বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের রায়ের বিরুদ্ধে আদালতে গিয়েছিল প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ এমনকি, রাজ্য সরকারও। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
টেট মামলায় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশই বহাল রাখল কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ।
বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি লপিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দিল, প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত করবে সিবিআই-ই। আদালতের নজরদারিতে সেই তদন্ত হবে। এ ছাড়া এই মামলার যে ২৬৯ জনের চাকরি বাতিল করেছিল সিঙ্গল বেঞ্চ। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁদেরও পুনর্বহাল করা যাবে না। এমনকি, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি পদ থেকে বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যের অপসারণের নির্দেশও বহাল রেখে ডিভিশন বেঞ্চ বুঝিয়ে দিল, এ ব্যাপারে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্তকেই মান্যতা দিচ্ছে তারা।
শুক্রবার সকাল এগারোটা নাগাদ ডিভিশন বেঞ্চে রায়দানের প্রক্রিয়া শুরু হয়। ৮৫ পাতার রায় পড়তে শুরু করেন বিচারপতি সুব্রত তালুকদার। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের একক বেঞ্চের রায় বহাল রেখে তিনি জানান, একক বেঞ্চই তদন্তকারী সংস্থার কাছ থেকে রিপোর্ট চাইতে পারবে। এমনকি, প্রাথমিকের নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগের আর্থিক দিকটিও দেখবে একক বেঞ্চই। ফলে টেট মামলার বিচার প্রক্রিয়ার নিয়ন্ত্রণ থাকবে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের একক বেঞ্চেই। এ ছাড়া, টেট মামলায় মানিক এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের সম্পত্তির নথি চেয়ে যে হলফনামা জমা দিতে বলেছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। ডিভিশন বেঞ্চ সেই নির্দেশও বহাল রেখেছে।
এ ছাড়া টেট মামলায় পর্ষদের জমা দেওয়া নথির সত্য়তা নিয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় যে সন্দহ প্রকাশ করেছিলেন, তাও সমর্থন করেছে ডিভিশন বেঞ্চ। একক বেঞ্চে মামলা চলাকালীন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের কাছে তৎকালীন নিয়োগ সংক্রান্ত একাধিক নথি চেয়েছিল বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চ। সেই নির্দেশ মেনে পর্ষদ যে নথি আদালতে পেশ করে, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন বিচারপতি। বছর কয়েকের পুরনো ওই নথি নতুনের মতো দেখাচ্ছে বলেও জানান তিনি। সন্দেহ নিরসনের জন্য ওই নথি দিল্লিতে ফরেন্সিক গবেষণাগারে পাঠানো হয়েছিল। ডিভিশন বেঞ্চ সেই সিদ্ধান্তেও সিলমোহর দিয়েছে।
প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগ মামলায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছিল প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ, এমনকি রাজ্য সরকারও। এ ছাড়া বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য-সহ যাঁদের পর্ষদের পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছিল, তাঁরাও বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন ডিভিশন বেঞ্চে। মামলা করেছিলেন সৌমেন নন্দী এবং রমেশ মালিক। তাঁদের তরফে আইনজীবী হিসাবে আদালতে হাজির ছিলেন ফিরদৌস শামিম এবং সুদীপ্ত দাশগুপ্ত। মামলাটির শুনানি হয় বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি লপিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে। তবে গত ১৯ জুলাই শুনানি শেষ হলেও রায়দান হয়নি। নির্দেশ স্থগিত রাখা হয়েছিল। শুনানি শেষ হওয়ার এক মাস ১৪ দিন পর শুক্রবার রায় ঘোষণা করল ডিভিশন বেঞ্চ।
উল্লেখ্য, ইতিমধ্যেই প্রাথমিকের শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি পদ থেকে মানিকের অপসারণ হয়েছে। মানিকের বাড়িতে ইডি তল্লাশি চালিয়েছে। তাঁকে ডেকে পাঠিয়ে প্রায় ১৪ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদও করেছেন কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার আধিকারিকেরা। তার পরও ইডির তরফে মানিককে সিজিও কমপ্লেক্সে ডেকে পাঠানো হয়েছে আরও দু’বার। মানিকের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না, এমন দাবি করে সিবিআইও লুক আউট নোটিস জারি করে তাঁর বিরুদ্ধে। অন্য দিকে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের তদন্তেও কিছুটা এগিয়েছে সিবিআই। এই পরিস্থিতিতে ডিভিশন বেঞ্চ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের রায়ে স্থগিতাদেশ দিলে তদন্ত থমকে যাবে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল। একই সঙ্গে হাজার হাজার চাকরি প্রার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখোমুখি এসে দাঁড়াতে পারে বলেও উদ্বেগ ছিল। ডিভিশন বেঞ্চ অবশ্য একক বেঞ্চের প্রতিটি নির্দেশই বহাল রেখেছে।