Bengal Recruitment Case

পঞ্চায়েত ভোটের এক দিন আগে ৩২ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ খারিজে কি স্বস্তিতে শাসক?

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশের পর শাসক নেতাদের বিধ্বস্ত দেখিয়েছিল। অন্য দিকে বিরোধী শিবিরে দেখা গিয়েছিল উল্লাস। পঞ্চায়েত ভোটের আগের দিন সেই নির্দেশ শীর্ষ আদালতে খারিজ! এখন ছবিটা কী?

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৩ ১৭:৩৮
iamge of Mamata Banerjee.

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

রাত পোহালেই পঞ্চায়েত ভোট। তার আগের দিন ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের নিয়োগ বাতিল সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ‘স্বস্তি’ খুঁজছে শাসক দল। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় যে দিন একলপ্তে ৩২ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন, সে দিন দৃশ্যতই শাসক নেতাদের বিধ্বস্ত দেখিয়েছিল। তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেতা বলেওছিলেন, ‘‘সংখ্যাটা শুধু ৩২ হাজার নয়। তাঁদের পরিবার ধরলে সংখ্যাটা প্রায় দেড় লক্ষ!’’

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের সেই নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টে খারিজ হয়ে যাওয়ায় নিঃসন্দেহে ‘স্বস্তি’ পেয়েছে শাসক শিবির। বিশেষত, যখন ওই নির্দেশ এসেছে পঞ্চায়েত ভোটের ২৪ ঘণ্টা আগে। শনিবার ভোটারদের উপর এর কোনও প্রভাব পড়বে কি না, তা বলা কঠিন। তবে শাসক দল হিসেবে তৃণমূল যে খানিকটা হাঁফ ছাড়ছে, সেটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। কারণ, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের ওই নির্দেশের প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘চাকরিহারা’দের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছিলেন। কারও নাম না করে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমরা চাকরি দিচ্ছি। কেউ কেউ চাকরি খাওয়ার জন্য বসে আছেন! আপনারা চিন্তা করবেন না। আমরা পাশে আছি।’’

Advertisement

শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর রাজ্য তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা তো প্রথম থেকেই বলছি, বিচার ব্যবস্থার একটা অংশ তৃণমূল এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারকে হেয় করতে গিয়ে আসলে বিচার ব্যবস্থাকে কলুষিত করছে। সুপ্রিম কোর্টের রায় সেটাই আরও এক বার প্রমাণ করে দিল।’’

পঞ্চায়েত ভোটের আগের দিন এই নির্দেশে শাসক শিবির যদি ‘স্বস্তি’ পায়, তবে নিশ্চিত ভাবেই খানিকটা পিছনের পায়ে বিরোধী শিবির। কারণ, তাঁরা ৩২ হাজার চাকরি বাতিলকে সমর্থন করতে পারছেন না। আবার শাসকের স্বস্তিও তাঁদের কাছে অস্বস্তিকর। তবে চাকরি বাতিলের নির্দেশের সময় বিরোধীদের একাংশকে উল্লসিতই দেখিয়েছিল। সেটা একেবারেই ‘রাজনৈতিক’ কারণে। অনেকে চাকরিহারাদের প্রতি সহানুভূতি দেখালেও অনেকে মনে করেছিলেন, ওই ৩২ হাজার চাকরি-খোয়ানো মানুষ এবং তাঁদের পরিবারকে সরকারের বিরুদ্ধে উস্কে দেওয়া যাবে। শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সেই উদ্যোগে খানিকটা হলেও বাধা পড়ল। উল্টে বিষয়টি ‘ইতিবাচক’ হয়ে গেল শাসক পক্ষের কাছে। কারণ, পঞ্চায়েত ভোটের আগের দিন হাই কোর্টের দুই বেঞ্চের নির্দেশই খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

তবে পাশাপাশিই দেশের শীর্ষ আদালত বলেছে, কলকাতা হাই কোর্টে নতুন ডিভিশন বেঞ্চ গড়ে শুরু থেকে ওই মামলা শুনতে হবে। আপাতত সেটিকেই খড়কুটোর মতো আঁকড়ে ধরতে চাইছেন বিরোধীরা। যেমন বিজেপি নেতা রাহুল সিংহ বলেছেন, ‘‘এখনও মামলার নিষ্পত্তি হয়নি। সুপ্রিম কোর্ট ক্লিন চিট দিয়ে বলেনি যে, বাংলায় চাকরি চুরি হয়নি। নতুন বেঞ্চে এই মামলা শুনতে বলেছে সর্বোচ্চ আদালত। আমাদের বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা আছে। তবে তৃণমূলের এতে উল্লসিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ, সারা রাজ্য জানে তৃণমূল আর চোর এখন সমার্থক।’’

সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের বক্তব্য, এই নির্দেশের সঙ্গে পঞ্চায়েত ভোটের কোনও যোগ নেই। এর ফলে পঞ্চায়েত ভোটের উপর কোনও প্রভাব পড়বে না। বরং তিনি প্রক্রিয়াগত ত্রুটির দায় শাসক তৃণমূলের উপরেই চাপিয়েছেন। সেলিমের কথায়, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটের আগের দিন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এই কর্মরত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মুখে হাসি ফুটতে পারে। কিন্তু তৃণমূলের মুখে নয়। কারণ। উৎকণ্ঠায় থাকা ৩২ হাজার শিক্ষক জানেন, তাঁদের অনিশ্চয়তার মুখে দাঁড় করিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার আর তৃণমূল।’’ পাশাপাশিই সিপিএমের এই শীর্ষনেতা বলেন, ‘‘এই ৩২ হাজার সংখ্যাটা বিরাট! সকলের পরিবারের লোকজনকে সামাজিক ভাবেও অসম্মানিত হতে হচ্ছিল। এঁদের মধ্যে হয়তো অনেকেই যোগ্য এবং স্বচ্ছ ভাবে চাকরিতে ঢুকেছিলেন। সরকারের অপদার্থতায় তাঁদেরকেও মানুষ সন্দেহের চোখে দেখছিলেন। ওই প্রক্রিয়াগত ত্রুটি পরিকল্পিত ভাবে ঘটিয়েছিল তৃণমূল।’’

বিরোধী কংগ্রেসও এতে তৃণমূলের স্বস্তির কারণ দেখছে না। প্রদেশ কংগ্রেসের অন্যতম মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায় বলেন, ‘‘আদালতের রায় নিয়ে ভাল-মন্দ বলার এক্তিয়ার আমাদের নেই। আমরা তা বলবও না। যত দূর শুনেছি, সুপ্রিম কোর্ট বলেছে কলকাতা হাই কোর্টে নতুন ডিভিশন বেঞ্চকে এই মামলা শুনতে হবে। ফলে পঞ্চায়েত ভোটের আগের দিন এই নির্দেশ নিয়ে তৃণমূল যতই লাফালাফি করুক, গাছের পাতা থেকে আকাশের তারা— সবাই জানে তৃণমূল চোর। দোকান খুলে চাকরি বিক্রি করে একটা প্রজন্মের মাজা ভেঙে দিয়েছে। বাংলার মানুষ সব দেখেছেন।’’

আরও পড়ুন
Advertisement