দত্তপুকুরের একটি বাজি কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ। —ফাইল চিত্র।
ঘড়িতে তখন সকাল সওয়া ১০টা হবে। বাজার থেকে ফিরেছি। বাড়িতে এসে বসেছিলাম। হঠাৎ শুনি বিকট শব্দ। বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার মতো দূরে বাজি কারখানা আছে জানি। বুঝতে পারলাম, সেখানেই নির্ঘাৎ কিছু ঘটেছে। এ দিকে, প্রবল শব্দে কানে কানে তালা ধরে গেল আমার ও স্ত্রীর। বুক ধড়ফড় করছিল।
একটু ধাতস্থ হয়ে দেখি, পড়শিরা চারদিকে ছোটাছুটি করছে। আমিও দৌড় দিলাম ঘটনাস্থলের দিকে। গিয়ে দেখি ভয়ানক অবস্থা। ঘরদোর ভেঙে তছনছ। বাড়ির ছাদের একটা অংশ উড়ে পড়েছিল রাস্তার উল্টো দিকে। মনে হচ্ছিল যেন যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়ে পৌঁছেছি। চারদিকে ধ্বংসের ছবি। ভয়ে মেয়ে-বৌরা অনেকে কান্নাকাটি করছিল। বাচ্চাদেরও চোখেমুখে আতঙ্ক। কটূ গন্ধে আশপাশের বাতাস ভারী হয়ে আছে। আহতদের আর্তনাদ ভেসে আসছিল নানা দিক থেকে। সব মিলিয়ে আমরা বড়রাও দিশেহারা।
গ্রামের বাসিন্দা শামসুল আলি ইটের গাড়িতে কাজ করেন। ঘটনার সময়ে তিনি ছিলেন ওখানে। ঝলসে যান। দেখলাম, মাটিতে পড়ে কাতরাচ্ছেন। পায়ের মাংস উড়ে গিয়েছে। শরীর ক্ষতবিক্ষত। রক্তে ভেসে যাচ্ছে। আমরা সকলে হাত লাগিয়ে অন্তত দশ জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠাই। পোড়া বারুদ আর রক্তের গন্ধে মাথা ঘুরছিল। বেশিক্ষণ থাকলে আমিও অসুস্থ হয়ে পড়তাম। খানিকক্ষণ পরে বাড়ি ফিরে আসি। ততক্ষণে পুলিশ, দমকল এসেছে। উদ্ধারের কাজে হাত লাগিয়েছে। পরে দেখলাম দু’টো জেসিপি মেশিন আনছে ওরা। এর আগে পাড়ার মধ্যে বাজি কারখানা তৈরির বিরোধিতা করেছিলাম আমরা অনেকেই। যে কোনও সময়ে বিপদ ঘটতে পারে বলে ভয় ছিল। দত্তপুকুর থানায় এ সব জানিয়ে লিখিত অভিযোগও করেছিলাম। পুলিশ এসে উল্টে আমার ছোট ছেলে-সহ এলাকার ১৮ জনকে ধরে মিথ্যা মামলা দেয়। আমরাই নাকি গোলমাল পাকাচ্ছি এলাকায়! পরে সকলে জামিন পায়। আমাদেরও মুখে তালা পড়ে। বেআইনি কাজ দেখলেও মুখ বুঝে থাকতেহবে ধরে নিই।
কিন্তু আজ যে ঘটনা ঘটল, তারপরে কি রাজনৈতিক দলের নেতা, পুলিশও মুখে কুলুপ এঁটে থাকবে? সকলেই তো সব জানত। মাঝে মধ্যে পুলিশ আসত গ্রামে। কখনও বেআইনি বাজির কারবার বন্ধ হয়নি।