অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন শেষ হল। সোমবার শিয়ালদহ আদালত চত্বরে। ছবি: সংগৃহীত।
শিয়ালদহ আদালতে আরজি করে চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় একমাত্র অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের প্রক্রিয়া শেষ হল। জানিয়ে দেওয়া হল, এক সপ্তাহ পর ওই মামলার বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হতে চলেছে।
সোমবার দুপুর ২টো নাগাদ আরজি কর মামলায় ধর্ষণ এবং খুনের একাধিক ধারায় চার্জ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এই প্রতিবেদন প্রকাশ করার কিছু ক্ষণ আগেই, ঘটনার ৮৭ দিন এবং সিবিআইয়ের চার্জশিট পেশের ২৮ দিনের মাথায় ওই মামলায় চার্জ গঠন সম্পন্ন হয়েছে। এর পর শুরু হবে বিচারপ্রক্রিয়া। আদালত জানিয়েছে, আগামী ১১ নভেম্বর থেকে ওই মামলায় শুনানি শুরু হতে চলেছে। শুনানি চলবে রোজ। যদিও সিবিআইয়ের আইনজীবী জানিয়েছেন, প্রাথমিক চার্জশিটের ভিত্তিতে আপাতত বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত একজনের নামেই চার্জশিট গঠন হয়েছে। বাকিদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এবং প্ররোচনার অভিযোগের ভিত্তিতে এখনও তদন্ত চলছে। ঘটনার পরেই টালা থানার তৎকালীন ওসিকে ফোন করেছিলেন আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। সে সবও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সোমবার দুপুরেই শিয়ালদহ আদালতে নিয়ে আসা হয় আরজি করে চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের মামলায় অভিযুক্তকে। চারদিকে ছিল নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ঘেরাটোপ। তার মাঝেই প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার থেকে শিয়ালদহ আদালতে নিয়ে আসা হয় ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারকে। উল্লেখ্য, মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর মামলার শুনানি রয়েছে। তার আগেই সোমবার আরজি কর-কাণ্ডে দুই মামলার শুনানি চলছে দুই আদালতে। আলিপুরে সিবিআই বিশেষ আদালতে আরজি করে আর্থিক দুর্নীতি মামলার শুনানি চলেছে। অন্য দিকে, শিয়ালদহ আদালতে শেষ হল আরজি করে চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় একমাত্র অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের প্রক্রিয়া।
তবে আদালত সূত্রে খবর, বিচারকের সামনে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন আরজি কর-কাণ্ডে একমাত্র অভিযুক্ত। শিয়ালদহ আদালত থেকে বেরোনোর সময়ে মুখ খোলেন ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার। সংবাদমাধ্যম এবং উপস্থিত মানুষজনের সামনেই চিৎকার করে বলেন, ‘‘আমি এত দিন চুপচাপ ছিলাম। কিন্তু আমি নির্দোষ। আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। আমাকে ডিপার্টমেন্ট চুপ থাকতে বলেছে।’’
গত ৯ অগস্ট আরজি করের জরুরি বিভাগের চারতলায় সেমিনার হল থেকে মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়েছিল। তাঁকে ধর্ষণ এবং খুনের অভিযোগে সেই রাতেই কলকাতা পুলিশের ফোর্থ ব্যাটালিয়নের ব্যারাক থেকে গ্রেফতার হন অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার। কলকাতা পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করেছিল। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে পরে সেই মামলার তদন্তভার যায় সিবিআইয়ের হাতে। ঘটনার ৫৮ দিন পর গত ৭ অক্টোবর সিবিআই এই মামলায় প্রথম চার্জশিট জমা দিয়েছিল। চার্জশিটে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা জানিয়েছিল, ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারই যে আরজি করে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় জড়িত, তার একাধিক প্রমাণ পেয়েছেন তদন্তকারীরা। সংগৃহীত বয়ান, ভিডিয়ো এবং ফরেন্সিক বা সায়েন্টিফিক রিপোর্টের ভিত্তিতে ধৃতের বিরুদ্ধে মোট ১১টি ‘প্রমাণ’-এর উল্লেখ ছিল সেই চার্জশিটে। পাশাপাশি, সিবিআই চার্জশিটে ছিল আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলের নামও। চার্জশিটে লেখা হয়েছিল, গোটা ঘটনার নেপথ্যে কোনও বৃহত্তর ষড়যন্ত্র রয়েছে কি না, কিংবা আর কেউ জড়িত কি না, সেই দিকগুলি খতিয়ে দেখতে সন্দীপ এবং অভিজিতের বিরুদ্ধে তদন্ত জারি রয়েছে। সেই তদন্ত শেষ হলেই অতিরিক্ত চার্জশিট জমা দেওয়া হবে বলে জানায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দল।