বোলপুর মহকুমাশাসকের দফতরে মনোনয়ন জমা দিতে যাচ্ছেন কাজল শেখ (ডান দিকে)। — নিজস্ব চিত্র।
বীরভূমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৈরি করে দেওয়া দলের কোর কমিটিতে আগেই ঠাঁই পেয়েছিলেন নানুরের তৃণমূল নেতা কাজল শেখ। এ বার তাঁকে জেলা পরিষদ আসনে প্রার্থী করল তৃণমূল। বুধবার বোলপুর মহকুমাশাসকের দফতরে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তিনি। দলীয় রাজনীতিতে তিনি যাঁর কট্টর বিরোধী, সেই বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল এখন গরু পাচারকাণ্ডে গ্রেফতার হয়ে তিহাড় জেলে বন্দি। বুধবার যদিও মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর সেই অনুব্রতকে তাঁর ‘রাজনৈতিক গুরু’ আখ্যা দিয়েছেন কাজল।
কাজল প্রার্থী হলেও নানুরের অন্যতম দাপুটে তৃণমূল নেতা কেরিম খানের নাম নেই তৃণমূলের জেলা পরিষদের প্রার্থিতালিকায়। এলাকায় অনুব্রত ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত কেরিম। পর পর দু’বার জেলা পরিষদের সদস্য ছিলেন তিনি। বীরভূম জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষও ছিলেন। কেরিমের নাম প্রার্থিতালিকায় না থাকলেও জেলা পরিষদ আসনে প্রার্থী হিসাবে বুধবার মনোনয়নপত্র জমা দিলেন কাজল। তবে কি বীরভূমে অনুব্রত-বিরোধী গোষ্ঠীই এখন শক্তিশালী? কাজল যদিও বলছেন, ‘‘অনুব্রত মণ্ডল আমার রাজনৈতিক গুরু। আমার অভিভাবক। এখনও বীরভূম জেলায় তৃণমূলের যে সংগঠন রয়েছে তা তিনিই তৈরি করেছেন। টিম-অনুব্রত জেলায় কাজ করছে। আমি সেই টিমের সদস্য। আমি অনুগত সৈনিক। ওঁকে নিয়ে আমার কাছে কোনও কথা না বলাই ভাল। দল প্রয়োজন মনে করেছে বলে আমি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি। দলের স্বার্থে আমি জীবন পর্যন্ত দিতে পারি।’’
নির্বাচনের আগে অনুব্রতই এক বার বলেছিলেন, ‘‘উন্নয়ন রাস্তায় দাঁড়িয়ে রয়েছে।’’ কাজলের যদিও দাবি, এখন আর উন্নয়ন রাস্তায় দাঁড়িয়ে নেই, বাড়িতে বাড়িতে চলে গিয়েছে। পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘‘গুরু যে দাওয়াই দিয়ে গিয়েছেন তাতে অবশ্যই কাজ হবে। যাঁরা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করবেন, যাঁরা মানুষে মানুষে ভেদাভেদ করবেন, মানুষকে অর্থের লোভ দেখিয়ে ভুল পথে চালনা করতে চাইবেন, তাঁদের সঙ্গে খেলা হবে।’’
বুধবার বোলপুর মহকুমাশাসকের অফিসে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন সিউড়ির বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী। তিনি বীরভূম জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতিও। গত পঞ্চায়েত বীরভূম জেলা পরিষদে মোট আসন ছিল ৪২টি। এ বার সেই আসন সংখ্যা ১০টি বেড়েছে হয়েছে ৫২টি আসন। সব আসনেই বেশ কয়েকটি নতুন মুখ রয়েছে তৃণমূলের প্রার্থিতালিকায়। এ নিয়ে বিকাশের বক্তব্য, ‘‘বীরভূমে এ বারের জেলা পরিষদের প্রার্থিতালিকায় অনেক নতুন এবং অনেক পুরনো মুখ আছেন। নতুন এবং পুরনো মিলিয়ে আমরা চলব। বীরভূম জেলায় তৃণমূলের ভিত তৈরি করেছেন অনুব্রত মণ্ডল। সেই অবদান ভুললে চলবে না। সেই ভিত যিনি তৈরি করেছেন তাঁকে আমরা শ্রদ্ধা জানাই।’