(বাঁ দিকে) পর্যটনমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় এবং নন্দিনী চক্রবর্তী (ডান দিকে)। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
আবার বিতর্কে আমলা নন্দিনী চক্রবর্তী। পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগমের চেয়ারপার্সন পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে দিল নবান্ন। পর্যটন দফতরের তরফে একটি নির্দেশিকা জারি করে জানানো হয়েছে, নন্দিনীর স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের প্রতিমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনকে। তবে নন্দিনী যেমন পর্যটন দফতরের প্রধান সচিবের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন, তিনি সেই কাজ চালিয়ে যাবেন। কিন্তু পর্যটন উন্নয়ন নিগমের শীর্ষপদ থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হল। নতুন নির্দেশিকায় তাঁকে পর্যটন উন্নয়ন নিগমের অন্যতম ডিরেক্টর পদে রাখা হয়েছে। এর আগে নন্দিনী ছিলেন রাজ্যপালের প্রধান সচিব। কিন্তু কয়েক মাস আগে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস তাঁকে সরিয়ে দেন। তার পর থেকে নন্দিনী পর্যটন দফতরের প্রধান সচিব পদে কাজ করছেন। পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগমের ভাইস চেয়ারপার্সন করা হয়েছে অভিনেত্রী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
কিন্তু নন্দিনীকে ঠিক কী কারণে ওই পদ থেকে সরানো হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। এ বিষয়ে কোনও ‘আনুষ্ঠানিক’ কারণও জানানো হয়নি সরকারের তরফে। তবে এই রদবদল নিয়ে নবান্নের অলিন্দে আলোচনা এবং জল্পনা তৈরি হয়েছে। পর্যটন দফতরের প্রধান সচিব নন্দিনী কাজ করেন মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ের অধীনস্থ দফতরে। অনেকের মতে, মন্ত্রীর সঙ্গে ‘অ-বনিবনা’ তাঁর পদ হারানোর কারণ হয়ে থাকলেও থাকতে পারে। তবে সে সবই জল্পনা। ‘অ-বনিবনা’ হয়ে থাকলেও তার কোনও কারণও প্রকাশ্যে আসেনি। তবে আধিকারিক মহলের মতে, সরকারের সব ধরনের রদবদলের নেপথ্যেই কোনও না কোনও ভাবনা এবং নির্দিষ্ট কারণ থাকে। এ ক্ষেত্রেও তা নিশ্চিত ভাবেই রয়েছে।
পর্যটন দফতর সূত্রের খবর, মন্ত্রী বাবুলের এই ‘রদবদল’ নিয়ে কোনও আপত্তি ছিল না। তিনি রদবদলের বিষয়টি সম্পর্কে সম্যক অবহিত ছিলেন। ওই সূত্রটির আরও দাবি, নন্দিনীকে ওই পদ থেকে সরানোর বিষয়ে দল এবং সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে বাবুলের আলোচনা হয়েছে। । জনশ্রুতি: দু’জনেই গানের জগৎ থেকে রাজনীতি এবং মন্ত্রিত্বে আসায় ইন্দ্রনীলের সঙ্গে বাবুলের সম্পর্ক তত ‘মসৃণ’ নয় (যদিও ইন্দ্রনীল বরাবরই রাজ্যের মন্ত্রী। বাবুল প্রথমে ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। এখন তিনি রাজ্যের মন্ত্রী)। সেই ইন্দ্রনীলকে নিগমের শীর্ষপদে আনলে কি বাবুল ‘স্বস্তি’ পাবেন? সে বিষয়ে বাবুল বলেন, ‘‘আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, আমার বহু পুরনো বন্ধু এবং মন্ত্রিসভায় আমার সহকর্মী ইন্দ্রনীলদা পর্যটন উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান হয়েছেন। আমি মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানাব, এই ব্যাপারে আমার অনুরোধটি অত্যন্ত স্নেহের সঙ্গে গ্রহণ করার জন্য।’’
প্রসঙ্গত, বিজেপি থেকে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর বাবুলকে বালিগঞ্জ উপনির্বাচনে প্রার্থী করে তৃণমূল। জয়ের কয়েক মাস পর রাজ্য মন্ত্রিসভায় জায়গা পান তিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারে আসার পর থেকে পর্যটনকে বাড়তি গুরুত্ব দিয়েছেন। নতুন নতুন জায়গাকে পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্র তৈরি করতেও সরকারকে উদ্যোগী হতে দেখা গিয়েছে গত ১২ বছরে। সে দিক থেকে নতুন মন্ত্রী হলেও বাবুলকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বই দেওয়া হয়েছিল। পর্যটনের পাশাপাশিই তাঁকে তথ্যপ্রযুক্তি দফতরেরও দায়িত্ব দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। বাবুল আনন্দবাজার অনলাইনকে আরও বলেন, ‘‘মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী পর্যটন দফতরের মূল লক্ষ্য হল, আমাদের প্রকল্পগুলির কাজ তরান্বিত করা। ইন্দ্রদার আসায় আমি আত্মবিশ্বাসী যে, ওঁর অভিজ্ঞতার সাহায্যে আমরা খুব দ্রুত গতিতে পর্যটন নিয়ে আমাদের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর লক্ষ্যগুলি পূরণ করতে পারব। আমি তাঁকে পর্যটন পরিবারে স্বাগত জানাই।’’
ঘটনাচক্রে, দায়িত্ব নিয়ে রাজভবনে আসার কয়েকমাস পরে রাজ্যপাল বোসের বাংলায় ‘হাতেখড়ি’র আয়োজন করেছিলেন নন্দিনী। কিন্তু সেই ঘটনার অব্যবহিত পরেই দু’পক্ষের সংঘাত বাধে। রাজ্যপাল লিখিত ভাবে নবান্নকে জানান, নন্দিনীকে তিনি তাঁর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিচ্ছেন। সেই সময়ে কিছুদিন বিষয়টি নিয়ে নবান্ন-রাজভবনের ‘ঠান্ডা যুদ্ধ’ও দেখা গিয়েছিল। তবে রাজভবন নন্দিনীকে সরানোর বিষয়ে অনড় থাকায় নবান্ন শেষ পর্যন্ত এই আমলাকে পর্যটনের প্রধান সচিবের দায়িত্ব দেয়। সঙ্গে পর্যটন উন্নয়ন নিগমের মাথায়ও বসানো হয় তাঁকে। কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই তাঁকে সেই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ, আরও এক বার বিতর্কে নন্দিনী।