মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।
সমস্ত সরকারি প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি সারা ক্ষণ নজরে রাখতে চাইছে নবান্ন। সেই লক্ষ্যে ‘ইউনিফায়েড প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ (ইউপিএমএস) পোর্টালে প্রকল্প সংক্রান্ত তথ্য-পরিসংখ্যান দাখিল করার ক্ষেত্রে সমস্ত দফতরকে জুড়ে নিল রাজ্য সরকার।
এত দিন পর্যন্ত পূর্ত, জনস্বাস্থ্য কারিগরি, সেচ, জলসম্পদ, কেএমডিএ এবং পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতরের অধীন সমস্ত প্রকল্পের তথ্য এই পোর্টালে দিতে হত। এ বার সমস্ত প্রকল্পের প্রতি দিনের খতিয়ান দিতে হবে। রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে, দ্রুততার সঙ্গে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে হবে। সেই লক্ষ্যে সরকারি আধিকারিকদের জন্য বিশেষ অ্যাপেরও বন্দোবস্ত করছে রাজ্য সরকার। যার মাধ্যমে সরকারি আধিকারিকদের ঘরে বসে রিপোর্ট দেওয়ার জমানা শেষ করতে চাইছে রাজ্য।
সোমবারই রাজ্যের অর্থ দফতর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানিয়েছে, এ বার থেকে সব দফতরের সব প্রকল্পের তথ্য ইউপিএমএস পোর্টালে নথিভুক্ত করতে হবে। মঙ্গলবার থেকে তা কার্যকর হওয়াও শুরু হয়েছে। রাজ্যের অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘প্রকল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গতিশীলতা বজায় রাখতেই রাজ্য সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’’ আনুষ্ঠানিক ভাবে চন্দ্রিমা না বললেও প্রশাসন এবং শাসকদলের অনেকেরই বক্তব্য, ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোট মাথায় রেখেই এই পদক্ষেপ।
শাসকদলের একটি অংশ মনে করে, সরকারি কাজে আমলাদের কাজে ‘শ্লথতার’ জন্য ‘ফলো আপ’ প্রক্রিয়া সঠিক ভাবে হচ্ছে না। ফলে মানুষ সময়ের পরিষেবা সময়ে পাচ্ছেন না। রাজনৈতিক ভাবে যার ‘নেতিবাচক প্রভাব’ গিয়ে পড়ছে শাসকদলের উপরেই। তৃণমূলের এই অংশ মনে করে, আমলারা ভোট করেন না। ভোট করে দল। কিন্তু আমলাদের কাজের জবাবদিহি করতে হয় দলের নিচুতলার কর্মীদের। প্রশাসনিক মহলের অনেকের বক্তব্য, সেই বিষয়টিকে মান্যতা দিয়েই সব দফতরের প্রকল্পের কাজের খতিয়ান ইউপিএমএস পোর্টালে নথিভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য।
রাজ্য সরকারের প্রথম সারির আধিকারিকদের অনেকের বক্তব্য, গ্রামীণ বাংলায় সরকারের কাজ যাতে দ্রুত হয়, মানুষের কাছে সরকার সম্পর্কে যাতে ইতিবাচক বার্তা যায়, সেই চেষ্টাই করা হচ্ছে। যার ব্যাখ্যা হিসাবে অনেকে বলছেন, ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে গ্রামেই তৃণমূলের ফল ভাল হয়েছিল। শহর এবং মফস্সলের অনেক জায়গায় ধাক্কা খেতে হয়েছে শাসকদলকে। ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের লক্ষ্যে সেই ‘গ্রামীণ পুঁজি’কেই সংহত করতে চাইছে শাসকদল। তবে এর উল্টো অভিমতও রয়েছে। সেই মতাবলম্বীদের বক্তব্য, গ্রামোন্নয়ন দফতর ছাড়া রাজ্য সরকারের সমস্ত দফতরই গ্রাম-শহরে কাজ করে। ফলে এটা শুধু গ্রামের দিকে লক্ষ্য রেখে করা নয়। সার্বিক ভাবে গোটা রাজ্যেই সরকারি প্রকল্পকে গতিশীল করার প্রয়াস। তবে রাজ্য সরকার যে গ্রামীণ মানুষের উন্নয়নে জোর দিয়েছে, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে রাজ্য বাজেটেই। সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পেয়েছে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরই। প্রকল্পও গ্রামীণ এলাকাতেই বেশি।
গত কয়েক বছর ধরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিক প্রশাসনিক বৈঠকে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন সরকারি কাজে নজরদারির অভাব নিয়ে। কাজ শুরু হলে মাঝপথে তা থমকে যাওয়া, সে ব্যাপারে সরকারকে অবগত না-করা নিয়ে ক্ষোভ গোপন করেননি মুখ্যমন্ত্রী। এ বার সব দফতরকে কেন্দ্রীয় ভাবে পোর্টালে প্রকল্প সংক্রান্ত তথ্য জানানোর বিজ্ঞপ্তিও জারি করা হল।