লাভপুরে প্রচার তৃণমূল বিধায়ক অভিজিৎ সিংহের। — নিজস্ব চিত্র।
গণতন্ত্রের শ্রেষ্ঠ উৎসবে অংশগ্রহণ করুন— নিজের দল এবং বিরোধীদের এই বার্তা দিয়ে রবিবার গাড়িতে চড়ে মাইক হাতে প্রচার চালালেন বীরভূমের লাভপুরের বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ। এলাকায় তিনি বেশি পরিচিত রানা সিংহ নামেই। ঘটনাচক্রে শনিবার লাভপুরে পেট্রোল পাম্পের কাছে বিজেপি কর্মীদের মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও সেই ঘটনায় তৃণমূলের হাত থাকার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন অভিজিৎ। তাঁর এই উদ্যোগকে ‘নাটক’ বলেই কটাক্ষ করেছে বিজেপি।
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্য জুড়েই বহু আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিল তৃণমূল। তার মধ্যে এগিয়ে ছিল অনুব্রত মণ্ডলের জেলা বীরভূম। ২০১৮ সালে ওই জেলা পরিষদের ৪৪টি আসনের সব কটিই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিলেন তৃণমূল প্রার্থীরা। এ নিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ করেছিলেন বিরোধীরা। পাঁচ বছর পর আবার এক বার পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে রাজ্য। এ বার অবশ্য ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার বহু আগে থেকেই শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের বার্তা দিয়ে চলেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মনোনয়নপত্র পেশে ‘বিরোধীদের ভরসা জোগাতে’ সেই বীরভূমেই এ বার প্রচার চালাতে দেখা গেল তৃণমূল বিধায়ককে। গাড়িতে চড়ে গ্রামে ঘুরে ঘুরে মাইকে এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার বার্তা দিচ্ছেন তিনি।
অভিজিতের কথায়, ‘‘বিধায়ক হিসাবে আমার দায়িত্ব এলাকায় যাতে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় থাকে। তৃণমূলের এক জন কর্মী হিসাবে দলের নির্দেশ পালন করা আমার কর্তব্য। তাই লাভপুর এলাকায় ঘুরে সব রাজনৈতিক দলের কাছে আবেদন করছি, গণতন্ত্রের এই শ্রেষ্ঠ উৎসবে তাঁরা অংশগ্রহণ করুন। যার যেখানে যেমন সাংগঠনিক ক্ষমতা আছে, যে যেখানে যেমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তেমন প্রার্থী দিন। আমার দলের কর্মী-সমর্থকদের কাছেও আবেদন করছি, কোথাও কোনও বাধা সৃষ্টি করা যাবে না। কোথাও অশান্তি করা যাবে না। প্রশাসনকেও বলছি, যাঁরা উচ্ছৃঙ্খলতা চালাবেন তাঁদের যেন কঠোর হাতে দমন করা হয়।’’ শনিবার এই লাভপুরেই মনোনয়ন জমা দিতে যাওয়ার সময় বিজেপি প্রার্থীদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। পুলিশ তৃণমূলের তিন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করে। সোমবার এই বিরোধী প্রার্থীদের আবার মনোনয়ন জমা দিতে যাওয়ার কথা।
অভিজিতের উদ্যোগকে অবশ্য ‘নাটক’ বলেই কটাক্ষ করছে বিজেপি। বিজেপির বোলপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডল বলেন, ‘‘এ সব তৃণমূলের নাটক। যদি তারা সত্যিই এটা চাইত তা হলে বিজেপি কর্মীদের মারধর করত না। ওরা মানুষের চোখে ভাল সাজার জন্যে এ সব কাজ করছে। কিন্তু মানুষ সব জানেন, সব বোঝেন— এর উত্তর ভোটেই দেবেন মানুষ।’’
গত শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন পর্ব। বীরভূমে প্রথম দু’দিন মিলিয়ে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন বিজেপির ৫১১ জন, সিপিএমের ১৯৮ জন, কংগ্রেসের ৭৩ জন এবং তৃণমূলের ৫ জন। পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে বিজেপি ১০৬টি, সিপিএম ২৭টি এবং কংগ্রেস ১৪টি মনোনয়ন জমা দিয়েছে। জেলা পরিষদ স্তরে সিপিএম দিয়েছে ৩২টি। বিজেপি ৭টি এবং কংগ্রেস ২টি আসনে। জেলা পরিষদ এবং পঞ্চায়েত সমিতিতে শাসকদলের কোনও মনোনয়ন এখনও জমা পড়েনি।