Food Safety

গঙ্গার জল দিয়েই বানানো হচ্ছে ঠান্ডা শরবত, রান্না হচ্ছে হাওড়া স্টেশন লাগোয়া হোটেলগুলিতে

ঘোলা জলে সামান্য ফিটকিরি দিয়েই তা ব্যবহার করা হচ্ছে পানীয় জল হিসাবে। চূড়ান্ত অপরিণামদর্শী এই কাজকর্ম চলছে পূর্ব ভারতের অন্যতম প্রবেশদ্বার হাওড়া স্টেশন চত্বর ও গঙ্গাতীর লাগোয়া কিছু হোটেলে।

Advertisement
দেবাশিস দাশ
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০২৩ ০৭:১৬
hotels in howrah

সরাসরি: এ ভাবেই গঙ্গার জল পাইপের মাধ্যমে যাচ্ছে উপরের দোকানে। হাওড়া স্টেশন চত্বরে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

এ যেন আক্ষরিক অর্থেই ‘জেনেশুনে বিষ করেছি পান’! রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কেন্দ্রীয় গবেষণাগারের রিপোর্ট বলছে, হাওড়া-কলকাতা দিয়ে বয়ে যাওয়া গঙ্গা তথা হুগলি নদীর জল দূষণের সমস্ত মাত্রা অতিক্রম করে গিয়েছে। ১০০ মিলিলিটার জলে মিলেছে ৪৬ হাজার কলিফর্ম ব্যাক্টিরিয়া। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, ওই জল পানে চামড়া ও পেটের মারাত্মক রোগ, এমনকি, মৃত্যুও হতে পারে।

অথচ অভিযোগ, গঙ্গার ওই বিষাক্ত জল তুলেই তৈরি হচ্ছে রাস্তায় বিক্রি হওয়া ঠান্ডা শরবত, চলছে পাইস হোটেলের রান্নাবান্না বা বাসন ধোয়ার কাজ। ঘোলা জলে সামান্য ফিটকিরি দিয়েই তা ব্যবহার করা হচ্ছে পানীয় জল হিসাবে। চূড়ান্ত অপরিণামদর্শী এই কাজকর্ম চলছে পূর্ব ভারতের অন্যতম প্রবেশদ্বার হাওড়া স্টেশন চত্বর ও গঙ্গাতীর লাগোয়া কিছু হোটেলে। তবু, হুঁশ নেই প্রশাসনের। বছরখানেক আগে জেলাশাসকের নির্দেশে তৈরি হওয়া পুরসভা ও স্বাস্থ্য দফতরের খাদ্য-সুরক্ষা সংক্রান্ত টাস্ক ফোর্স কার্যত নিষ্ক্রিয়। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তরফে এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত নোডাল অফিসার বা হাওড়া পুরসভার কাছেও কোনও তথ্য নেই। যার ফলে নিত্যদিন হাজার হাজার মানুষ জেনে বা না জেনে বিষপান করে চলেছেন।

Advertisement

বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তও। তিনি বলেন, ‘‘বর্তমানে গঙ্গার অবস্থা এতটাই খারাপ যে, ভাটার সময়ে জলে নেমে স্নান করলেও নানা রকম অসুখ হতে পারে। আসলে হাওড়া-কলকাতার গঙ্গা হয়ে গিয়েছে নর্দমার মতো। দুই শহরের নিকাশি নালা দিয়ে আসা নোংরা জল নিয়মিত পড়ার ফলেই গঙ্গা এতটা দূষিত হয়ে গিয়েছে।’’

হাওড়া স্টেশন চত্বর ঘুরে দেখা গিয়েছে, কাঁধে বাঁক নিয়ে প্লাস্টিকের ড্রামে গঙ্গার জল ভরে উপরে আনার পরে ট্রলিতে চাপিয়ে তা নিয়ে যাওয়ার কাজ করছেন শ্রমিকেরা। সেই জল ১০ টাকায় (প্রতি ড্রাম) করে কিনছেন স্টেশন চত্বরে থাকা শরবত বিক্রেতা থেকে হোটেল-মালিকেরা। এর পরে কেউ কেউ ফিটকিরি দিয়ে সেই ঘোলা জল খানিকটা পরিষ্কার করে নিচ্ছেন, কেউ সেটুকুও করছেন না। হাওড়া স্টেশনের কাছে গঙ্গার চাঁদমারি ঘাটে গেলেই দেখা যাবে, বিভিন্ন হোটেল থেকে বেরিয়ে আসা পাইপ সরাসরি পৌঁছে গিয়েছে গঙ্গার জলে। হোটেলে বসানো পাম্প চালিয়ে সেই জল ভরা হচ্ছে বড় বড় ড্রামে। খাওয়াদাওয়ার পরে সেই জলেই চলছে মুখ ধোয়া এবং তৃষ্ণা নিবারণ।

স্টেশন চত্বরের এমনই একটি পাইস হোটেলের মালিক আবার বলছেন, ‘‘এখানে পানীয় জলের কোনও জোগান নেই। বাইরে থেকে জল আনাতে হলে বিস্তর খরচ। পোষাতে পারব না। তাই বাধ্য হয়েই গঙ্গার জল ব্যবহার করছি। এ ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। জল ছাড়া তো আর হোটেল চলবে না। বরং সরকার একটা ব্যবস্থা করুক। যাতে সুলভে পানীয় জল পাই আমরা।’’

প্রকাশ্যে বছরের পর বছর এমন ঘটনা ঘটে চলেছে। অথচ, এ নিয়ে হাওড়া জেলা স্বাস্থ্য দফতর বা পুরসভার কোনও হেলদোল নেই বলেই অভিযোগ। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাই মণ্ডল বলেন, ‘‘এই কাণ্ড যে ঘটছে, তা সত্যিই আমার জানা ছিল না। এটা যাঁরা করছেন, তাঁরা মানুষের ক্ষতি করছেন। আমি ফুড সেফটি দলকে পাঠাচ্ছি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।’’ পুর কর্তৃপক্ষের আশ্বাস, তাঁরাও বিষয়টি দেখছেন।

আরও পড়ুন
Advertisement