের বাঁধ ভাঙল তাঁদের। প্রায় দু’ঘণ্টা পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখালেন তাঁরা। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে বেশির ভাগ ছিলেন মহিলা। বাসিন্দাদের
অভিযোগ, নোংরা জল মাড়িয়ে ছেলেমেয়েদের স্কুলে যেতে হচ্ছে। অনেকেরই চর্মরোগ এবং পেটের গোলমাল শুরু হয়ে গিয়েছে। সব দেখেও ব্যবস্থা নিচ্ছে না হাওড়া পুরসভা ও জেলা প্রশাসন।

Advertisement

পরিস্থিতি সামাল দিতে ছুটে যান উত্তর হাওড়ার তৃণমূল বিধায়ক তথা হাওড়া পুরসভার নিকাশি দফতরের দায়িত্বে থাকা প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য গৌতম চৌধুরী। তিনি স্বীকার করে নেন, এই বিপর্যয় সামলানোর পরিকাঠামো পুরসভার নেই। বিধায়ক জানান, এই কাজের দায়িত্ব কেএমডিএ নিয়েছিল। কিন্তু এত দিন পরেও তারা কেন কাজে হাত দেয়নি, পাল্টা সেই প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।

গত ২০ মার্চ ভয়াবহ ধস নামে বেলগাছিয়া ভাগাড়ে। ধসের জেরে আশপাশের একাধিক বাড়িতে ফাটল তো ধরেছিলই। সেই সঙ্গে ফেটে চৌচির হয়ে যায় পুরসভার সদ্য তৈরি করা রাস্তা ও তার পাশ দিয়ে যাওয়া কংক্রিটের নিকাশি নালা। পুরসভা সূত্রে জানা
গিয়েছে, ভাগাড়ের উপর দিয়ে যাওয়া এই নিকাশি নালাটি ছিল উত্তর হাওড়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিকাশি-পথ। এই বিপর্যয়ের পরে পরিস্থিতি দেখতে আসেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। কেএমডিএ-র ইঞ্জিনিয়ারদের উপস্থিতিতে পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর সঙ্গে বৈঠকে তিনি নির্দেশ দেন, দ্রুত মূল নিকাশি ব্যবস্থা ঠিক করার কাজে হাত দিতে হবে কেএমডিএ-কে।

কিন্তু বাসিন্দাদের অভিযোগ, এর পরেও নিকাশি ব্যবস্থা ঠিক করতে উদ্যোগী হয়নি কেএমডিএ। যার ফল, পুরসভার পানীয় জল সরবরাহ চালু হওয়ার পরেই আগে থেকে আবর্জনায় রুদ্ধ অলিগলির নর্দমা উপচে ভেসে যায় সি রোড, বি রোড-সহ বেলগাছিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা। গত প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে নর্দমার জল মাড়িয়েই যাতায়াত করছিলেন সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে এ দিন দুপুরে পথে নামেন তাঁরা। স্থানীয় বাসিন্দা কেয়া ঘোষ, সুজাতা দাসেরা বলেন, ‘‘আমরা কোনও নেতা, মন্ত্রীর কথায় আর বিশ্বাস করি না। এখনই এই জল নামাতে হবে। না হলে অবরোধ উঠবে না।’’

পরিস্থিতি বেগতিক দেখে আসেন উত্তর হাওড়ার তৃণমূল বিধায়ক। তিনি বাসিন্দাদের সামনেই বলেন, ‘‘এই পরিস্থিতি সামলানোর পরিকাঠামো পুরসভার নেই। ধস নামার দু’দিন পরে পুরমন্ত্রী এসে কেএমডিএ-কে বলেছিলেন, স্টিল পাইলিং করে নিকাশি নালা তৈরি করতে হবে। কেএমডিএ-র ইঞ্জিনিয়ারেরা আসছেন, মতামত দিচ্ছেন। কিন্তু ১২ দিন পরেও দেখা যাচ্ছে, তাঁরা কাজ শুরু করেননি।’’

তবে, বাসিন্দাদের বিক্ষোভের পরে এ দিন বিকেলেই পুরসভা ও সুডা-র ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন পুরসভার চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তী। পরে তিনি বলেন, ‘‘কেএমডিএ আমাদের যথেষ্ট সাহায্য করেছে। নিকাশি নালা তৈরির আগে মাটি পরীক্ষার কিছু কাজ আছে। তা না হলে ফের ধস নামতে পারে। সব কিছু দেখে শীঘ্রই ওঁরা কাজ
শুরু করবেন। নর্দমা কেটে ইতিমধ্যে একটি এলাকার জল নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখনও যে সব জায়গায় জল জমে রয়েছে, সেখানে অতিরিক্ত পাম্প বসিয়ে জল বার করার কাজ চলছে।’’

Advertisement
আরও পড়ুন