মৃত টুম্পা মণ্ডল, যাঁর কঙ্কাল উদ্ধার হয়েছে ভাড়াবাড়ির (ডান দিকে) সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
সোনারপুরের ভাড়াবাড়ি থেকে বধূর কঙ্কাল উদ্ধার করলেন সিআইডির গোয়েন্দারা। কঙ্কালের সঙ্গে মিলেছে তাঁর শাঁখা, পলা, নোয়াও। ওই মহিলাকে মেরে সেপটিক ট্যাঙ্কের মধ্যে দেহ লুকিয়ে রাখার অভিযোগ উঠেছে তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে। শুক্রবার গোয়েন্দাদের জেরার মুখে অভিযুক্ত খুনের কথা স্বীকার করেছেন।
সোনারপুরের মিলনপল্লী এলাকার একটি বাড়িতে কয়েক বছর আগে ভাড়া থাকতেন ভোম্বল মণ্ডল এবং তাঁর স্ত্রী টুম্পা মণ্ডল। বাড়ির মালিক রূপালি মল্লিক জানিয়েছেন, দম্পতি ২০২০ সালে তাঁদের বাড়িতে ভাড়া থাকতে এসেছিলেন। দু’মাসের জন্য তাঁরা সেখানে ছিলেন। সময়ে ভাড়াও দিয়েছিলেন। মাঝেমাঝে দম্পতির মধ্যে ঝগড়ঝাঁটি হত বলে জানিয়েছেন বাড়িওয়ালা। এক দিন ঝগড়া শুনে প্রতিবেশীরা তাঁকে ডেকে এনেছিলেন। তার পরেই বাড়ি ছেড়ে দেন ভোম্বল-টুম্পা।
২০২০ সালের মার্চ মাসে স্ত্রীকে খুন করে সেপটিক ট্যাঙ্কে লুকিয়ে রেখেছিলেন বলে তদন্তকারীদের জানিয়েছেন ভোম্বল। এই তিন বছর ধরে ট্যাঙ্কের মধ্যেই দেহটি পড়ে ছিল। কেউ টের পাননি। সিআইডি সূত্রে খবর, টুম্পাকে শ্বাসরোধ করে খুন করেন তাঁর স্বামী। কী কারণে এই খুন, তা নিয়ে নানা সম্ভাবনার কথা উঠে এসেছে।
বাড়িওয়ালার কথায়, টুম্পা বাড়িতে সারা দিন ফোন নিয়ে থাকতেন। পেশায় রাজমিস্ত্রি ভোম্বল কাজে বেরিয়ে গেলে তিনি ফোনে কথা বলতেন দীর্ঘ ক্ষণ। সেই ফোনের কারণেই দম্পতির মধ্যে অশান্তি হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা স্থানীয়দের। আবার তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে পরকীয়ার সম্ভাবনা উঠে আসছে। গোয়েন্দাদের অনুমান, টুম্পা হয়তো বিবাহ-বহির্ভূত কোনও সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন। তা নিয়ে দু’জনের মধ্যে অশান্তি হয়। বচসার জেরে গলা টিপে স্ত্রীকে খুন করেন ভোম্বল।
এ প্রসঙ্গে আরও একটি সম্ভাবনার কথা উঠে এসেছে। কেউ কেউ বলছেন, লকডাউনের সময় ভোম্বলের কোনও উপার্জন ছিল না। তাই তিনি স্ত্রীকে দেহব্যবসায় নামাতে চেয়েছিলেন। তিন জন যুবকের কাছ থেকে তিনি নাকি টাকাও নিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু টুম্পা এই কাজে রাজি হননি। তাই তাঁদের মধ্যে অশান্তি হয়। স্ত্রীকে মারধর করতেন বলেও অভিযোগ ভোম্বলের বিরুদ্ধে।
টুম্পা নিখোঁজ জেনে ২০২০ সালেই সোনারপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন তাঁর বাবা লক্ষ্মণ হালদার। পুলিশ সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে। নিখোঁজ মহিলার স্বামীকে গ্রেফতারও করা হয়। কিন্তু টুম্পাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। খুনের কোনও প্রমাণও মেলেনি। কিছু দিন পর অভিযুক্ত জামিন পেয়ে গিয়েছিলেন। সম্প্রতি এই মামলাটি হাই কোর্টে ওঠে। আদালতের নির্দেশে গত ১৩ জুন তদন্তের ভার পায় সিআইডি। তারা ভোম্বলকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। শুক্রবার গোয়েন্দাদের জেরার মুখে অবশেষে স্ত্রীকে খুনের কথা কবুল করে নেন ভোম্বল। এ ক্ষেত্রে, পুলিশের তদন্ত নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশ সঠিক তদন্ত করলে হয়তো তিন বছর আগেই টুম্পার দেহ উদ্ধার করা যেত।
ভোম্বলদের বাড়িওয়ালা জানিয়েছেন, তাঁদের বাড়িতে ভোম্বলের দিদি এবং জামাইবাবু অনেক বছর আগে ভাড়া থাকতেন। তাঁরাই ভোম্বলদের ভাড়াবাড়িটির সন্ধান দিয়েছিলেন। দু’মাস পরে দম্পতি বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার কিছু দিন পর ভোম্বলের সেই জামাইবাবু এসে তাঁদের জিনিসপত্র নিয়ে গিয়েছিলেন। টুম্পার দেহ যে তাঁদেরই বাড়ির সেপটিক ট্যাঙ্কে পচছে, ঘুণাক্ষরেও টের পাননি বাড়িওয়ালারা কেউ। শনিবার ভোর ৬টা নাগাদ তাঁদের কাছে সিআইডি মারফত এই খুনের খবর পৌঁছয়। তার পর সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে উদ্ধার হয় কঙ্কাল।