আরজি করের নির্যাতিতা মহিলা চিকিৎসকের জন্য বিচারের দাবিতে আন্দোলন। —ফাইল চিত্র।
আরজি কর আন্দোলনকে নতুন মাত্রা দিতে শনিবার গণকনভেনশন এবং সমাবেশের ডাক দিয়েছেন আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারেরা। সেই আবহে পাল্টা সংগঠন গঠন করে ফেলল জুনিয়র ডাক্তারদের অন্য একটি অংশ। শুক্রবার বেশি রাতে ওই নতুন সংগঠন গঠন করা হয়েছে। নাম ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স’ অ্যাসোসিয়েশন’। শনিবার বিকালে সাংবাদিক সম্মেলন করে নতুন সংগঠনের কথা আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করা হবে। পক্ষান্তরে, আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের বক্তব্য, ‘‘এ বার মানুষের বেছে নিতে সুবিধা হবে যে, তাঁরা যে চিকিৎসকেরা থ্রেট কালচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন, তাঁদের পাশে থাকবেন? না কি যাঁরা থ্রেট কালচারে অভিযুক্ত, তাঁদের সঙ্গে থাকবেন।’’
নতুন সংগঠনে দু’জনকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। তাঁরা হলেন চিকিৎসক শ্রীশ চক্রবর্তী এবং প্রণয় মাইতি। সংগঠনের তরফে প্রাথমিক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আন্দোলনের নামে জুনিয়র ডাক্তারদের একটি অংশ স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ‘অরাজকতা’ তৈরি করতে চাইছে। একই ভাবে যাঁরা সে সবের প্রতিবাদ করছেন, চিকিৎসা পরিষেবা স্বাভাবিক রাখতে ভূমিকা নিচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ‘থ্রেট কালচার’-এর মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে পাল্টা সংগঠন গড়ে ‘সত্যি’টা মানুষের কাছে তুলে ধরতে চান ওই নতুন সংগঠনের চিকিৎসক নেতৃত্ব।
প্রসঙ্গত, ‘থ্রেট কালচার’-এর অভিযোগে আরজি কর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৫১ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করেছিলেন। তা নিয়ে গত সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উষ্মাপ্রকাশ করেছিলেন নবান্নের বৈঠকে। পরের দিন কলকাতা হাই কোর্ট আরজি কর কর্তৃপক্ষের ওই সিদ্ধান্ত স্থগিত করে দিয়েছিল। গত সোমবার আন্দোলনরত জুনিয়র ডক্টর্স’ ফ্রন্টের নেতৃত্বের সঙ্গে নবান্নে বৈঠক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই বৈঠকে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের অন্যতম ‘মুখ’ অনিকেত মাহাতো বলেছিলেন, যাঁদের বিরুদ্ধে থ্রেট কালচারের অভিযোগ রয়েছে, তাঁরা এক এক জন ‘নটোরিয়াস ক্রিমিনাল’ (দাগি অপরাধী)। সূত্রের খবর, এই মন্তব্যের জন্য অনিকেতকে আইনি নোটিস পাঠিয়েছেন অভিযুক্তদের কেউ কেউ। সেখানে বলা হয়েছে, তিন দিনের মধ্যে অনিকেতকে সমাজমাধ্যমে ওই মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। নচেৎ তাঁর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করা হবে। অভিযোগকারীদের বক্তব্য, অনিকেত যাঁদের ‘দাগি অপরাধী’ বলেছিলেন, হাই কোর্ট তাঁদের শাস্তি স্থগিত করেছে। তাতে তাঁদের ‘মানহানি’ হয়েছে।
যদিও অনিকেত শুক্রবার জানিয়েছিলেন, তিনি কোনও আইনি নোটিস পাননি। নোটিস পেলে তিনিও আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন। কারণ, তিনি সেই বক্তব্য থেকে পিছু হটছেন না। বস্তুত, হাই কোর্টের ওই নির্দেশ প্রসঙ্গে আন্দোলনকারীরা আইনি পরামর্শ নিতে শুরু করেছেন। তেমন হলে তাঁরা সুপ্রিম কোর্টে ওই নির্দেশের বিরুদ্ধে আবেদন জানান কি না, তা-ও দেখার।
নির্যাতিতার বিচারের দাবিতে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন নিয়ে শাসকদল তৃণমূল ধারাবাহিক ভাবে সমালোচনা শানাচ্ছে। শাসকদলের নেতাদের একাংশ দাবি করেছেন, ২০২১ সালে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রী আবাসনে মধুমিতা ঘোষ নামের এক মেডিক্যাল পড়ুয়ার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছিল। সেই ঘটনায় মেয়েটির বাবা অভিযোগ করেছিলেন যাঁর বিরুদ্ধে, সেই শাহবাজ শেখ বর্তমান আন্দোলনের সামনের সারিতেই রয়েছেন। মেয়েটির বাবার অভিযোগপত্রটিও প্রকাশ্যে আনা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, জুনিয়র ডাক্তারেরা যখন স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থান করছিলেন, সেই সময় অন্য একটি অংশ তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের সঙ্গে দফায় দফায় দেখা করেছিল। সূত্রের খবর, তখন থেকেই পাল্টা সংগঠন গড়ে তোলার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছিল। যা শনিবার আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা হতে চলেছে। নতুন সংগঠনের নেতারা ঘোষণার আগে আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু বলেননি। তবে, একান্ত আলোচনায় তাঁরা দাবি করেছেন, আন্দোলন যাঁরা করছেন, তাঁদের ‘চাপে’ অনেকে ওই শিবিরে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। এ বার ধীরে ধীরে সেই অংশ তাঁদের দিকেই শামিল হবেন।