Flat Building Leaning

২ অবিক্রীত ফ্ল্যাট বিক্রির তাড়া! গার্ডেনরিচ বিপর্যয়ের পর হেলে পড়া ফ্ল্যাটবাড়ি লুকিয়ে সোজা করার চেষ্টা?

বাঘাযতীনের চারতলা ফ্ল্যাটবাড়ি ভাঙার কাজ শুরু করেছে পুরসভা। উপরের দিক থেকে শুরু হয়েছে ভাঙার কাজ। পাশের দু’টি বাড়ির বাসিন্দাদেরও অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯:২৯
মঙ্গলবার বাঘাযতীনে হেলে পড়ে ফ্ল্যাটবাড়িটি। বুধবার সেটি ভেঙে ফেলার কাজ চালাচ্ছে পুরসভা।

মঙ্গলবার বাঘাযতীনে হেলে পড়ে ফ্ল্যাটবাড়িটি। বুধবার সেটি ভেঙে ফেলার কাজ চালাচ্ছে পুরসভা। —নিজস্ব চিত্র।

বাঘাযতীনের হেলে পড়া চারতলা ফ্ল্যাটবাড়ির দু’টি ফ্ল্যাট এখনও অবিক্রীত থেকে গিয়েছে। প্রোমোটার সুভাষ রায়ের নামেই রয়েছে ওই ফ্ল্যাট দু’টি। অনেক দিন ধরেই তিনি সেগুলি বিক্রির চেষ্টা করছিলেন বলে বাসিন্দাদের দাবি। দালালেরা খদ্দেরও নিয়ে আসছিলেন। বাসিন্দাদের দাবি, তখন তাঁদেরই কেউ কেউ খদ্দেরদের ফ্ল্যাটবাড়ির পরিস্থিতি নিয়ে সতর্কও করতেন। ফলে অবিক্রীত ফ্ল্যাট দু’টি বিক্রি করতে সমস্যা হচ্ছিল প্রোমোটারের। তাই ফ্ল্যাটবাড়িটি সোজা করার তাড়ায় ছিলেন তিনি। এরই মধ্যে গার্ডেনরিচের বহুতল ভেঙে পড়ার ঘটনার পর থেকে আরও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন প্রোমোটার। হেলে যাওয়া ফ্ল্যাটবাড়ি তাড়াতাড়ি সোজা করতে উদ্যোগী হন প্রোমোটার।

Advertisement

ফ্ল্যাটবাড়িটিকে সোজা করে আগের অবস্থায় ফেরানোর কাজ শুরুর পর সেটিকে কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল। এর একটি কারণ, যাতে পথচলতি মানুষজনের কারও আঘাত না লাগে। তবে বাসিন্দাদের দাবি, কাজটি যাতে পুর প্রশাসন নজরে না আসে, সেটিও ভাবাচ্ছিল প্রোমোটারকে। তিনি নিজেই এ বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন বলে দাবি হেলে পড়া ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের। তাঁদের দাবি, প্রোমোটার বলেছিলেন, বিষয়টি পুরসভার নজরে পড়লে বিপজ্জনক বাড়ির বোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হবে। পুরো ভবনটিই ভেঙে ফেলা হবে তখন। সেই ভয়ে বাসিন্দারাও কেউ কিছু বলেননি।

ওই ফ্ল্যাটবাড়ির এক তলায় একটি ফ্ল্যাট রয়েছে অভিজিৎ বক্সীর। প্রায় বছর দশেক ধরে ফ্ল্যাটে থাকছেন তিনি। অভিজিৎ জানান, ২০১৪ সালে তিনি ফ্ল্যাটটিতে থাকতে শুরু করেন। তখন এই ফ্ল্যাটবাড়িতে কোনও সমস্যা ছিল না। কিন্তু দুই-তিন বছর পর থেকেই বাড়িটির পিছন দিকের অংশটি হেলতে শুরু করে। তাঁর দাবি, ওই সময় প্রোমোটার এলাকারই বাসিন্দা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ইঞ্জিনিয়ার এবং আরও কয়েক জনকে এনে ফ্ল্যাটবাড়িটি পরীক্ষা করান। তাঁরা পুরো ভবনটি দেখে জানান, ফ্ল্যাটবাড়ির কোথাও ফাটল ধরেনি। যে অবস্থায় সেটি নির্মিত হয়েছিল, সেই অবস্থাতেই বসে গিয়েছে। তাই বাসিন্দাদের থাকার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হবে না বলে আশ্বস্ত করা হয়েছিল সেই সময়। ছ’মাস পরে আবার পরীক্ষা করানো হয়েছিল। তখনও একই অবস্থায় ছিল ফ্ল্যাটবাড়িটি।

সেই সময় প্রোমোটার বাসিন্দাদের নিয়ে বৈঠক করেন। হেলে পড়া বাড়িটি তুলে সোজা করার জন্য একটি সংস্থার প্রতিনিধিকেও ডেকে আনেন। বাসিন্দাদের অভিযোগ, বাড়িটি তুলে সোজা করার জন্য ফ্ল্যাটমালিকদের থেকে এক লক্ষ টাকা করে চেয়েছিলেন তিনি। তবে বাসিন্দাদের আপত্তিতে শেষ পর্যন্ত টাকা নেওয়া হয়নি তাঁদের থেকে। কিন্তু অভিযোগ এক প্রকার জোর করেই বাড়ি তুলে সোজা করার জন্য চুক্তিতে সই করানো হয় বাসিন্দাদের।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে হেলে পড়া ফ্ল্যাটবাড়ি ভেঙে ফেলার কাজ চলছে। চারতলা ওই ফ্ল্যাটবাড়ির উপরের দিক থেকে ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে। তবে সব জিনিসপত্র বার করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশায় রয়েছেন বাসিন্দারা। স্বাভাবিক কারণেই, তাঁরা এখন মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত। কোন আলমারিতে কী রয়েছে, খেয়াল করতে পারছেন না অনেকেই। এ দিকে এখনও পর্যন্ত খোঁজ মেলেনি ওই প্রোমোটারের। এলাকায় তাঁর একটি বেডিংয়ের দোকান রয়েছে। বুধবার সকাল থেকে বন্ধই পড়ে রয়েছে দোকান। অথচ মঙ্গলবার সকালেও এই দোকান খুলেছিল। বাড়িতেও দেখা মেলেনি প্রোমোটার বা তাঁর পরিবারের কারও। তাঁরা কোথায় রয়েছেন, সেই উত্তর নেই বাড়ির ভাড়াটিয়াদের কাছেও।

ফ্ল্যাটবাড়ি ভাঙার কাজের উপর নজর রাখছেন এলাকার কাউন্সিলর মিতালি বন্দ্যোপাধ্যায়। ফ্ল্যাটটি ভাঙার বিষয়ে পরামর্শের জন্য পুরসভা থেকে যোগাযোগ করা হয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক দীপঙ্কর চক্রবর্তীর সঙ্গে। তিনিও রয়েছেন এলাকায়। তিনিই প্রস্তাব দেন, ফ্ল্যাটবাড়িটি উপর থেকে ভাঙা শুরু করার জন্য। বাড়িটি হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ার কোনও আশঙ্কাও একেবারে উড়িয়ে দেননি তিনি। সাবধানতার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হলেও, নিশ্চিত ভাবে কিছু বলা সম্ভব নয় বলে মত তাঁর। সে ক্ষেত্রে হেলে পড়া ফ্ল্যাটটি হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়লে পাশের বাড়িটিরও ক্ষতি হতে পারে। কাউন্সিলর মিতালি জানান, ফ্ল্যাটের পাশের দু’টি বাড়ি থেকে বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রোমোটার ইচ্ছা করেই এই কাজের কথা পুরসভাকে জানাননি বলে দাবি কাউন্সিলরের।

মঙ্গলবার দুপুরে দক্ষিণ কলকাতার বাঘাযতীনে ‘শুভ অ্যাপার্টমেন্ট’ নামে ওই ফ্ল্যাটবাড়িটি বিপজ্জনক ভাবে হেলে পড়ে। তবে বাসিন্দাদের কেউ সেখানে ছিলেন না, তাই বড়সড় দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়। ঘটনাস্থলে পৌঁছন বিপর্যয় মোকাবিলা দল এবং পুরসভার আবাসন বিভাগের আধিকারিকেরা। যাদবপুরের বিধায়ক দেবব্রত মজুমদার এবং স্থানীয় কাউন্সিলর মিতালিও যান এলাকায়। ফ্ল্যাটবাড়ির সামনে পৌঁছে যান কলকাতা পুলিশের ডিসি (দক্ষিণ শহরতলি) বিদিশা কলিতা দাশগুপ্তও। রাতেই এ নিয়ে এফআইআর দায়ের হয় নেতাজিনগর থানায়। শুরু হয় বাড়ি ভাঙার প্রক্রিয়া। ঘটনার পর থেকেই ওই বহুতলের প্রোমোটার বেপাত্তা। তাঁর খোঁজ চলছে।

Advertisement
আরও পড়ুন