অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (বাঁ দিকে)। শান্তনু ঠাকুর (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
‘তৃণমূলে নবজোয়ার’ কর্মসূচি নিয়ে রবিবার ঠাকুরনগরে আসার কথা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তার আগে পাল্টা প্রস্তুতি নিল বিজেপিও। নেতৃত্বে রয়েছেন কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী তথা মতুয়া মহাসঙ্ঘের নেতা শান্তনু ঠাকুর। অভিষেককে ঠাকুরবাড়িতে ঢুকতেই দেবেন না বলে স্লোগান তুলেছেন বনগাঁর বিজেপি সাংসদ। অভিষেকের সভার আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে ‘ধিক্কার’ পোস্টারেও ছেয়ে গিয়েছে ঠাকুরবাড়ি এলাকা। শান্তনুর মন্তব্য, ‘‘মতুয়াদের ভাবাবেগে আঘাত হলে প্রতিবাদ তো হবেই।’’ বস্তুত, অভিষেকের সভার আগে ঠাকুরনগরের মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে রাজনৈতিক চাপান-উতোর তুঙ্গে। এক দিকে প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ তথা ঠাকুরবাড়ির প্রতিনিধি মমতাবালা ঠাকুর যখন অভিষেককে স্বাগত জানিয়েছেন, তখনই ‘অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘ’ আয়োজিত রথযাত্রার প্রস্তুতি সভার মঞ্চ থেকে ‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঠাকুরবাড়ি প্রবেশ করতে দিচ্ছি না, দেব না’ বলে স্লোগান তুলেছেন বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু।
তৃণমূল সূত্রে খবর, রবিবার দুপুর ৩টেয় ঠাকুরবাড়িতে আসার কথা অভিষেকের। এর মধ্যে শান্তনুর নেতৃত্বে ‘অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘ’-এর পক্ষ থেকে রথযাত্রার প্রস্তুতিসভা শুরু হয়েছে। ঠাকুরবাড়িতে এই জোড়া কর্মসূচির জন্য প্রচুর মানুষ জড়ো হয়েছেন। পুলিশি নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছে ঠাকুরবাড়ি। কিন্তু রবিবার সকালে ঠাকুরবাড়ির নাটমন্দির থেকে পুলিশকর্মীদের বাইরে বার করে দেন শান্তনু। ঠাকুরবাড়ি এলাকায় এত পুলিশ কেন, এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন শান্তনু। তিনি পুলিশকর্মীদের সেখান থাকতে বারণ করেন। বিজেপি সাংসদের কথায়, ‘‘ঠাকুরবাড়িতে কেউ প্রণাম করতে এলে কি ১০ হাজার পুলিশ মোতায়েন করতে হয়?’’ নাম না করেই তিনি অভিষেককে কটাক্ষ করেন। বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও ঠাকুরবাড়িতে এসেছেন। কিন্তু তাঁদের এত নিরাপত্তা দেখা যায়নি। বিজেপি সাংসদের কথায়, ‘‘ঠাকুরবাড়ি মতুয়াদের বড় ধাম। আবার এখানে আমরা থাকিও। তাই আমার বাড়িতে যদি এত পুলিশ এসে আমার লোকজনকে বিরক্ত করে, আমি তাদের সঙ্গে সহজ ভাষায় কথা বলব না, এটাই স্বাভাবিক।’’
শান্তনুর দাবি, রথযাত্রা উপলক্ষে ‘অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘ’-এর কর্মসূচির ঘোষণা হয়েছে আগেই। তাঁরা জানতেনও না যে অভিষেক আসবেন। তিনি বলেন, ‘‘যে কেউ ঠাকুরবাড়িতে আসতে পারেন, পুজো দিতে পারেন। এখানে প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসেছেন। কিন্তু এখন যে পরিমাণ পুলিশ দেখছি, তা তাঁদের আসার সময় দেখিনি। জানি না, কে আসছে, আর ঠাকুরবাড়িতে কিসের ভয়? পঞ্চায়েত ভোট আসছে, তাই? পুলিশ ছাড়া যদি সমস্যা হয়, তা হলে আসার দরকারটাই বা কী? এটা ঠাকুরবাড়ি, থানা নয়।’’
প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ মমতাবালা অবশ্য মনে করছেন, মতুয়া মহাসঙ্ঘের অনুষ্ঠানের নাম করে বিজেপির কর্মসূচি নিয়ে নেমেছেন শান্তনু। তিনি বলেন, ‘‘এর আগে প্রধানমন্ত্রী বা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যখন ঠাকুরবাড়িতে এসেছেন, তখন তো আমরা এমন অসভ্যতা করিনি! অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আসবেন বলে যে ভাবে বাধা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন ওঁরা, তা রাজনৈতিক ভাবে পরিকল্পিত।’’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে পোস্টার নিয়েও সরব হয়েছেন তিনি। বলেন, ‘‘তিনি মুখ ফস্কে একটা ভুল বলে ফেলেছিলেন। তার জন্য ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছেন বুঝতে পারার সঙ্গে সঙ্গে। এটা নিয়ে রাজনীতি করা চেষ্টা চলছে। কিন্তু তা সফল হবে না।’’
বাংলায় প্রায় ৩৯টি বিধানসভা আসনে ২০ শতাংশের বেশি মতুয়া ভোট রয়েছে। এই আসনগুলি রয়েছে নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব বর্ধমান জেলায়। উত্তর ২৪ পরগনায় প্রায় ৯টি বিধানসভা আসনে মতুয়া ভোটের প্রভাব বেশি। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বনগাঁ লোকসভা থেকে জয়ী হন প্রয়াত বড়মার নাতি শান্তনু ঠাকুর। মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি সাংসদ হওয়ার পর দীর্ঘ সময় কেটে গেলেও নাগরিকত্ব আইন কার্যকর করতে পারেনি মোদী সরকার। এ নিয়ে লাগাতার মতুয়াদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে শান্তনুকে। তিনি নিজেও এই নিয়ে একাধিক বার উষ্মাপ্রকাশ করেছেন। বিক্ষোভের মুখে পড়ে নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করার জন্য অমিত শাহকে চিঠিও লিখেছেন। সম্প্রতি আবার নাগরিকত্বের বিষয়টি উস্কে দিয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। অন্য দিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, মতুয়াদের আলাদা করে নাগরিকত্বের প্রয়োজন নেই। তাঁরা এ দেশেরই নাগরিক। পঞ্চায়েত ভোটকে সামনে রেখে মতুয়া ভোট টানার চেষ্টা করছে তৃণমূল। বিজেপি চাইছে ওই ভোট ধরে রাখতে। তা ছাড়া, পঞ্চায়েত ভোটের বছর খানেকের মধ্যেই চলে আসবে লোকসভা ভোট। সে দিকেও নজর রয়েছে দুই দলেরই।