WB Panchayat Election 2023

সুপ্রিম কোর্টে হেরে প্রতি জেলায় মাত্র এক কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চাইল রাজ্য নির্বাচন কমিশন

মঙ্গলবারই পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের রায় বহাল রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট। জানিয়েছে, সব জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করেই ভোট করতে হবে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০২৩ ১৮:৪৬
image of crpf

— প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

পঞ্চায়েত ভোটে প্রতি জেলায় এক কোম্পানি করে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। সেই হিসাবে মঙ্গলবার কেন্দ্রের কাছে ২২ জেলার জন্য ২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে পাঠানো হয়েছে কমিশনের তরফে। এক কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীতে সাধারণত ১০০ থেকে ১০৫ জন সদস্য থাকেন। তাঁদের মধ্যে পরিস্থিতি অনুযায়ী কাজে লাগানো হয় কম-বেশি ৮০ জনকে।

পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের রায় মঙ্গলবার বহাল রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালত জানায়, সব জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করেই রাজ্যে ভোট করতে হবে। এর আগে হাই কোর্টও ওই নির্দেশ দিয়েছিল। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতে গিয়েছিল রাজ্য ও রাজ্য নির্বাচন কমিশন। মঙ্গলবার সেই মামলার শুনানিতে অবাধ ও স্বচ্ছ ভোটের জন্য হাই কোর্টের নির্দেশই বহাল রাখার কথা জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টে মঙ্গলবার পঞ্চায়েত মামলার শুনানি হয় বিচারপতি বিভি নাগরত্ন এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চে। বিচারপতি নাগরত্ন রাজ্যের আইনজীবীকে বলেন, ‘‘আপনারা পাঁচ রাজ্য থেকে পুলিশ চেয়েছেন। আর হাই কোর্ট কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে বলেছে। খরচ তো কেন্দ্র দেবে। আপনাদের অসুবিধা কোথায়? তা ছাড়া ভোটে আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নে কেন্দ্রীয় বাহিনী হলে সমস্যা কোথায়?’’ জবাবে রাজ্যের আইনজীবী বলেন, ‘‘রাজ্যের পুলিশ যথেষ্ট সমর্থ। পুলিশকর্মী কম থাকায় অন্য রাজ্য থেকে পুলিশ চাওয়া হয়েছে। সব রকম প্রস্তুতি নেওয়া হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে হলে পরিকল্পনা বদল করতে হবে। নির্বাচনের মুখে যা সমস্যার।’’ যদিও রাজ্যের এই যুক্তি টেকেনি হয়নি শীর্ষ আদালতে। হাই কোর্টের রায়ই বহাল রেখেছে তারা।

Advertisement

আগে যা ঘটেছে

আগামী ৮ জুলাই পঞ্চায়েত নির্বাচন। কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করানোর দাবিতে প্রথম থেকেই সরব বিরোধীরা। পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন পর্ব ঘিরে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় রক্তপাত, বোমাবাজি, সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এই আবহে রাজ্যের সব জেলাতেই কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। গত বৃহস্পতিবার ওই নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে বলা হয়েছিল, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে আবেদন করতে হবে তাদের। প্রথমে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিংহ জানিয়েছিলেন, আদালতের নির্দেশ মতোই পদক্ষেপ করা হবে। কিন্তু তার পরই অবস্থান বদল করে কমিশন। এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে শনিবার শীর্ষ আদালতে আবেদন করে কমিশন। ওই দিনই শেষ হয় ৪৮ ঘণ্টার সময়সীমা।

সোমবার সুপ্রিম কোর্টে কমিশন জানায়, হাই কোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছে, তা কার্যকর করা সম্ভব নয়। কারণ, ভোটে নিরাপত্তার বিষয়টি দেখে রাজ্য। এ ব্যাপারে অনুরোধ করা তাদের কাজ নয়। ফলে রাজ্যের নিঃস্পৃহতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আবার হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয় বিরোধীরা। তারা অভিযোগ করে, হাই কোর্ট নির্দেশ দিয়ে সময় বেঁধে দেওয়ার পরও কমিশন পদক্ষেপ করেনি। এতে আদালতের অবমাননা করা হয়েছে। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং কংগ্রেস সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরী ওরফে ডালুর আবেদন গ্রহণ করে হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম সেই মামলা দায়েরের অনুমতি দিয়েছেন। একই সঙ্গে, প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, কমিশন যে হাই কোর্টের নির্দেশ কার্যকর করেনি, তা সংবাদপত্র মারফত জানতে পেরেছেন তিনিও।

এর আগে, পঞ্চায়েত মামলা নিয়ে হাই কোর্টের বৃস্পতিবারের রায়ের প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টে ‘ক্যাভিয়েট’ দাখিল করেন শুভেন্দু এবং দক্ষিণ মালদহের কংগ্রেস সাংসদ ডালু। তাঁদের নোটিস না-পাঠিয়ে এক তরফা শুনানির মাধ্যমে রাজ্য সরকার বা রাজ্য নির্বাচন কমিশন যাতে হাই কোর্টের রায়ের উপর স্থগিতাদেশ পাওয়ার চেষ্টা করতে না পারে, সেই উদ্দেশ্যেই এই ‘ক্যাভিয়েট’ করা হয়েছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement