প্রতীকী ছবি।
বহরমপুর ব্লকের মণীন্দ্রনগর পঞ্চায়েতের প্রধানের উপর আস্থা আগেই হারিয়েছিলেন তৃণমূল পরিচালিত ওই পঞ্চায়েতের তৃণমূলেরই সদস্যরা। সরকারি ভাবে বৃহস্পতিবার পঞ্চায়েতে তাঁরা মিলিত হয়ে প্রধান মনোজ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনলেন। অপসারিত হলেন মনোজ। সরকারি নিয়ম মেনে বিডিও যে দিন নতুন প্রধান নির্বাচনের দিনক্ষণ জানাবেন সেদিন ওই পঞ্চায়েতে প্রধান নির্বাচিত হবেন।
উপ-প্রধান সাকিলা খাতুন বলেন, “আমাদের আড়ালে রেখে প্রধান সব কাজ করতেন। তাঁর ব্যবহারের কারণে আমাদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কও ভাল ছিল না।” প্রধান মনোজ চক্রবর্তী বলেন, “নিয়ম অনুযায়ী কোনও প্রস্তাব পঞ্চায়েতের সাধারণ সভায় পাশ না করলে কোনও কাজই হয় না। এ ছাড়া প্রশাসন সরাসরি নির্দেশ দিলে প্রধান সদস্যদের না জানাতেই পারেন। কারণ প্রশাসনের হুকুমে সেই কাজ করতে হবে প্রধানকে। পঞ্চায়েত সদস্যদের এই ন্যূনতম জ্ঞান থাকা উচিত। একের পর এক বৈঠকে সদস্যরা উপস্থিত হলেও প্রস্তাবের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন না। উন্নয়নের বাধা দেবেন না বলে অনুরোধ করলেও ওঁরা বলতেন এটা দলীয় সিদ্ধান্ত। তবে আমাকে অপসারিত করায় আমার কোনও ক্ষোভ নেই।”
বৃহস্পতিবার ওই পঞ্চায়েত কার্যালয়ে ১৪৪ ধারা জারি থাকায় কার্যালয় ঘিরে রেখেছিল বহরমপুর থানার পুলিশ। পঞ্চায়েত সূত্রে জানা যায়, “বিশ্বাসের অভাবে” সোমবার থেকে সারগাছির একটি রিজ়র্টে পঞ্চায়েতের নির্বাচিত সদস্যদের আটকে রাখা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার অনাস্থা আনার আগে তাঁদের সেখান থেকে পঞ্চায়েত কার্যালয়ে আনা হয় ও পঞ্চায়েতের একটি ঘরে রাখা হয়। পরে বিডিওর প্রতিনিধি এসে অনাস্থা প্রস্তাব গ্রহণ করলে পুলিশি পাহারায় সদস্যরা নিজের নিজের বাড়ি পৌঁছন।
এদিকে গুরুদাসপুর পঞ্চায়েতে নতুন প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন ওই পঞ্চায়েতেরই উপ-প্রধান শাহজাহান মণ্ডল। তৃণমূল পরিচালিত বহরমপুর ব্লকের ওই পঞ্চায়েতের প্রধান ইউনুস আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তাঁর বিরুদ্ধে আগেই অনাস্থা এনেছিলেন তৃণমূলেরই আর এক গোষ্ঠীর লোকজন। তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, ইউনুস, মনোজ দলেরই প্রাক্তন ব্লক সভাপতি আশিস সরকার গোষ্ঠীর সদস্য আর গুরুদাসপুরে নয়া প্রধান বর্তমান ব্লক সভাপতি আইজুদ্দিন মণ্ডলের পক্ষে। তৃণমূল সূত্রের খবর, ওই দুই তৃণমূল নেতার অন্তর্দ্বন্দ্বই বহরমপুর ব্লকের একাধিক পঞ্চায়েতের প্রধান অপসারণের মূল কারণ। আবার ছয়ঘরি পঞ্চায়েতের প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেও পিছু হঠতে হয় তৃণমূলের ব্লক সভাপতি আইজুদ্দিন মণ্ডলের গোষ্ঠীদের। ছয়ঘরি পঞ্চায়েতের মোট সদস্য সংখ্যার অর্ধেক সদস্য প্রধানের পক্ষে থাকায় ওখানে কোনও অনাস্থা আনবার সুযোগ পাননি তাঁরা। ফলে ওই প্রধান অপসারিত হননি।
বহরমপুর ব্লকের অধীন ১৭টি পঞ্চায়েত। তার মধ্যে একটি বিজেপি’র। বিজেপির হাতে থাকে সেই সাটুই পঞ্চায়েতের প্রধানের বিরুদ্ধেও অনাস্থার সলতে পাকাতে শুরু করেছে তৃণমূল। তৃণমূল ব্লক নেতৃত্বের দাবি, ওই পঞ্চায়েতে বিজেপি’র ন’জন সদস্যদের মধ্যে একজন শাসক দলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। ফলে সংখ্যায় বেশি হওয়ায় সেখানেও বর্তমান প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনবে দল। আগামীদিনে ভাকুড়ি ১ নম্বর পঞ্চায়েতে অনাস্থা আনার তোড়জোড় শুরু হয়েছে বলে দাবি ব্লক নেতাদেরই একাংশের।
তবে জেলা সভাপতির নির্দেশ উপেক্ষা করে জেলার একের পর এক পঞ্চায়েতে অনাস্থা আনায় বিব্রত জেলা নেতৃত্বও। মণীন্দ্রনগর পঞ্চায়েতে বসে বহরমপুর পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য অভিজিৎ বর্ধন বলেন, “এগুলো পঞ্চায়েত সদস্যদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। তাঁরাই জানেন দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কেন অনাস্থা আনছে্ন তাঁরা। আমরা এ ব্যাপারে কখনও সহমত নই।” ওই পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান সাকিলা খাতুন বলেন, “দলের নেতাদের কথাতেই যা হওয়ার তাই হয়েছে।”