Abhishek Banerjee

অভিষেক-রুজিরার বিরুদ্ধে ‘লুক আউট’ নোটিস তুলে নিতে ইডিকে নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট

বিদেশযাত্রার সাত দিন আগে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে অভিষেক-রুজিরাকে। তবে তাঁদের বিরুদ্ধে জারি হওয়া ‘লুক আউট’ নোটিস তুলে নিতে ইডিকে নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২৩ ১৩:১৪
Supreme Court directs Ed to withdraw Look Out Notice against Abhishek Banerjee & Rujira Banerjee

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (বাঁ দিকে) এবং রুজিরা নারুলা বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর স্ত্রী রুজিরা নারুলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে জারি হওয়া লুক আউট নোটিস তুলে নিতে ইডিকে নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। একই সঙ্গে শীর্ষ আদালত বলেছে, বিদেশযাত্রার সাত দিন আগে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে অভিষেক-রুজিরাকে। শুক্রবার বিচারপতি সঞ্জয় কিসন কউল এবং বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়ার ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি হয়।

যে ভাবে সওয়াল জবাব এগোল:

Advertisement

কপিল সিব্বল (অভিষেকের আইনজীবী): অভিষেকের বিরুদ্ধে লুক আউট নোটিস রয়েছে কি না ইডিকে জানাতে হবে।

এসভি রাজু (কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটির জেনারেল তথা ইডির আইনজীবী): অভিষেক ইতিমধ্যে বিদেশ পৌঁছে গিয়েছেন। এর আগেও বহু বার তিনি গিয়েছেন।

সিব্বল: তার মানে অভিষেকের বিরুদ্ধে লুক আউট নোটিস নেই।

বিচারপতি কউল (ইডির উদ্দেশে): কেউ বিদেশ যেতে চাইল, আপনারা অনুমতি দিয়ে দিলেন। কিন্তু লুক আউট নোটিসের বিষয়টি উঠলে বুঝতে হবে, তাঁকে আটকানো হচ্ছে। একই সঙ্গে দু’টি বিষয় কী ভাবে হতে পারে? আপনারা নিজেদের সময় নষ্ট করছেন। আবার আদালতেরও সময় নষ্ট করা হচ্ছে।

বিচারপতি কউল: ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্তকে সন্দেহ করতে হলে যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখাতে হয়। এটা থেকে সরে আসা যায় না, আপনারা সেটা জানেন। ইডি অনেক বেশি শক্তিশালী। তার পরেও কেন এমন হচ্ছে? যদি লুক আউট নোটিস থাকে, তবে প্রত্যাহার করে নিন।

আগে যা ঘটেছে:

গত সোমবার এই সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে আটকানো উচিত হবে না বলে ইডিকে জানিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। এর পাশাপাশি অভিষেক-পত্নী রুজিরা নারুলা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিদেশে যেতে বাধা দেওয়া হয়েছে কেন, তা ইডির কাছে জানতে চেয়েছিল শীর্ষ আদালত। রুজিরার বিরুদ্ধে লুক আউট নোটিস জারি হয়েছিল কেন, তা-ও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটির কাছে জানতে চেয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। শুক্রবার ইডিকে এই বিষয়ে জবাব দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। সোমবার এই মামলার শুনানিতে ইডির উদ্দেশে শীর্ষ আদালত বলেছিল, “তদন্তের প্রয়োজনে বার বার সমন করুন। সুপ্রিম কোর্টের আগের নির্দেশ মতো তদন্ত করতে বাধা কোথায়?”

সোমবার বিচারপতি সঞ্জয় কিসান কউলের বেঞ্চে এই মামলাটির শুনানি হয়েছিল। বিনা কারণে বিদেশে যেতে বাধা দিচ্ছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি— এই অভিযোগ তুলে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন অভিষেকের স্ত্রী রুজিরা। বিষয়টি নিয়ে শীর্ষ আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন রুজিরার আইনজীবী কপিল সিব্বল। আদালতে অভিষেক-পত্নীর বক্তব্য ছিল, ইডি দীর্ঘ দিন ধরে তদন্ত চালালেও আগে কখনও বিদেশযাত্রার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করেনি। কিন্তু সম্প্রতি কোনও কারণ ছাড়াই তাঁকে বিদেশে যেতে বাধা দেওয়া হয়। উল্লেখ্য, গত ৫ জুন কলকাতা বিমানবন্দরে রুজিরাকে আটকান অভিবাসন দফতরের কর্মীরা। রুজিরার ঘনিষ্ঠমহল সূত্রে জানা যায়, দুই সন্তানকে নিয়ে তিনি দুবাইয়ের বিমান ধরার জন্য বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন। বিমান ধরার আগেই তাঁকে ‘বাধা’ দেয় অভিবাসন দফতর। বিমানবন্দরে তাঁকে ইডি দফতরে হাজিরা দেওয়ার জন্য নোটিস ধরানো হয়। বেশ কিছু ক্ষণ অপেক্ষা করার পর বিমানবন্দর ছেড়ে বেরিয়ে যান অভিষেক-পত্নী।

ইডি সূত্রে জানা যায়, ২৬ জুলাই, বুধবার চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে চেয়ে কলকাতা হাই কোর্টে একটি হলফনামা জমা দিয়েছিলেন অভিষেক। ইডি সূত্রে খবর, হলফনামায় অভিষেক লেখেন, তিনি ইতিমধ্যেই ইডিকে তাঁর বিদেশ সফরের বিশদ বিবরণ জানিয়ে একটি চিঠি দিয়েছিলেন। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক এ কথাও জানিয়েছেন যে, গত ১৫ জুলাই এই সফরের কথা ইডিকে জানালেও, তাদের দিক থেকে কোনও জবাব আসেনি। সোমবার হাই কোর্টে ওই হলফনামায় অভিষেক জানান, আগামী ৮ অগস্ট বিকেল সাড়ে ৪টেয় চোখের চিকিৎসকের সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট রয়েছে তাঁর। সেই চিকিৎসার জন্য প্রায় ২৪ দিন আমেরিকায় থাকতে চান তিনি।

নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেফতার তৃণমূলের বহিষ্কৃত যুবনেতা কুন্তল ঘোষের চিঠি সংক্রান্ত মামলায় অভিষেকের নাম জড়িয়েছে। এ ছাড়া কয়লা পাচার সংক্রান্ত মামলাতেও নাম রয়েছে অভিষেকের। সোমবার যেমন বিদেশযাত্রার জন্য হাই কোর্টের অনুমতি চেয়ে হলফনামা জমা দিয়েছেন অভিষেক, তেমনই সোমবার কয়লা পাচার মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নজরেও বিদেশ যাওয়ার বিষয়টি উত্থাপন করেন তৃণমূলের ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ। অন্য দিকে, অভিবাসন দফতর সূত্রে জানা যায়, ইডির একটি মামলায় লুক আউট নোটিস জারি হয়েছে রুজিরার নামে। তাই তাঁর বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ রয়েছে বলে দাবি করে তারা। যদিও অভিষেকের ঘনিষ্ঠমহল সূত্রে জানা যায়, ইডির ওই মামলায় সুপ্রিম কোর্ট অভিষেক এবং রুজিরাকে রক্ষাকবচ দিয়ে জানিয়েছিল, তাঁদের বিদেশযাত্রার ক্ষেত্রে কোনও বাধা নেই। তা সত্ত্বেও রুজিরাকে বিমানবন্দরে বাধা দেওয়ার বিরুদ্ধে অভিষেক আইনি পদক্ষেপ করতে পারেন বলে তখনই শোনা গিয়েছিল। সেই সময় রুজিরাকে আটকানোর প্রসঙ্গ টেনে এনে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘অমানবিকতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি দাবি করেছিলেন, বিদেশে যাওয়ার বিষয়ে তদন্তকারী সংস্থা ইডিকে আগে জানিয়েছিলেন রুজিরা। ইডির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মুখ্যমন্ত্রী সে সময় বলেছিলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের অনুমতি দেওয়া ছিল। যদি ও কখনও বাইরে যায়, তবে ইডিকে জানাবে। সেই অনুযায়ী ও ইডিকে জানিয়েছে অনেক দিন আগেই। তখন ইডি বলতে পারত ‘তুমি যেয়ো না।’ কিন্তু বিমানবন্দরে গিয়ে হাতে নোটিস ধরিয়ে বলা হয় যে, ‘৮ তারিখে তুমি এসো...,’ অমানবিক জিনিস চলছে।’’ সরব হয়েছিলেন অভিষেকও। জানিয়েছিলেন, তাঁর জনসংযোগ যাত্রায় বাধা দেওয়ার জন্যই এ সব করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন
Advertisement