বিপদ- পথ
Accidental Death

কড়া পুলিশ, রাশ নেই মৃত্যুতে

জেলার প্রায় কমবেশি সব থানা এলাকাতেই দুর্ঘটনা ঘটছে। মৃত্যুও থেমে নেই। তবুও হেলমেটছাড়া বাইকে সওয়ার হওয়া, দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানো চলছেই।

Advertisement
সমীরণ পাণ্ডে
শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৬:৫৫
অধিকাংশ বাইক আরোহী হেলমেটহীন।

অধিকাংশ বাইক আরোহী হেলমেটহীন। ছবি: সুজিত মাহাতো 

পথ নিরাপত্তায় বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হলেও দুর্ঘটনায় রাশ পড়ছে না পুরুলিয়া জেলায়। জেলার প্রায় কমবেশি সব থানা এলাকাতেই দুর্ঘটনা ঘটছে। মৃত্যুও থেমে নেই। তবুও হেলমেটছাড়া বাইকে সওয়ার হওয়া, দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানো চলছেই।

Advertisement

পুলিশ সূত্রে খবর, জেলার মধ্যে সব থেকে বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে বলরামপুর, হুড়া, নিতুড়িয়া, বরাবাজার, পুরুলিয়া মফস্‌সল, রঘুনাথপুর ও টামনা থানা এলাকায়। পুলিশের দেওয়া পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ২০২০ সাল থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত দুর্ঘটনায় সব থেকে বেশি প্রাণহানি হয়েছে পুরুলিয়া মফসসল থানা এলাকায় (১২৪ জন)। এরপরেই রয়েছে হুড়া ও রঘুনাথপুর থানা (৫৬ জন)। বলরামপুর থানা এলাকায় ওই সময়ের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৪৫ জনের। নিতুড়িয়া থানা এলাকায় দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন ৪৪ জন।

ইতিমধ্যে জেলা পুলিশ দুর্ঘটনাপ্রবণ বেশ কয়েকটি এলাকা চিহ্নিত করেছে। সেগুলি হল: আড়শা থানার কোরাং, বলরামপুর থানার ছোট উরমা, নামশোল, রাঙ্গাডি, হুড়া থানার লধুড়কা, পালগা, নিমতলা, পুরুলিয়া মফস্‌সল থানার বিড়গিড়ি, চাকড়া, আইমুণ্ডি, রুদড়া, চাষ রোড, পাড়া থানার কোলডি, ঝাঁপড়া, পুঞ্চা থানার শ্রীরামঘুটু এবং টামনা থানার মাগুড়িয়া ও দামদা। এর মধ্যে অতিরিক্ত দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা হল পুরুলিয়া মফস্‌সল থানার আইমুণ্ডি ও চাকড়া। ওই সব এলাকায় যান নিয়ন্ত্রণ ও সতর্কতামূলক বেশ কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। চালকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে পুলিশ নিয়ম করে ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ কর্মসূচি নিচ্ছে। বিনা হেলমেটের বাইক আরোহী ও ট্র্যাফিক আইন ভঙ্গকারীদের জরিমানা করা চলছে। তবুও পথ দুর্ঘটনা কমছে না কেন?

জেলা পুলিশের ডিএসপি (ট্র্যাফিক) সুমনকান্তি ঘোষ বলেন, ‘‘মানুষ সচেতন না হলে দুর্ঘটনা এড়ানো কিছুতেই সম্ভব নয়। তবুও আমরা বিপজ্জনক ভাবে গাড়ি চালানো, মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো ও দু’জনের বেশি বাইকে যাতায়াত করলে এবং ট্র্যাফিক আইন ভঙ্গ করলে জরিমানা করছি। প্রয়োজনে জরিমানার পরিমাণ আরও বাড়াতে হবে। না হলে জীবনহানি কমানো যাবে না।’’

পুরুলিয়া জেলা বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক প্রতিভারঞ্জন সেনগুপ্ত মানছেন, ‘‘অনেক সময় দু’টি বাস ছাড়ার মধ্যে সময়ের ব্যবধান কম থাকে। কোনও কারণে একটি বাস রাস্তায় দেরি করে ফেললে সময়ে স্ট্যান্ডে পৌঁছতে জোরে গাড়ি চালাতে গিয়েও দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। তবে জোরে গাড়ি না চালানোর জন্য আমরা মাইকে প্রচার করছি।’’ তিনি জানান, মত্ত অবস্থায় অনেকে গাড়ি চালাতে গিয়ে বা হেলমেটহীন অবস্থায় বাইক চালাতে গিয়েও দুর্ঘটনায় পড়েন, সবারই সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে।

পুলিশের দিকে পাল্টা আঙুল তুলেছেন বিজেপির রঘুনাথপুরের বিধায়ক বিবেকানন্দ বাউরি। তাঁর অভিযোগ, ‘‘রাস্তায় যান নিয়ন্ত্রণের বদলে কয়লা, বালি, গরু, পাথরের গাড়ি আটকে ‘তোলা’ আদায়ে ব্যস্ত কিছু পুলিশ কর্মী। পুলিশের নাগাল এড়াতে সে সময় দ্রুত গতিতে যাওয়া কিছু গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। আবার পুলিশের জরিমানার নামে জুলুম এড়াতে গিয়ে জোরে গাড়ি চালিয়েও অনেকে দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছেন। ওই সব গাড়ির সামনে পড়ে প্রাণ হারাচ্ছেন নিরীহ মানুষজন। পুলিশের তোলাবাজির কথা মুখ্যমন্ত্রীও স্বীকার করেছেন।’’ পুলিশ অভিযোগ মানেনি। জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, ‘‘করোনা থেকে বন্যার মতো দুর্যোগে মাঠে নেমে শুধু পুলিশই কাজ করে। তাই দু’-একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে সামনে এনে বিজেপির সমগ্র পুলিশ সমাজকে কলঙ্কিত করার মানে হয় না। দুর্ঘটনা রুখতে আমাদের সরকারের আমলে পুলিশ যা যা পদক্ষেপ করেছে, তা আগে কখনও হয়নি।’’ (চলবে)

Advertisement
আরও পড়ুন