Mahua Moitra

‘ঘর বন্দি’ বিধায়ক, এ বার ‘বহিষ্কৃত’ সাংসদ মহুয়া মৈত্রও, তাঁদের কী হবে? আতান্তরে কৃষ্ণনাগরিকেরা

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ২১:৪৯
Image of TMC leader Mahua Moitra

নিজের সাংসদ এলাকায় মহুয়া মৈত্র। — ফাইল ছবি।

লোকসভার এথিক্স কমিটির রিপোর্টের জেরে সাংসদপদ খুইয়েছেন মহুয়া মৈত্র। আর তার পরেই আতান্তরে পড়েছে কৃষ্ণনগর। কারণ, দলবদলের পর থেকে বিধানসভা কেন্দ্রে সে ভাবে দেখা মেলেনি কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়ক মুকুল রায়ের। এ বার কৃষ্ণনগর লোকসভার সাংসদ মহুয়াকে বহিষ্কার করল সংসদ। কী হবে নাগরিকদের, এখন তা নিয়েই ভাবিত কৃষ্ণনগর।

Advertisement

শুধু কৃষ্ণনগর উত্তর বিধানসভাই নয়, করিমপুর থেকে কৃষ্ণনগর পর্যন্ত মহুয়ার সংসদীয় কেন্দ্রেই ‘ক্ষোভ’ এথিক্স কমিটির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে। আবার ভিন্নমতও আছে। সাংসদপদ খারিজ হওয়ার সম্ভাবনা যে প্রবল, তা কৃষ্ণনগর আঁচ করতে পেরেছিল গত কয়েক দিনের ঘটনাপ্রবাহ থেকেই। অনেকেই মনে করছিলেন, সম্মিলিত বিরোধীদের চাপে হয়তো নরম মনোভাব নেওয়া হবে। কিন্তু বেলা গড়াতেই স্পষ্ট হয়ে যায়, এই দফায় সংসদে মহুয়ার শেষ দিন হতে চলেছে শুক্রবারই। তার পরেই পক্ষে-বিপক্ষে তুমুল আলোচনা শুরু হয়ে যায় কৃষ্ণনগর লোকসভার আনাচেকানাচে।

কৃষ্ণনগর উত্তর থেকে তেহট্ট— সর্বত্র এথিক্স কমিটির সিদ্ধান্ত নিয়ে গণআলোচনা শুরু হয় সাধারণ মানুষের মধ্যে। চায়ের কাপে ওঠে তুফান। তাতে এক দিকে যেমন এথিক্স কমিটির সুপারিশের বিরোধিতার সুর শোনা যায়। তেমনই মহুয়া জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে ‘ছেলেখেলা’ করেছেন, এই মতও শোনা যেতে থাকে অল্পবিস্তর। কেউ যদি চোখ পাকিয়ে বলে ওঠেন, বিজেপির মোদী সরকার আদানির অনিয়ম নিয়ে সংসদে ‘কোণঠাসা’ হওয়ার ‘ভয়ে’ মহুয়াকে অন্যায় ভাবে লোকসভা থেকে তাড়াল, তার প্রত্যুত্তর এসেছে, মহুয়া যে ভাবে সংসদের ‘লগইন আইডি’ বিলিয়ে দিয়েছিলেন, তাতে দেশের গরিমা ভূলুন্ঠিত হয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে আপোস মেনে নেওয়া যায় না। তার শাস্তি মহুয়া পেয়েছেন। তবে সাংসদ না থাকার প্রভাব যে নাগরিক পরিষেবায় পড়তে চলেছে তা নিয়ে কোনও বিরোধ নেই কৃষ্ণনগরের ভোটারদের মধ্যে। কারণ, এই লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্রের ‘বিজেপি’ বিধায়ক মুকুল রায় দীর্ঘ দিন ধরে অসুস্থ। ইদানীং তো শয্যাশায়ী। কেন্দ্রেও তাঁকে দেখা যায় না অনেক দিন। এ বার সেই এলাকা সাংসদ শূন্য হয়ে গেল।

এ প্রসঙ্গে কৃষ্ণনগর চকের পাড়ার বাসিন্দা গৃহবধূ সোমা ঘোষ বলেন, ‘‘বিভিন্ন সরকারি কাজে বিধায়ক কিংবা সাংসদের শংসাপত্রের প্রয়োজন হয়। আমাদের বিধায়ক অসুস্থ। এ বার অনৈতিক ভাবে খারিজ করা হল মহুয়ার সাংসদ পদও। আমাদের পরিষেবার কী হবে?’’

নাকাশিপাড়ার বাসিন্দা সুবিমল মণ্ডল ক্যানসার আক্রান্ত। তিনি বলছেন, ‘‘কেন্দ্রীয় তহবিলের সাহায্য পাওয়ার জন্য সাংসদের সুপারিশপত্র বাধ্যতামূলক। সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ। কিন্তু সাংসদই যদি না থাকেন তাহলে অর্থ সাহায্য পাব কী করে! এত ব্যয়বহুল চিকিৎসা চালানো আমার পক্ষে অসম্ভব।’’ করোনাকালের স্মৃতি রোমন্থন করছেন বিক্রমজিৎ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলছেন, ‘‘কোথাও অক্সিজেন মিলছিল না। হাসপাতালে বেড নেই। গ্রামের পর গ্রাম উজাড় হওয়ার অবস্থা। আমরা সবাই ছুটেছিলাম মহুয়া দি’র কাছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব ব্যবস্থা হয়ে গেল। আপৎকালীন ভেন্টিলেটরও পেলাম। এক মাসের মধ্যে মহকুমা হাসপাতালে বসল অক্সিজেন প্ল্যান্ট। ওঁর সাংসদপদ খারিজ হওয়া মানুষের কাছে বিরাট ক্ষতি।’’

রাজনৈতিক বিরোধিতা ছিল, আছে, থাকবেও। তবুও সব দলের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা ছিল বলিয়েকইয়ে এই নেত্রীর। সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক রঞ্জিত মণ্ডল বলেন, ‘‘রাজনৈতিক মতবিরোধ থাকলেও যে কোনও প্রয়োজনে মহুয়াকে ফোন করে যথেষ্ট সাহায্য পেয়েছি। ওঁর সাংসদপদ খারিজ হওয়া এই লোকসভা কেন্দ্রের মানুষের কাছে বড় সমস্যা তৈরি করতে পারে। যে ভাবে এটা কর হল সেটা আরও খারাপ।’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা বিজেপির এক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, রাজনৈতিক লড়াইয়ের বাইরে তাঁদের বিভিন্ন ভাবে সাহায্যও করেছেন মহুয়া। তিনি বিশেষ ভাবে উল্লেখ করেন, চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে মহুয়া দলের রং না দেখে অকাতরে সাহায্য করেছেন। তেমন জনপ্রতিনিধির বহিষ্কারে খানিকটা হলেও মন খারাপ বিজেপি নেতাদেরও।

আরও পড়ুন
Advertisement