সুখেন্দুশেখর রায়। —ফাইল ছবি।
আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে মহিলারা ‘মধ্যরাত দখলের’ কর্মসূচি নিয়েছেন কলকাতা থেকে জেলায় জেলায়। সেই আহ্বান কার্যত সংক্রমণের আকার নিয়েছে। মঙ্গলবার বেশি রাতে এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে পোস্ট করে রাজ্যসভায় তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় ঘোষণা করেছেন বুধবারের কর্মসূচিতে তিনিও যোগ দেবেন। যা নিয়ে কার্যত তোলপাড় পড়ে গিয়েছে তৃণমূলের অন্দরে।
সুখেন্দু তাঁর পোস্টে মঙ্গলবার রাতে লিখেছেন, “কালকে আমিও প্রতিবাদে যোগ দেব। কেন না লক্ষ লক্ষ বাঙালির মতো আমিও এক জন মেয়ের বাবা, নাতনির দাদু।” সুখেন্দু আরও লিখেছেন, “আমাদের এ বিষয়ে সরব হতে হবে। মেয়েদের বিরুদ্ধে হিংসা অনেক হয়েছে। চলুন সংঘবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ করতে হবে। যা-ই হোক না কেন।”
সুখেন্দু শুধু রাজ্যসভায় তৃণমূলের সাংসদ নন, তিনি তৃণমূলের মুখপত্রের সম্পাদকও বটে। সাধারণ ভাবে কোনও রাজনৈতিক দলের মুখপত্র বা তার সম্পাদক যা বলছেন, তাকেই দলের রাজনৈতিক লাইন হিসাবে ধরা হয়। যদিও সুখেন্দুর পোস্টে রাজনৈতিক পরিচয়ের ঊর্ধ্বে গিয়ে ‘বাবা’ এবং ‘দাদু’র পরিচয়ই গুরুত্ব পেয়েছে।
বুধবার মহিলারা যে ‘রাত দখলের’ কর্মসূচি নিয়েছেন, তা নিয়ে তৃণমূল সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করেছে। কারণ, অনেক জায়গাতেই তৃণমূল নেতাদের বাড়ির লোকেরাই সেই কর্মসূচিকে সফল করতে প্রচারে নেমেছেন। সুখেন্দুই প্রথম বড় নেতা, যিনি নিজে প্রতিবাদে যোগ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন।
যদিও বিজেপি এটিকে তৃণমূলের কৌশল হিসাবে দেখাতে চেয়েছে। কেন্দ্রীয় বিজেপির তরফে রাজ্যের পর্যবেক্ষক তথা আইটি সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা অমিত মালবীয়ের বক্তব্য, সুখেন্দুশেখরকে আন্দোলনে পাঠিয়ে আসলে তৃণমূল তার দখল নেওয়ার ছক করেছে। তৃণমূলের একটা বড় অংশ রাত দখলের আন্দোলনের আহ্বানকে সমালোচনায় বিদ্ধ করেছেন। যেমন কুণাল ঘোষ লিখেছেন, “মনে রাখুন, রাত মহিলাদের দখলেই থাকে বাংলায়। অসংখ্য মা, বোন বিভিন্ন পেশায় রাতভর কাজ করেন। অনেকে ভোররাত, মাঝরাতে কত দূর থেকে যাতায়াত করেন। বিচ্ছিন্ন খারাপ ঘটনা দিয়ে সার্বিক ভাবে বাংলাকে ছোট যারা করছে, তারা অরাজনীতির মোড়কে রাজনীতি করছে। ভোটে হারা অতৃপ্ত আত্মাগুলোর আবেগের অভিনয় চলছে। এদের মুখোশ নয়, মুখ দেখে বিচার করুন।”
একই সঙ্গে কুণাল সিপিএম জমানায় বাংলার বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা এবং সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে যা ঘটছে সে কথারও উল্লেখ করেছেন। সে দিক থেকে কুণাল এবং সুখেন্দুর পোস্ট ভিন্ন মেরুর। তৃণমূলের মধ্যে এই দ্বিমত কী অভিঘাত তৈরি করে বুধবার, সেটাই দেখার।