দত্তপুকুরে ঘটনাস্থলে এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সিদ্ধিনাথ গুপ্ত (মাঝখানে)। —নিজস্ব চিত্র।
উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুরে বিস্ফোরণকাণ্ডে নাম জড়াল আইএসএফের। যে চার জনের নামে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে এক জন আইএসএফের ব্লক পর্যায়ের নেতা বলে দাবি করল পুলিশ। সোমবার ঘটনাস্থলে যান পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘এফআইআরে চার জনের নাম রয়েছে। তাঁদের মধ্যে কেরামত আলি, রবিউল আলি, শামসুল আলি মৃত। বাকি এক জন রমজান আলিকে আমরা খুঁজছি। তিনি আইএসএফের ব্লক পর্যায়ের নেতা।’’ যদিও এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পুলিশের বক্তব্যের ভিত্তিতে আইএসএফের তরফ থেকে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। অন্য দিকে, সোমবার ঘটনাস্থলে যায় জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ। বিস্ফোরণস্থল ঘুরে দেখেন দুই আধিকারিক। এই ঘটনায় এনআইএ তদন্তের দাবি জানিয়েছে বিজেপি। একই দাবি জানিয়েছে আইএসএফ-ও। যদিও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে এখনও এই নিয়ে কোনও নির্দেশিকা জারি করা হয়নি।
পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তাঁদের চিকিৎসা চলছে। একটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। গত কালই তদন্ত শুরু হয়েছে। এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এফআইআরে চার জনের নাম রয়েছে। কেরামত আলি, রবিউল আলি, শামসুল আলি মৃত। বাকি এক জন রমজান আলি পলাতক। অন্য জেলা থেকে যাঁরা বাজি তৈরির কাজের জন্য আসতেন, তাঁরা রমজানের বাড়িতেই থাকতেন। শামসুলের বাড়িতে মজুত রাখা হত বাজি।’’ পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘‘গত আড়াই-তিন মাসের মধ্যে এই এলাকায় অনেক তল্লাশি অভিযান চালিয়ে প্রচুর বাজি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তার পরও এই ঘটনা ঘটেছে, যা দুর্ভাগ্যজনক।’’ এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সিদ্ধিনাথ গুপ্ত বলেন, ‘‘পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। বাজি বানানো হচ্ছিল, বাকি তদন্ত চলছে।’’
রবিবার সকালে বারাসত সংলগ্ন দত্তপুকুরে বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ হয়। এই ঘটনায় সোমবার পর্যন্ত ন’জনের মৃত্যু হয়েছে। রবিবার রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। বিস্ফোরণের ঘটনাটিকে ‘ভয়াবহ’ এবং ‘নিছক দুর্ঘটনা নয়’ বলে মন্তব্য করেন রাজ্যপাল বোস। অন্য দিকে, রবিবার সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর কালীঘাটের বাড়িতে ডেকে পাঠান রাজ্য পুলিশের ডিজি এবং কলকাতার নগরপালকে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাজ্যপুলিশের ডিজি মনোজ মালবীয় এবং কলকাতা পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন তিনি। পুলিশ সূত্রে খবর ছিল, মমতা ওই বৈঠকেই প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছেন দুই পুলিশ প্রধানকে। এমনকি, রাজ্যে আবার বিস্ফোরণের ঘটনায় তিনি যে ক্ষুব্ধ, তা-ও জানিয়েছিলেন তিনি। সোমবার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘সবুজ বাজি তৈরি করুন। তাতে টাকা কিছুটা কম হবে। কিন্তু জীবন তো বাঁচবে।’’ তবে দত্তপুকুর নিয়ে কিছু বলেননি।