সিভিক ভলান্টিয়ারদের কাজের পরিধি নিয়ে অভিযোগ তুলল বিরোধীরা। —নিজস্ব চিত্র।
পঞ্চায়েত নির্বাচনে হিংসার অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগে তুলেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। ভোটের দিনেই শুধু ১৪ জনের মৃত্যু সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। সেই আবহে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন এবং পুলিশের ভূমিকা নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠছে, তেমনই সিভিক ভলান্টিয়ারদের কাজের পরিধি নিয়েও অভিযোগ তুলল বিরোধীরা। কোথাও সিভিক ভলান্টিয়ারদের দিয়ে শুধু বুথ সামলানোর অভিযোগ, তো কোথাও তাঁদের পোশাক বদলে বন্দুক নিয়ে ভোটের কাজ করার অভিযোগ উঠল। পশ্চিম বর্ধমান থেকে দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহ, মুর্শিদাবাদ-সহ একাধিক জেলায় ভোটের কাজে সিভিক ভলান্টিয়ারেরা নির্দেশিকার বাইরে গিয়ে কাজ করেছেন কি না তা নিয়ে আলোচনা চলল।
নিয়ম অনুযায়ী স্পর্শকাতর ও অতি স্পর্শকাতর বুথগুলিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার কথা। কিন্তু অনেক জায়গাতেই তা করা যায়নি বলে অভিযোগ। একাধিক বুথে শুধু রাজ্য পুলিশ কোথাও সিভিক ভলান্টিয়ারদের দিয়ে ভোটের কাজ সামলানোর অভিযোগ করছেন সাধারণ ভোটারেরা। যদিও এই অভিযোগ নতুন নয়। বিভিন্ন সময়ে সিভিক ভলান্টিয়ারদের কাজের সমালোচনা হয়েছে। এক্তিয়ারের বাইরে তাঁরা কাজ করেছেন বা করানো হয়েছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ বারের ভোটও তার ব্যতিক্রম নয়।
শনিবার দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর কুশমুণ্ডি, হরিরামপুর এবং তপনের বিভিন্ন এলাকায় অভিযোগ ওঠে, কোথাও সিভিক ভলান্টিয়ার, কোথাও বা এনবিএফ কর্মীরা বুথের দায়িত্বে ছিলেন। দক্ষিণ দিনাজপুরের বিজেপির জেলা সভাপতি স্বরূপ চৌধুরীর দাবি, সিভিক ভলান্টিয়ারদের পোশাক পরিবর্তন করিয়ে বেশ কিছু বুথে তাঁদের বন্দুক দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই ভাবেই দক্ষিণ দিনাজপুরের কিছু অংশে ভোট করানো হয়েছে বলে বিরোধীদের দাবি।
বৃহস্পতিবারই রাজ্য নির্বাচন কমিশন জানিয়েছিল, সিভিক ভলান্টিয়ারদের লাইন নিয়ন্ত্রণ, নাকা পয়েন্ট প্রভৃতি জায়গায় ব্যবহার করা হবে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তাদের ব্যবহার করা যাবে না।
শুধু দক্ষিণ দিনাজপুর নয়, একই অভিযোগ উঠল পশ্চিম বর্ধমানের রানিগঞ্জ ব্লকের চলবলপুরেও। এখানেও ভোল বদলে নির্বাচনের কাজে অংশ নেওয়ার অভিযোগ উঠল এক সিভিক ভলান্টিয়ারদের বিরুদ্ধে। পরনে সাদা জামা, জিন্স প্যান্ট, হাতে হেলমেট ও লাঠি নিয়ে দেখা যায় তাঁকে। যদিও অনেকে বলছেন, লাঠিধারী ব্যক্তি পুলিশের গাড়ির চালক। খাতায়কলমে লাইন নিয়ন্ত্রণের কাজের দায়িত্ব থাকলেও বিরোধীদের দাবি, শাসকদলের ভোট লুটে মদত দিয়েছেন সিভিক ভলান্টিয়ারেরা। এই সব অভিযোগ শুনে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিভিক ভলান্টিয়ার বলেন, “আমাদের কম মাইনের চাকরি। তা সত্ত্বেও সারা বছর আমরা কাজ করে যাই। আজও নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালন করেছি। আসলে, আমাদের বদনাম করা সোজা, তাই বদনাম করা হচ্ছে।”
মালদহের রতুয়া, হরিশ্চন্দ্রপুর, চাঁচোল, কালিয়াচক, বৈষ্ণবনগরের বিভিন্ন এলাকাতে সিভিক ভলান্টিয়ারদের দিয়ে ভোট করানোর অভিযোগ উঠেছে। হাওড়া সদর এবং গ্রামীণ এলাকায় বেশ কিছু জায়গায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর দেখা না মিললেও বুথে সিভিক ভলান্টিয়ারদের ভূমিকা দেখার মতো ছিল বলে জানাচ্ছেন স্থানীয়েরা। বুথের ভিতরে এবং বাইরে দুই জায়গাতেই সিভিক ভলান্টিয়াররা কর্মরত ছিলেন বলে জানাচ্ছেন অনেকে। এ বিষয়ে অবশ্য জেলা প্রশাসনের কাছে জানতে চাওয়া হলে, শুধুমাত্র ভোটারদের লাইন ঠিক করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিরাপত্তা কিংবা আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব দেওয়া হয়নি বলে পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে।