ফিরহাদ হাকিম। ফাইল চিত্র।
আবাস যোজনা নিয়ে গ্রামবাসীর ক্ষোভের কথা শুনে রাজ্যের দিকে আঙুল তুললেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী। আবার আবাসের অভিযোগ অনুসন্ধানে গিয়ে তৃণমূলের বিক্ষোভের মুখে পড়লেন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা। শনিবার বীরভূমের বোলপুরের এবং পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথির ঘটনা।
বোলপুর থেকে কিছুটা দূরে কাঁকুটিয়া গ্রামে এ দিন দুপুরে যান কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েত প্রতিমন্ত্রী কপিল মোরেশ্বর পাটিল। সেখানে গ্রামবাসীদের অনেকে ‘আবাসের’ বাড়ি না পাওয়া নিয়ে মন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানান। পরে, কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সব জায়গায় মানুষের একটাই আক্রোশ সামনে আসছে। গ্রামবাসীরা বলছেন, যাঁদের বাড়ির প্রয়োজন নেই, তাঁরা বাড়ি পেয়েছেন। যাঁদের প্রয়োজন, তাঁরা পাচ্ছেন না। এটা ঠিক নয়। দফতরের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে বিষয়টা জানাব।’’
যদিও রাজ্যের মন্ত্রী তৃণমূলের চন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী যে অভিযোগ করছেন, তা ঠিক নয়। তদন্ত-দল ঘুরেও অনিয়ম পাচ্ছে না। দু-একটা জায়গায় ছোটখাটো গোলমাল থাকতেই পারে। সে জন্য কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা দীর্ঘদিন ধরে আটকে রাখার যুক্তি নেই।’’
প্রায় একই সুরে নদিয়ার রানাঘাটে এ দিনই এক অনুষ্ঠানে রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র তৃণমূলের ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই বলেছেন, প্রকল্পের টাকা দেওয়ার আগে ভাল করে খোঁজ নিতে। যারা পাওয়ার যোগ্য, তারা পাবে। যারা যোগ্য নয়, তারা পাবে না।’’ তাঁর পাল্টা খোঁচা: ‘‘কেন্দ্র এত দিন টাকা দেয়নি বলে তালিকার নাম সমীক্ষা করে দেখা হয়নি। কিন্তু সমীক্ষার পরেও, কেন্দ্র প্রকল্পের জন্য অর্থ বরাদ্দ করবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।’’
কাঁথি-১ ব্লকের পূর্ব মুকুন্দপুর গ্রামে এ দিন বিকেলে আবাস-তদন্তে যান কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা। অভিযোগ, তৃণমূল পরিচালিত কাঁথি-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রদীপ গায়েনের নেতৃত্বে স্থানীয় কিছু বাসিন্দা কেন্দ্রীয় দলের সদস্যদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের দাবি, নথি জমা দিলেও, ‘যোগ্য’ কয়েক জন আবাস যোজনার অনুদান পাননি। পাশাপাশি, ১০০ দিনের কাজের বকেয়া টাকা কেন মিলছে না, সে প্রশ্নেও কেন্দ্রীয় দলের সদস্যদের ঘিরে বিক্ষোভ হয়।
সকালে পূর্ব মেদিনীপুরের এগরায় কেন্দ্রের এই দলের প্রতিনিধিরা দেখেন, মাটির আলাদা বাড়িতে থাকলেও, পরিবারে একটি মাত্র জব-কার্ড থাকায় কেউ কেউ আবাসে বঞ্চিত হয়েছেন। কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দুবদা গ্রাম পঞ্চায়েতের সচিব গৌরাঙ্গ দাসের কাছে জানতে চান, ‘‘জব-কার্ডের তথ্য ও পরিবার নিয়ে প্রতিবছর গ্রামে গিয়ে একশো শতাংশ সমীক্ষা করতে হয়। আপনি জানেন? যাদের পরিবার পৃথক হয়েছে বা কেউ মারা গিয়েছে সে তথ্য ব্লকে পাঠালে, নাম বাতিল ও সংযোজন হয়।’’ প্রতি বছর সমীক্ষার বিষয়টি জানেন না বলে ঘাড় নাড়েন পঞ্চায়েত সচিব।
পশ্চিম মেদিনীপুরে গড়বেতার কাদড়া গ্রামে সকালে 'দিদির সুরক্ষা কবচ' কর্মসূচিতে গিয়েছিলেন ‘দিদির দূত’ মন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাতো। আর বেলা গড়াতে সে গ্রামেই পৌঁছয় কেন্দ্রীয় দল। একই দিনে তৃণমূলের কর্মসূচি ও কেন্দ্রীয় দলের পরিদর্শন নিয়ে গ্রামবাসী খানিক সংশয়ে পড়েন। তবে মন্ত্রী শ্রীকান্ত বলছেন, ‘‘পুরোটাই কাকতালীয়।’’