R G Kar Case Hearing

সিভিক নিয়োগ নিয়ে ছ’টি সুপ্রিম প্রশ্নের জবাব মঙ্গলে দিতে হবে রাজ্যকে, তদন্ত রিপোর্ট জমা দেবে সিবিআই

সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগকে ‘রাজনৈতিক স্বজনপোষণের সুন্দর পন্থা’ আখ্যা দিয়ে ছ’টি প্রশ্ন তুলেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি। মঙ্গলবারের শুনানিতে সেই সব প্রশ্নেরই জবাব দিতে হবে রাজ্য সরকারকে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২৪ ১৯:৫৯
R G Kar Case: State government will answer six questions of the Supreme Court on the appointment of civic volunteers

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

হাসপাতাল বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো জায়গায় সিভিক ভলান্টিয়ার দিয়ে নিরাপত্তার দায়িত্ব সামলানোর বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে প্রশ্নের মুখে পড়েছিল রাজ্য সরকার। সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগকে ‘রাজনৈতিক স্বজনপোষণের সুন্দর পন্থা’ আখ্যা দিয়ে ছ’টি প্রশ্ন তুলেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর মামলার শুনানিতে সেই সব প্রশ্নেরই জবাব দিতে হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে। সেই সঙ্গে সিবিআইকে তদন্তের অগ্রগতির রিপোর্টও জমা দিতে হবে শীর্ষ আদালতে।

Advertisement

গত ১৫ অক্টোবর আরজি কর মামলার শুনানি ছিল সুপ্রিম কোর্টে। ওই শুনানিতে ডাক্তারদের সংগঠনের তরফে অভিযোগ ছিল, ‘রাত্তিরের সাথী’ প্রকল্পের মাধ্যমে হাসপাতালের নিরাপত্তায় সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ করছে রাজ্য সরকার। তাদের আপত্তির কারণ ছিল, আরজি করে মহিলা চিকিৎসক-পড়ুয়াকে ধর্ষণ-খুনের মামলায় যাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তিনি এক জন সিভিক ভলান্টিয়ার। হাসপাতালে দায়িত্বেও ছিলেন তিনি। এর পরেও কেন সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগে জোর দেওয়া হচ্ছে, সেই প্রশ্ন তুলেছিল ডাক্তারদের সংগঠন। তার প্রেক্ষিতে রাজ্য সরকারের উদ্দেশে আধ ডজন প্রশ্ন তুলেছিলেন শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি। তাঁর প্রশ্ন ছিল—

এক, কোন আইনের ক্ষমতাবলে পশ্চিমবঙ্গে সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ করা হচ্ছে?

দুই, কী পদ্ধতিতে নিয়োগ হয়?

তিন, তাঁদের যোগ্যতামান কী?

চার, তাঁদের আগে কোনও অপরাধের ইতিহাস রয়েছে কি না, তা প্রক্রিয়ায় যাচাই করা হয়?

পাঁচ, কোন কোন প্রতিষ্ঠানে তাঁদের নিয়োগ করা হচ্ছে?

ছয়, তাঁদের বেতন কী ভাবে দেওয়া হয় ও তার জন্য কত অর্থ বরাদ্দ করা হয়?

মঙ্গলবার অর্থাৎ ৫ নভেম্বরের শুনানিতে রাজ্য সরকারকে এই সব প্রশ্নেরই জবাব হলফনামা আকারে জমা দিতে হবে। তবে আগের শুনানিতেই প্রধান বিচারপতি স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, হাসপাতাল ও স্কুলের মতো সংবেদনশীল জায়গায় সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়োগ করা যাবে না। ঘটনাচক্রে, ১০ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির পদ থেকে অবসর গ্রহণ করবেন চন্দ্রচূড়। আগামী ৯ এবং ১০ তারিখ যথাক্রমে শনি ও রবিবার হওয়ায় শুক্রবারই শেষ বার তাঁর বেঞ্চ বসবে। সেই ভাবে দেখলে, মঙ্গলবারই শেষ বার আরজি কর মামলা শুনবেন চন্দ্রচূড়। যদি না বুধ, বৃহস্পতি বা শুক্রবারও মামলা শুনতে চান তিনি। উল্লেখ্য, আরজি করে মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর প্রধান বিচারপতিই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই মামলা গ্রহণ করেছিলেন।

আগের শুনানিতে রাজ্য সরকার জানিয়েছিল, হাসপাতালে রোগীকল্যাণ সমিতি পুনর্গঠন করছে তারা। সেই সঙ্গে হাসপাতালের কাজকর্মে আরও স্বচ্ছতা আনতে ‘সার্বিক হাসপাতাল পরিচালন ব্যবস্থা’ (ইন্টিগ্রেটেড হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) চালু করা হচ্ছে বলেও জানানো হয়েছিল। সেই ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে— অনলাইনে ওপিডি টিকিট বুকিং, ই-প্রেসক্রিপশন, অনলাইন রেফারাল সিস্টেম। সেই প্রক্রিয়া কত দূর এগোল, তা-ও মঙ্গলবারের শুনানিতে রাজ্য সরকারকে জানাতে হবে সুপ্রিম কোর্টে। কোথায় কত শয্যা খালি, কোন হাসপাতালে কী ধরনের চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়া যায় এবং কোনও হাসপাতালের নির্দিষ্ট একটি বিভাগে কোনও চিকিৎসক রয়েছেন কি না, তা জানানোর ব্যবস্থা চালু করার নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। সেই ব্যবস্থা চালু হয়েছে কি না, শীর্ষ আদালতে সে কথাও জানাতে হবে রাজ্যকে।

আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে দু’টি বিষয়ে মামলা চলছে। একটি হল, মহিলা চিকিৎসক-পড়ুয়াকে ধর্ষণ ও খুনের মামলা। অন্যটি, আর্থিক দুর্নীতির মামলা। এই দু’টিরই তদন্ত করছে সিবিআই। মঙ্গলবার ওই দু’টি বিষয়ে রিপোর্ট জমা দিতে হবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে। প্রসঙ্গত, সোমবারই দু’টি মামলারই শুনানি হয়েছে নিম্ন আদালতে। ধর্ষণ-খুনের মামলায় আগেই চার্জশিট জমা দিয়েছিল সিবিআই। তাতে ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারকে একমাত্র অভিযুক্ত হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। সোমবার সেই মামলায় চার্জ গঠন হয়েছে শিয়ালদহ আদালতে। অন্য দিকে, আলিপুর আদালতে আর্থিক দুর্নীতির মামলাটি উঠেছিল। সেখানে ‘গভীর ষড়যন্ত্রের’ তত্ত্ব আওড়েছে সিবিআই।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মতো মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় সরকারও জাতীয় টাস্ক ফোর্স নিয়ে রিপোর্ট জমা দেবে। আরজি করের ঘটনার পর চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়ে ১১ সদস্যের জাতীয় টাস্ক ফোর্স গঠন করে দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। টাস্ক ফোর্সের মূল লক্ষ্য হবে— চিকিৎসা পরিষেবায় যুক্ত নারী-পুরুষদের উপরে হিংসার ঘটনা রোধ এবং লিঙ্গ-বৈষম্য দূর করা, হাসপাতালে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করা। তা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রকে পরামর্শ দিতে বলেছে সুপ্রিম কোর্ট।

আরও পড়ুন
Advertisement