সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের স্বস্তি প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদে। ফাইল চিত্র।
৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি খারিজের নির্দেশ দিলেও বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁদের ‘কাজ’ বন্ধ করেননি। পার্শ্বশিক্ষক পদে নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এর পর কলকাতা হাই কোর্টেরই ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে বলা হয় ওই ৩২ হাজার প্রাথমিকের শিক্ষককে। সোমবার প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ এবং শিক্ষকদের একাংশের করা মামলায় সুপ্রিম কোর্ট চাকরি বাতিলের নির্দেশ খারিজ করায় কোনও প্রক্রিয়ারই আর দরকার পড়বে না বলে আইনজীবীদের একাংশ জানাচ্ছেন।
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর রায়ে জানিয়েছিলেন, চাকরিচ্যুত শিক্ষকেরা আপাতত ৪ মাস তাঁদের স্কুলে যেতে পারবেন। তবে পার্শ্বশিক্ষকদের বেতনকাঠামো অনুসরণ করে তাঁদের বেতন দেওয়া হবে। পরে বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশনের বেঞ্চ একটি অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেন। ওই নির্দেশের ফলে চাকরি বাতিল না হলেও, নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে বলা হয় ওই ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষককে। ডিভিশন বেঞ্চ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে নির্দেশ দিয়েছিল অগস্ট মাসের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করে ফেলতে হবে।
হাই কোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন মামলাকারীরা। নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার নির্দেশের বিরোধিতা করেছিলেন তাঁরা। এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার শীর্ষ আদালতের রায় শোনার পরে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি গৌতম পাল বলেন, ‘‘পর্ষদ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের দিকে তাকিয়ে ছিল। ২৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নতুন নিয়োগ শেষ করতে বলা হয়েছিল। আমরা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। বোর্ড খুশি। এত শিক্ষকের চাকরি যাওয়া ঠিক নয়। বোর্ডের তরফে যে যুক্তি দেওয়া হয়েছিল, সুপ্রিম কোর্টে তা মান্যতা পেয়েছে।’’ তিনি জানান, ওই ৩২ হাজার জন স্থায়ী শিক্ষক হিসাবেই কাজ চালিয়ে যাবেন।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে প্রাথমিকে নিয়োগ হয়েছিল মোট ৪২,৫০০। এর মধ্যে প্রশিক্ষিত (শিক্ষণের ডিগ্রি বা ডিএলএড থাকা) ৬৫০০ জনকে নিয়ে কোনও বিতর্ক নেই। বাকি ৩৬ হাজার প্রশিক্ষণহীন প্রাথমিক শিক্ষকের নিয়োগ বাতিল করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় জানান। নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগের মামলায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দেন নতুন করে ইন্টারভিউয়ে পাশ করলে ওই শিক্ষকেরা আবার চাকরি ফিরে পাবেন। না হলে চাকরি খোয়াতে হবে। পরে মামলাকারীদের আইনজীবী আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানান, প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের আসল সংখ্যা ৩০ হাজার ১৮৫। ৩৬ হাজার নয়। লেখায় ভুল (টাইপোগ্রাফিক্যাল এরর) হয়েছে। এর পর রায় সংশোধন করা হয়।
প্রিয়ঙ্কা নস্কর-সহ ১৪০ জন চাকরিপ্রার্থী ২০১৬ সালের প্রাথমিকে নিয়োগ নিয়ে মামলা করেছিলেন। তাঁদের আইনজীবী আদালতে জানান, এই মামলাকারীদের থেকে কম নম্বর পেয়ে প্রশিক্ষণহীন অনেকেই চাকরি পেয়েছেন। ওই মামলাতেই উঠে আসে ইন্টারভিউ বিতর্ক। অভিযোগ ওঠে, নিয়ম অনুযায়ী ইন্টারভিউয়ে অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট নেওয়ার কথা থাকলেও বহু ক্ষেত্রে তা নেওয়া হয়নি। বিভিন্ন জেলায় যাঁরা ইন্টারভিউ নিয়েছিলেন, তাঁদের তলব করে গোপন জবানবন্দিও নথিবদ্ধ করেছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তার ভিত্তিতেই চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু শুক্রবার বিচারপতি জেকে মহেশ্বরী এবং কেভি বিশ্বনাথনকে নিয়ে গঠিত সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ খারিজ করে দিয়েছে। অর্থাৎ, ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষককে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে হবে না।