(বাঁ দিকে) ব্রাত্য বসু। সুকান্ত মজুমদার (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
বাংলার নাট্যদলগুলির উপর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘গুণকীর্তন’ করা নাটক চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা নাট্যকার ব্রাত্য বসু। বুধবার ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা (এনএসডি)-র চিঠি এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার দাবি করলেন, ব্রাত্য ‘অসত্য তথ্য’ ছড়িয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন।
মঙ্গলবার ব্রাত্য সামাজমাধ্যমে লিখেছিলেন, ‘‘কেন্দ্রের বিজেপি সরকার লোকসভা ভোটের আগে পশ্চিমবঙ্গের সবক’টি থিয়েটার দলকে এ দেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মহিমাবাচক ও গুণকীর্তন করা একটি ছোট নাটিকা পাঠিয়ে বলেছেন, এর অভিনয় সর্বত্র করতে হবে।’’ ব্রাত্যের মতে, যার অর্থ, ‘‘অভিনয়টি না-করলে কেন্দ্রের পাঠানো মোটা অনুদান এবং ভর্তুকি বন্ধ করে দেওয়া হবে।’’
সুকান্ত বুধবার এনএসডির বিজ্ঞপ্তি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘‘ব্রাত্য বসু যে অসত্য ও বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন, তা আমাদের সাংস্কৃতিক কাঠামোকে ক্ষুণ্ণ করবে।’’ রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর উদ্দেশে সুকান্তের খোঁচা, ‘‘আগ্রহী গোষ্ঠী ও সব গোষ্ঠীর মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে, তা অনুধাবন করার জন্য ব্রাত্যকে অভিধান সম্পর্কে সম্যক জ্ঞানার্জন করতে হবে।’’ সুকান্ত যে বিজ্ঞপ্তি পোস্ট করেছেন তাতে ‘আগ্রহী গোষ্ঠী’ শব্দবন্ধকে বিশেষ ভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
মঙ্গলবার ব্রাত্য তাঁর পোস্টের সঙ্গেই কেন্দ্রের পাঠানো ছ’পাতার ছোট নাটকটিও পোস্ট করেছিলেন। হিন্দিতে লেখা সেই নাটিকাটির নাম ‘লে আয়ে বাপস সোনে কি চিড়িয়া’। যার অর্থ সোনার পাখিকে ফিরিয়ে আনলাম। নাটকটি লিখেছেন ললিত প্রকাশ। নাটকটির ‘মর্মার্থ’ কী তা দাবি করে (‘প্রধানমন্ত্রীর মহিমাবাচক ও গুণকীর্তন করা’ বলে উল্লেখ করেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ) ব্রাত্য লেখেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের থিয়েটার দলগুলি যে হেতু বামপন্থী সেকুলার, তাই আমরা আশা রাখতেই পারি, এই নির্লজ্জ প্রস্তাব তাঁরা সবাই ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করবেন।’’
মন্ত্রী ব্রাত্যের পোস্ট করা ওই নাটকের পাতায় পাতায় লক্ষণীয় মোদী ব্যবহৃত ‘বিকশিত ভারত’, ‘অখণ্ডতা’ র মতো শব্দবন্ধ। প্রথম পাতার শেষ দিকে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী মোদীর নামও। সেখানে নাটকের এক চরিত্র সূত্রধারকে প্রশ্ন করে, ‘জি২০তে মোদীজি যা বলেছেন, তার অর্থ কী? বসুধৈব কুটুম্বকম বলতে উনি কী বোঝাতে চেয়েছেন।’
ব্রাত্যের পোস্টে কোথাও এনএসডির বিজ্ঞপ্তি ছিল না। সুকান্ত সেটিকে প্রকাশ্যে এনে বোঝাতে চেয়েছেন, ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। বস্তুত, ব্রাত্যের ওই পোস্টের পর আনন্দবাজার অনলাইনের পক্ষ থেকে বাংলার বিভিন্ন নাট্যদলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তাতে স্পষ্ট হয়েছিল বাংলার নাট্য সমাজ আড়াআড়ি বিভক্ত। কেউ বলেছিলেন, তাঁরা অংশগ্রহণ করবেন। কেউ বলেছিলেন করবেন না। আবার কেউ সময় নিয়ে দেখার কথা বলেছিলেন।