গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
আরজি কর মামলার মঙ্গলবারের শুনানি শেষ হল।
প্রধান বিচারপতি বলেন, “শিয়ালদহ কোর্টে ট্রায়ালে দেরি হলে মামলাটি নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। পরবর্তী শুনানির আগে মামলাটি শুনবে আদালত।”
প্রধান বিচারপতি জানান, আরজি কর মামলার পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ১৭ মার্চ।
কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার বিনীত কুমার গোয়েলের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার করার অনুমতি দিল সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি বলেন, “ওই সংক্রান্ত মামলাটি হাই কোর্টে বিচারাধীন রয়েছে। তাই ওই আবেদনটির শুনানি হবে না।”
আরজি কর মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি বলেন, “একটি ইমেল আইডি চালু করবে ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্স (এনটিএফ)। সেখানে দাবি বা অভিযোগ জানাতে পারবেন চিকিৎসকরা। সব খতিয়ে দেখে ১২ সপ্তাহ পরে রিপোর্ট দেবে টাস্ক ফোর্স।
জুনিয়র ডাক্তারদের আইনজীবীর আর্জি শুনে প্রধান বিচারপতি বলেন, “আপনাদের যা বলার ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্সের কাছে বলুন। টাস্ক ফোর্সকে আমরা নির্দেশ দিতে পারি। একই সঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, এক মাসের মধ্যে বিচারপ্রক্রিয়া (ট্রায়াল) শেষ হবে। এটা কি আমার রেকর্ডে নিতে পারি?”
প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সংক্রান্ত সুপ্রিম-নির্দেশের পরেই জুনিয়র ডাক্তারদের আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংহ বলেন, “আমার অনুরোধ রাজ্যের পদক্ষেপের উপর নজরদারি করতে নিরপেক্ষ কমিটি গঠন করা হোক।”
সিবিআইয়ের আইনজীবী জানান, ২৭ নভেম্বর সরকারি পদে কাজ করা দুই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য রাজ্যের অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। ২৯ নভেম্বর চার্জশিট দেওয়া হয়। রাজ্যের আইনজীবীর উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, “প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করুন।”
সিবিআইয়ের জবাবের প্রেক্ষিতে রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বল বলেন, “আমাদের কাছে এমন কোনও তথ্য নেই।”
শুনানিতে আরজি কর আর্থিক দুর্নীতি মামলায় চার্জশিট দেওয়া হয়েছে কি না, তা জানতে চান প্রধান বিচারপতি। তুষার বলেন, “অন্য কোর্টে মামলা চলছে।” একই সঙ্গে তিনি রাজ্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে বলেন, “দুই অভিযুক্ত সরকারি পদে কাজ করেছিলেন। তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে রাজ্যের অনুমতি প্রয়োজন। কিন্তু রাজ্যের অনুমতি পাওয়া যাচ্ছে না।”
শুনানি চলার সময়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, “ডিএনএ রিপোর্ট করা হয়েছে? রিপোর্ট কোথায়?” জবাবে তুষার মেহতা বলেন, “রিপোর্ট ম্যাচ করেছে।”
আদালতে নির্যাতিতার পরিবারের আইনজীবীর আর্জি, দ্রুত বিচার দেওয়া হোক। তিনি বলেন, “ছুটির দিন ছাড়া প্রতি দিনই ট্রায়াল হচ্ছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে ট্রায়াল শেষ হয়ে যেতে পারে।”
নিম্ন আদালতে মামলা কী অবস্থায় রয়েছে, তা জানতে চাইলেন প্রধান বিচারপতি। প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, “অভিযুক্তের নিজের আইনজীবী রয়েছে? না কি লিগ্যাল সার্ভিসেস থেকে আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে?” উত্তরে সিবিআইয়ের আইনজীবী তুষার বলেন, “লিগ্যাল সার্ভিসেস থেকে আইনজীবী রয়েছেন।”
সিবিআইয়ের আইনজীবী তথা কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা তদন্তের অগ্রগতি সংক্রান্ত স্টেটাস রিপোর্ট জমা দিলেন শীর্ষ আদালতে। এটি আরজি কর-তদন্তে সুপ্রিম কোর্টে জমা দেওয়া সিবিআইয়ের সপ্তম রিপোর্ট। রিপোর্টে তিনটি মামলার কথা, যথা- আরজি কর ধর্ষণ ও খুনের মামলা, প্রমাণ লোপাটের মামলা এবং আরজি কর আর্থিক দুর্নীতি মামলার কথা বলা হয়েছে। সিবিআই জানিয়েছে, এই মামলাগুলিতে এখনও পর্যন্ত ৪০ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন বলে আদালতে জানিয়েছে সিবিআই।
শুনানির শুরুতেই প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না বলেন, “প্রচুর আবেদন জমা পড়েছে। সব আবেদনের শুনানি করতে গেলে অনেক সময় লাগবে। শুধুমাত্র আর্জি এবং প্রয়োজনীয় তথ্য দিন।”
গত শুনানিতে শীর্ষ আদালতে আরজি কর খুন-ধর্ষণ এবং আর্থিক দুর্নীতির মামলায় তদন্তের রিপোর্ট জমা দিয়েছিল সিবিআই। সেটি ছিল তদন্তের ষষ্ঠ রিপোর্ট। সিবিআইকে আবার তদন্তের অগ্রগতির রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। সেই মতো মঙ্গলবার তদন্তের সপ্তম রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা কেন্দ্রীয় ওই তদন্তকারী সংস্থার। অন্য দিকে, ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্সের সুপারিশ সব রাজ্যকে পাঠাতে বলেছিল সুপ্রিম কোর্ট। তা নিয়ে রাজ্যের মুখ্যসচিবেরা মতামত জানাতে পারবেন।
প্রায় এক মাস পরে মঙ্গলবার আরজি কর মামলার শুনানি রয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। গত ৭ নভেম্বর শীর্ষ আদালতে এই মামলাটির শুনানি হয়েছিল। মঙ্গলবার বেলায় প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চে শুনানি রয়েছে। প্রধান বিচারপতি হিসাবে এই প্রথম মামলাটি শুনবেন বিচারপতি খন্না।