(বাঁ দিক থেকে) নিশীথ প্রামাণিক এবং উদয়ন গুহ। ফাইল চিত্র।
কয়েকটি জনমত সমীক্ষার ইঙ্গিত ছিল, লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। বুথফেরত সমীক্ষায় তৃণমূলকে এগিয়ে রাখা হলেও জেলার বেশ কিছু এলাকায় পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপির ভাল ফলের বার্তা ছিল। কিন্তু ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ভোটের ফল এবং প্রবণতা বলছে, রাজ্যের অধিকাংশ জেলার মতোই উত্তরবঙ্গের কোচবিহারের ত্রিস্তর পঞ্চায়েতেও বিপুল জয় পেতে চলেছে রাজ্যের শাসকদল।
এখনও পর্যন্ত গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরের অধিকাংশ ফল প্রকাশিত হয়েছে কোচবিহারে। গণনা চলছে পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে। দু’টি ক্ষেত্রেই বিরোধীদের তুলনায় অনেকটা এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের এলাকা দিনহাটা থেকে রাজবংশী প্রভাবিত অসম সীমানা লাগোয়া এলাকা, সর্বত্রই অগ্রগতি রয়েছে শাসকদলের। জেলার তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী উদয়ন গুহ মঙ্গলবার বিকেলে বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতের তিনটি স্তরেই আমদের বিপুল জয় হবে।’’
জেলার ১২৮টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট ২৫০৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনের মধ্যে ঘোষিত সর্বশেষ ফল অনুযায়ী তৃণমূলের দখলে ১৪৩৮টি। বিজেপির ৪৭২। এ ছাড়া সিপিএম ১৫ এবং কংগ্রেস ১৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে জিতেছে। নির্দল এবং অন্যেরা ২৬টিতে। ১২৮টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে এখনও পর্যন্ত তৃণমূল ৯৯ এবং বিজেপি ২৪টিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। ত্রিশঙ্কু হয়েছে ৫টি। ১২টি পঞ্চায়েত সমিতির ৩৮৩টি আসনের মধ্যেও প্রাথমিক প্রবণতায় অনেকটাই এগিয়ে শাসকদল।
গত কয়েক বছর ধরেই রাজনৈতিক সংঘর্ষের কারণে কুখ্যাত এই জেলা (গত ৮ জুলাই ভোটগ্রহণের দিনেও নিহত হয়েছিলেন তিন জন)। নিয়োগ দুর্নীতি বিতর্কে পদ হারিয়েছিলেন এই জেলার মন্ত্রী পরেশ অধিকারী। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে চাকরি হারিয়েছেন তাঁর কন্যা। কামতাপুর আন্দোলন ঘিরে টানাপড়েনও কোচবিহারের ভোট-রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক হতে পারে বলে ইঙ্গিত ছিল।
কামতাপুর আন্দোলনে যুক্ত সংগঠন ‘গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশন’-এর নেতা বংশীবদন বর্মনের তৃণমূলে যোগদানের ফলে বিশেষত তোর্সা নদীর পশ্চিমের বাংজবংশী প্রভাবিত এলাকায় তৃণমূলের ভাল ফল হয়েছে বলে মনে করা হয়েছে। অন্য দিকে, গ্রেটারের অন্য গোষ্ঠীর নেতা বিজেপি-ঘনিষ্ঠ ‘মহারাজা’ অনন্ত রায়ের অসম সীমানা ঘেঁষা এলাকাগুলিতে প্রভাব থাকলেও এ বারের ভোটে তাঁর অনুগামীদের তেমন ‘সক্রিয়তা’ দেখা যায়নি বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। ওই এলাকাগুলিতেও ভাল ফল করেছে তৃণমূল। ঘটনাচক্রে, মঙ্গলবারই শোনা গিয়েছে, অনন্তকে রাজ্যসভায় পাঠাতে চলেছে বিজেপি।
২০১৮ সালে ভোটের আগেই ৩৩টি জেলা পরিষদ আসনের মধ্যে একটিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিল তৃণমূল। এ বারও তাই হয়েছে। পাঁচ বছর আগে এক নির্দল জিতেছিলেন। বাকি ৩২টি গিয়েছিল রাজ্যের শাসকদলের ঝুলিতে। কিন্তু এ বার যে ৩৩টি আসনে ভোট, তার বড় অংশে বিজেপি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারে বলে পূর্বাভাস ছিল। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোট এবং ২০২১-এর বিধানসভা ভোটের ফলও ছিল তেমনই ‘ইঙ্গিতবাহী’। লোকসভায় ৪৮ শতাংশ ভোট পেয়ে জিতেছিল বিজেপি। বিধানসভায় জেলার ন’টি আসনের মধ্যে সাতটি পেয়েছিল তারা।
কিন্তু তার ছ’মাস পরেই উপনির্বাচনে দিনহাটা বিধানসভায় এক লক্ষেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে ছিনিয়ে নিয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী উদয়ন গুহ। সেই প্রবণতা এখনও বজায় রয়েছে বলে বুঝিয়ে দিল কোচবিহার। গত ১৭ জুন মনোনয়ন পর্ব শেষ হওয়ার পরেই উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী তথা তৃণমূলের রাজ্য সহ-সভাপতি উদয়ন জানিয়েছেন, বিপুল জয় পেতে চলেছেন তাঁরা। গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতির প্রবণতা জেলা পরিষদেও বহাল থাকলে পুরোপুরি মিলে যাবে প্রয়াত কমল গুহের পুত্রের ‘ভবিষ্যবাণী’।