BGBS 2025

পাশে ‘শিল্পোদ্যোগী’ সৌরভ, ফেব্রুয়ারির বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের নান্দীমুখ করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতাই

বৈঠকে উপস্থিত শিল্পপতি সঞ্জীব গোয়েন্‌কা বলেন, ‘‘আমরা দেশের ২২টি রাজ্যে ব্যবসা করি। কিন্তু বাংলার মতো শিল্পবান্ধব পরিবেশ দেশের কোনও রাজ্যে নেই।’’

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২৪ ২১:০০
Preparatory meeting for BGBS 2025 was held on Friday in the presence of CM Mamata Banerjee

বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের প্রস্তুতি বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।

আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের (বিজিবিএস) নান্দীমুখ করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার আলিপুরের ‘সৌজন্য’ গৃহে বিজিবিএসের প্রস্তুতি বৈঠক ছিল। সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের প্রথম সারির শিল্পপতিরা। রাজ্যের ‘ব্র্যান্ডদূত’ হিসাবে বৈঠকে ছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও। তবে তিনি ছিলেন ‘শিল্পোদ্যোগী’ হিসাবেই। ছিলেন কলকাতাস্থিত একাধিক দেশের দূতাবাসের কনসাল জেনারেলরাও। প্রত্যাশিত ভাবেই দেখা যায়নি টলিউড তারকাদের কাউকে। চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গে জড়িত বলতে ছিলেন শুধু আন্তর্জাতিক কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের চেয়ারম্যান তথা পরিচালক গৌতম ঘোষ।

Advertisement

আরজি কর-কাণ্ডের পরবর্তী পরিস্থিতিতে মমতা যে টলিউডের সঙ্গে ‘দূরত্ব’ রচনা করছেন, তা লিখেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। যার অন্যতম ‘ইঙ্গিত’ ছিল শুক্রবার ‘সৌজন্য’ গৃহে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আমন্ত্রিতদের তালিকা। উল্লেখ্য, এই বছর মুখ্যমন্ত্রী মমতা অন্যান্য বছরের মতো ‘বিজয়ী সম্মিলনী’র অনুষ্ঠান করেননি। গত বারও ওই অনুষ্ঠান হয়েছিল আলিপুর সংশোধনাগার জাদুঘরের প্রাঙ্গণে। সেখানে ছিলেন টালিগঞ্জের তারকারা। এ বছর ওই অনুষ্ঠান না হওয়ায় অনেকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, শুক্রবারের অনুষ্ঠান তথা বৈঠকে টলিউড তারকাদের আমন্ত্রণ জানানো হোক। কিন্তু সেই প্রস্তাব নাকচ হয়ে যায়। সেই মতোই শুক্রবার কোনও টলি তারকাকেই ওই অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি।

Preparatory meeting for BGBS 2025 was held on Friday in the presence of CM Mamata Banerjee

শিল্পপতিদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।

তবে প্রশাসনিক মহলের একাংশের বক্তব্য, শুক্রবারের অনুষ্ঠান যে হেতু একেবারেই বাণিজ্য তথা শিল্প সম্মেলনের প্রস্তুতি বৈঠক, তাই সেখানে সিনে তারকাদের আমন্ত্রণ জানানোটা ‘বিধেয়’ নয়। যদিও তার পাল্টা বক্তব্যও শোনা গিয়েছে। যা বলছে, চলচ্চিত্রও তো আসলে একটি ‘শিল্প’ই। সে সব তর্ক-বিতর্ক-প্রতর্কের গণ্ডি পেরিয়ে যা দেখা গিয়েছে, তা হল সিনে দুনিয়ার তারকাদের ‘অনাহূত’ থাকা। টালিগঞ্জের প্রতিনিধি বলতে পরিচালক গৌতম। যিনি বাংলার ছবির দুনিয়া এবং কাজ করার ‘সুপরিবেশ’ নিয়ে বৈঠকে আলোকপাত করলেন। পাশাপাশি, ‘চমক’ হিসাবে জানালেন, কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের জন্য একটি ‘থিম সং’ তৈরি করা হয়েছে। যেটি লিখেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সেই গানের কথা পড়ে শোনান গৌতম। বিদেশি অতিথিদের জন্য তার ইংরেজি অনুবাদটিও পড়ে শোনান।

Preparatory meeting for BGBS 2025 was held on Friday in the presence of CM Mamata Banerjee

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক্স পোস্ট। ছবি: সংগৃহীত।

বৈঠকে উপস্থিত শিল্পপতি সঞ্জীব গোয়েন্‌কা বলেছেন, ‘‘আমরা দেশের ২২টি রাজ্যে ব্যবসা করি। কিন্তু বাংলার মতো শিল্পবান্ধব পরিবেশ দেশের কোনও রাজ্যে নেই।’’ বলেছেন সৌরভও। জানিয়েছেন, তিনি তৃতীয় ইস্পাত কারখানা তৈরি করছেন বাংলায়। সেখানে ২৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছেন। তবে সৌরভের কথায়, ‘‘এখানে যে মাপের শিল্পপতিরা রয়েছেন, তাঁদের তুলনায় আমি কিছুই নই!’’ উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে বিনিয়োগ টানতে মুখ্যমন্ত্রী মমতার মাদ্রিদ সফরে সঙ্গী হয়েছিলেন সৌরভ। সেখানেই প্রথম বিনিয়োগের প্রসঙ্গের অবতারণা করেছিলেন তিনি। কথা বলতে গিয়ে নিজের ক্রিকেটজীবনের কথাও টেনে আনেন সৌরভ। বলেন, ‘‘আমি চিরকাল মাঠে-ময়দানে খেলেছি। টেবিলের উল্টো দিকেই ছিলাম (পড়ুন শ্রমিক)।’’ সেই সূত্রেই পারিশ্রমিকের কথা বলতে গিয়ে হালকা চালে টানেন আইপিএল প্রসঙ্গও। ভারতের প্রাক্তন অধিনায়কের কথায়, ‘‘এখন তো সঞ্জীব (লখনউ সুপার জায়ান্টসের মালিক) দু’মাসের জন্য ঋষভ পন্থকে ২৭ কোটি টাকা দিচ্ছেন!’’ পর ক্ষণেই, ‘‘তবে এটা ভাল।’’

বৈঠকে ছিলেন হর্ষ নেওটিয়া, সঞ্জীব পুরী, উমেশ চৌধুরী, রমেশ জুনেজা, উজ্জ্বল সিন্‌হা, সত্যম রায়চৌধুরী, দিলীপ দুগার, মেহুল মোহাঙ্কা, রুদ্র চট্টোপাধ্যায়দের মতো শিল্পপতিরা। ছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা তথা প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র, মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, স্বরাষ্ট্রসচিব নন্দিনী চক্রবর্তী, কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা, এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) জাভেদ শামিম, মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। মন্ত্রীদের মধ্যে ছিলেন শিল্পমন্ত্রী শশী পাঁজা, অরূপ বিশ্বাস, ফিরহাদ হাকিম, ইন্দ্রনীল সেন, সুজিত বসুরা। হাজির ছিলেন একাধিক বর্তমান ও প্রাক্তন আমলা।

উল্লেখ্য, তৃতীয় বার ক্ষমতায় আসার পরেই মমতা স্পষ্ট করেছিলেন, এ বার তাঁর লক্ষ্য বাংলায় আরও বিনিয়োগ টেনে আনা। শিল্পস্থাপন এবং কর্মসংস্থানকেই ‘পাখির চোখ’ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তথ্যপ্রযুক্তি-সহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে বিনিয়োগ হয়েওছে। নিউ টাউনে সিলিকন ভ্যালিও তৈরি করেছে রাজ্য সরকার। যদিও বিরোধীদের বক্তব্য, প্রতি বার বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের নামে অর্থের ‘অপচয়’ হয়। এত দিনে যত ‘মউ’ স্বাক্ষরিত হয়েছে, তার ১০ শতাংশ বিনিয়োগ হলেও বাংলায় কর্মসংস্থানের এই ছবি হত না। পাল্টা সরকারের বক্তব্য, জমিনীতি ‘সুদৃঢ়’ করেই রাজ্য সরকার শিল্পায়নের পথে এগোচ্ছে। কারও থেকে জোর করে জমি অধিগ্রহণের পক্ষে নয় রাজ্য সরকার। তাই কিছুটা সময় লাগলেও মৌলিক নীতি থেকে সরকার সরবে না। রাজ্য সরকার আশাবাদী, ফেব্রুয়ারির বিজিবিএসে বেশ কিছু বড় বিনিয়োগ আসবে বাংলায়।

আরও পড়ুন
Advertisement