গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে পড়ুয়ারা মিছিল করায় হাওড়ার তিনটি স্কুলকে শোক়জ় করেছেন জেলা স্কুল পরিদর্শক। অভিযোগ, স্কুলের সময়ে মিছিল হয়েছে। তার পরেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, বিকাশ ভবন কি প্রতিবাদের পায়ে বেড়ি পরাতে চাইছে? তবে শাসকদল তৃণমূলের তরফে গোটা বিষয়টিকে ‘কুৎসা এবং অপপ্রচার’ বলে দাবি করেছেন কুণাল ঘোষ। পাশাপাশি তিনি ওই শোক়জ় নোটিস নিয়ে দলের তরফে ব্যাখ্যাও দিয়েছেন।
শনিবার কুণাল বলেন, ‘‘আমরা বিষয়টি নিয়ে বিশদে খোঁজ নিয়েছি। দেখা যাচ্ছে, স্থানীয় স্তরে কিছু রাজনৈতিক শক্তি স্কুলপড়ুয়াদের মিছিলে হাঁটতে বাধ্য করছে। কোথাও স্কুলে কর্মরত কোনও কোনও শিক্ষক-শিক্ষিকাও রাজনৈতিক পক্ষপাত করে কচিকাঁচাদের পথে নামাচ্ছেন। শিক্ষা দফতর সেটাকেই রুখতে চেয়েছে।’’ তৃণমূলের আরও ব্যাখ্যা, শিক্ষা দফতর একবারও বলেনি যে, স্কুলপড়ুয়াদের প্রতিবাদে শামিল হওয়া যাবে না। বলা হয়েছে, স্কুলে পঠনপাঠনের সময়ে তা যেন না হয়। কোথাও কোথাও তা হয়েছে বলে অভিযোগ এসেছিল। সেই কারণেই শিক্ষা দফতর কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করেছে। কুণাল এ-ও স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘‘স্কুলের আগে বা স্কুল ছুটির পরে যদি কেউ প্রতিবাদ করে, মিছিল করে, তাতে কারও কিছু বলার নেই।’’
শাসকদল তৃণমূল এ-ও মনে করছে যে, গোটা বিষয়টিতে একটা ‘হুজুগ’ তৈরি করা হচ্ছে। কুণালের কথায়, ‘‘অনেক জায়গায় স্কুলপড়ুয়ারা জানেই না ঘটনাটা কী ঘটেছে। এ-ও জানে না, অতীতে কী ঘটত বা দেশের অন্যান্য রাজ্যে কী ঘটছে। একটা উদ্দেশ্য নিয়ে বৃহত্তর ক্ষেত্রে সরকার সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা নির্মাণের জন্য কোথাও কোথাও স্কুলপড়ুয়াদের ব্যবহার করা হচ্ছে।’’ গোটা বিষয়টিতে সিপিএমের শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ এবং এবিপিটিএ-রও ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
শুক্রবার বিকেলে আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে বেশ কয়েকটি মিছিল হয়েছে হাওড়ায়। সেই প্রতিবাদে হাওড়া জেলার তিনটি স্কুল অংশ নিয়েছিল বলে জানিয়েছে শিক্ষা দফতর। সেগুলি হল হাওড়ার বালুহাটি হাই স্কুল, বালুহাটি গার্লস হাই স্কুল এবং ব্যাঁটরা রাজলক্ষ্মী বালিকা বিদ্যালয়। তিনটি স্কুলের প্রধানশিক্ষকদের পাঠানো কারণ দর্শানোর নোটিসে বলা হয়েছে, কেন স্কুলের শিক্ষক এবং পড়ুয়ারা মিছিলে অংশ নিয়েছেন, কেন স্কুলে এমন কর্মকাণ্ড হবে, তার ব্যাখ্যা দিতে হবে। শুক্রবারেই পাঠানো হয়েছে ওই চিঠিটি। নোটিস পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কারণ ব্যাখ্যার নির্দেশও দিয়েছে শিক্ষা দফতর। অন্যথায় ‘কড়া পদক্ষেপ’ করা হবে বলে উল্লেখ করা রয়েছে নোটিসে।
বালুহাটি হাই স্কুলের টিচার ইনচার্জ অঞ্জনকুমার সাহার অবশ্য দাবি, কোনও শিক্ষক সংশ্লিষ্ট প্রতিবাদ মিছিলে যাননি। তিনি জানিয়েছেন, স্কুলের পাশের রাস্তা দিয়ে যে মিছিল হয়েছে সেটা ঠিক। তবে তাঁদের স্কুলের কোনও শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী তাতে অংশ নেননি। তা ছাড়া, যে মিছিলটি হয়েছে, সেটি স্কুল ছুটির পরে। ওই শিক্ষক বলেন, ‘‘হয়তো প্রাক্তনীরা কেউ কেউ মিছিল করেছেন। বর্তমান ছাত্রেরাও ছিল। তবে শুক্রবার স্কুলে পড়াশোনা হয়েছে। টিফিনে খেলাধুলো করেছে পড়ুয়ারা। স্কুলের সময়ে কোনও পড়ুয়া মিছিলে অংশ নেয়নি। তার পরেও কেন শোকজ় নোটিস এল বলতে পারব না।’’ তবে নোটিস নিয়ে যখন রাজনৈতিক চাপানউতর শুরু হয়েছে, তখন রাজনৈতিক ভাবেই দ্রুত তার মোকাবিলা করতে নেমেছে তৃণমূল। কুণালের ব্যাখ্যা তারই প্রমাণ। যদিও এই ব্যাখ্যায় ‘কাজের কাজ’ হবে কি না, তা নিয়ে শাসক শিবিরের অন্দরেও সংশয় রয়েছে। প্রসঙ্গত, পডুয়ারা যাতে স্কুলের সময়ে কোনও ‘অন্য’ কর্মসূচিতে অংশ না নেয়, সেই মর্মে শুক্রবারেই রাজ্য সরকারের অন্যতম শীর্ষমহল থেকে রাজ্যের সমস্ত জেলার জেলাশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদিও তাতে আরজি কর-কাণ্ডের কথা বলা হয়নি। বলা হয়েছে, সেটি একটি ‘সাধারণ নির্দেশিকা’।