বাঁকুড়ায় বৈঠকে প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরা। —নিজস্ব চিত্র।
পর্যালোচনা বৈঠকেও কাটল না জট। রাজ্য সরকারের তরফে আলোচনার কোনও রকম ইঙ্গিত না মেলায় রাজ্য জুড়ে কর্মবিরতি অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করল প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের বাজারগুলিতে বুধবার থেকে আলুর সঙ্কট আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ভিন্রাজ্যে আলু রফতানির ক্ষেত্রে রাজ্যের সীমানাগুলিতে প্রশাসনিক ভাবে বাধা দেওয়ার প্রতিবাদে রবিবার থেকে রাজ্য জুড়ে লাগাতার কর্মবিরতি চালিয়ে যাচ্ছে প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি। এর ফলে রাজ্যের হাতে গোনা দু’-একটি ছাড়া অধিকাংশ হিমঘর থেকে আলু বার করছেন না ব্যবসায়ীরা। এর ফলে মঙ্গলবার থেকেই বাজারগুলিতে আলুর জোগানে ঘাটতি শুরু হয়েছে। চাহিদা থাকলেও জোগান শূন্যে নেমে আসায় ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে খোলা বাজারে আলুর দামও। বিভিন্ন বাজারে আলুর দাম কিলো প্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। কর্মবিরতির ৪৮ ঘণ্টা পর সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য বাঁকুড়ার জয়পুরের একটি বেসরকারি হোটেলে বৈঠকে বসেন প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির রাজ্য নেতৃত্ব। বৈঠকের পর প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি স্পষ্টতই জানিয়ে দেন, রাজ্য সরকার আলোচনায় বসে সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী না হওয়ায় প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির কর্মবিরতি চলতে থাকবে। ওই সমিতির রাজ্য সভাপতি জগৎবন্ধু মণ্ডল বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট সমস্ত দফতরে আমাদের কর্মবিরতির দাবি সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সরকারের তরফে এখনও আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের কোনও আহ্বান আমরা পাইনি। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য জুড়ে শুরু হওয়া আমাদের কর্মবিরতি চলতে থাকবে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘এই কর্মবিরতির জন্য শুধু সাধারণ মানুষই সমস্যায় পড়বেন এমন নয়। আমাদেরও ব্যবসারও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু, এই কর্মবিরতি করতে আমরা বাধ্য হচ্ছি।’’ আলু ব্যবসায়ী সমিতির তরফে জানানো হয়েছে, ভিন্রাজ্যের ব্যবসায়ীদের কাছে তাঁদের লক্ষ লক্ষ টাকা বকেয়া পড়ে রয়েছে। রফতানি বন্ধ হয়ে গেলে সেই অর্থ তাঁরা আদায় করতে পারবেন না। ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রে খবর, রাজ্য সরকারের অবস্থান ও কর্মবিরতি চলাকালীন রাজ্যে আলুবাজারের পরিস্থিতি নিয়ে বুধবার হগলির আরামবাগে আবার পর্যালোচনা বৈঠকে বসবে সংগঠনের রাজ্য নেতৃত্ব।
পশ্চিম মেদিনীপুরেও আলু ব্যবসায়ীরা বাঁকুড়ার ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। আলু ব্যবসায়ী সমিতির শালবনি ইউনিটের সভাপতি তথা রাজ্য কমিটির সদস্য নবকুমার ভুঁইয়া বলেন, ‘‘আজ (মঙ্গলবার) বাঁকুড়া জেলার একটি গেস্ট হাউসে মিটিংয়ে বসা হয়েছিল। সেখানে প্রায় ১৩০ জন উপস্থিত ছিলেন। রাজ্য সরকার আন্দোলন তুলে নেওয়ার পর আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিয়েছেন। কিন্তু সংগঠন চেয়েছে আগে আলোচনা। তার পরে আন্দোলন প্রত্যাহারের বিষয়। আজ (মঙ্গলবার) কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনো যায়নি। বুধবার আবার মিটিং হবে।’’ তিনি জানিয়েছেন মঙ্গলবার ধর্মঘট থাকায় স্টোর থেকে আলু বার হয়নি। রাজ্যে প্রায় ৫০০ কোল্ড স্টোরেজ রয়েছে। সেখানে প্রায় ৬৭ শতাংশ আলু মজুত রয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় কোল্ড স্টোরেজ রয়েছে ৯৪টি।
অন্য দিকে, আলু ব্যবসায়ীদের নিয়ে নতুন সংগঠন গড়ার কথা ভাবছে শাসকদল। আলুর মূল্যবৃদ্ধির পরিস্থিতি দেখে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে তৃণমূলের একটি সূত্রে খবর। এ-ও জানান গিয়েছে, রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী বেচারাম মান্না এবং কৃষিমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারকে ওই সংগঠন গড়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় এটা শাসকদলের তরফে বিভিন্ন উদ্যোগের মধ্যে একটি।