Bulculchandi Fish Seller

রুজির ফাঁকেই পঞ্চায়েত সামলান জয়দেব

মাছ বিক্রির ফাঁকে এ ভাবেই বছর ছয়েক ধরে পঞ্চায়েতের পরিষেবা দিচ্ছেন হবিবপুরের বুলবুলচণ্ডীর মাছ ব্যবসায়ী জয়দেব হালদার।

Advertisement
অভিজিৎ সাহা
বুলবুলচণ্ডী শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৬:০১
বাজারে মাছ কাটছেন পঞ্চায়েত সদস্য জয়দেব হালদার।

বাজারে মাছ কাটছেন পঞ্চায়েত সদস্য জয়দেব হালদার। নিজস্ব চিত্র।

মেঝেয় ছড়ানো রুই, কাতলা, বোয়াল, ট্যাংরা। বঁটিতে আঁশ ছড়ানোর ফাঁকে ‘দেশি টাটকা মাছ’ বলে হাঁক দিচ্ছেন বছর চল্লিশের এক ব্যক্তি। তাঁকে ঘিরে কেউ বোয়াল, কেউবা দাম জানতে চাইছেন রুই, কাতলার। সে ভিড়েই ‘পঞ্চায়েত সদস্যের শংসাপত্র’ চেয়ে বসেন কলেজ পড়ুয়া এক যুবক। তাঁর কথা শুনেই থেমে গেল আঁশ ছাড়াতে ব্যস্ত হাত। পকেট থেকে ফোন বের করে ফোন করলেন বাড়িতে। এক কিশোর এসে সেই যুবকের হাতে দিল পঞ্চায়েত সদস্যের শংসাপত্র।

Advertisement

মাছ বিক্রির ফাঁকে এ ভাবেই বছর ছয়েক ধরে পঞ্চায়েতের পরিষেবা দিচ্ছেন হবিবপুরের বুলবুলচণ্ডীর মাছ ব্যবসায়ী জয়দেব হালদার। তিনি টানা দু’বার তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য। তবুও নিজের পেশা ছাড়েননি তিনি। সহকর্মী, দলীয় নেতৃত্বের পাশাপাশি বিরোধীদের কাছে প্রশংসিত জয়দেব।

পঞ্চায়েত সদস্যদের বিরুদ্ধে ভোটে জেতার পরে ‘আঙুল ফুলে কলা গাছ’ হওয়ার অভিযোগ প্রায়ই ওঠে মালদহে। সেই তালিকায় রাজ্যের শাসকদলের জনপ্রতিনিধিদের একাংশ রয়েছেন। স্থানীয়দের দাবি, পঞ্চায়েত সদস্যদের টালির বাড়ি ভোটে জেতার পরে ভোল বদলেছে। সাইকেলের বদলে বাড়ির গ্যারেজে ঠাঁই হয়েছে একাধিক বিলাসবহুল গাড়ির। তবে তার মধ্যে ব্যতিক্রমী বুলবুলচণ্ডী গ্রাম পঞ্চায়েতের ডোবাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা জয়দেব হালদার। তিনি ২০১৮ সালে তৃণমূলের টিকিটে গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য হন। ২০২৩ সালেও দলীয় টিকিটে তিনি জয়ী হন। এ বারে দল তাঁকে বুলবুলচণ্ডী পঞ্চায়েতের কৃষি সঞ্চালক করেছে। টাঙন নদীর পারে একটি পাকা এবং দুটি টিনের ঘর রয়েছে তাঁর। পঞ্চায়েত সদস্য হওয়ার আগে ২০১৮ সালে ইন্দিরা আবাসের ঘর পান তিনি। জয়দেব বলেন, “এ বার আমার বুথে ছ’জন আবাসের ঘর পেয়েছেন। আরও অনেক মানুষের ঘরের প্রয়োজন রয়েছে। সে তালিকাও দফতরে পাঠানো আছে।”

পঞ্চায়েত অফিস, নিজের বুথে ঘুরে বেড়ানোর পাশাপাশি নিজের পেশার টানে দৈনিক ভোর ৫টায় তিনি হাজির হন বুলবুলচণ্ডী মাছ বাজারে। কত বছর মাছ বিক্রি করছেন? জয়দেব বলেন, “কুড়ি বছর ধরে মাছ বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। মানুষ আমাকে পঞ্চায়েত সদস্য করেছেন। মানুষের জন্য কাজও করছি। তবে সংসার তো চালাতে হবে। তাই পঞ্চায়েত সদস্য হওয়ার পরেও নিজের পেশায় যুক্ত রয়েছি।” গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তৃণমূলের সমীর সাহা বলেছেন, “পঞ্চায়েত, নিজের পেশা নিঁখুত ভাবে জয়দেব সামলান। তাঁর বিরুদ্ধে কখনও অভিযোগ ওঠেনি।” বিজেপির অঞ্চল সভাপতি শঙ্করকুমার মৃধা এই প্রসঙ্গে বলেন, “জয়দেব যেমন ভাল, তাঁর দোকানের মাছও ভাল। বিরোধী দলে থাকলেও জয়দেবের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা যাবে না।” গ্রামবাসী ভোলা হালদার বলেন, “আমাদের গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য (জয়দেব) মানুষের যে কোনও প্রয়োজনে ছুটে যান।”

Advertisement
আরও পড়ুন