প্রতীকী চিত্র।
গত বিধানসভা নির্বাচনের সময়ে একজন দলের শমসেরগঞ্জের প্রার্থীর বিরোধিতা করেছিলেন, অন্য জন দলের সুতি কেন্দ্রের প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়াইয়ে নেমেছিলেন। তৃণমূল সূত্রের খবর, সে সময় জেলায় নির্বাচনী বৈঠকে এসে দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অন্যদের সঙ্গে জেলা পরিষদের ওই দুই কর্মাধ্যক্ষকেও বহিষ্কারের কথা ঘোষণা করেন। আর শুক্রবার তাঁদের সঙ্গেই জেলা পরিষদের উন্নয়ন সংক্রান্ত বৈঠকে যোগ দিলেন তৃণমূলের জেলা পরিষদের অন্য কর্মাধ্যক্ষরা। যা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে হইচই শুরু হয়েছে।
সূত্রের খবর, এ দিন মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) জেলা পরিষদে উন্নয়ন সংক্রান্ত বৈঠক ডেকেছিলেন। সেই বৈঠকে ৮ জন কর্মাধ্যক্ষ, জেলা পরিষদের মেন্টর মহম্মদ সোহরব-সহ জেলা পরিষদের আধিকারিকরা উপস্থিত ছিলেন।
সূত্রের খবর, সেই বৈঠকে জেলা জুড়ে ১০০ টি জায়গায় হাইমাস্ট লাইট লাগানো, ফেরিঘাটের দরপত্র ডাকাসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে এদিনের বৈঠকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত জেলাশাসক(জেলা পরিষদ) অপ্রতীম ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘রেজিউলেশন লেখা হচ্ছে। রেজিউলেশন হাতে না পাওয়া পর্যন্ত মন্তব্য করব না।’’
জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি মোশারফ হোসেন মণ্ডল ও জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি বৈদ্যনাথ দাসের জেলা পরিষদের সদস্যপদ খারিজ হয়েছে। ফলে জেলা পরিষদের সভাধিপতি ও সহকারী সভাধিপতি পদ শূন্য হয়েছে। ওই পদে নির্বাচন না হওয়ায় মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদে অচলাবস্থা চলছে। সভাধিপতির নেতৃত্বে জেলা পরিষদের সব ধরনের প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জেলা পরিষদের অর্থ স্থায়ী সমিতির চেয়ারম্যানও তিনি। প্রতি তিন মাসে অন্তত একবার অর্থ স্থায়ী সমিতির বৈঠক হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারি মাসে শেষ বার অর্থ স্থায়ী সমিতির বৈঠক হয়েছিল। তার পরে সভাধিপতি ও সহকারী সভাধিপতি পদ শূন্য হওয়ার কারণে অর্থ স্থায়ী সমিতির বৈঠক হয়নি। এই পরিস্থিতিতে কর্মাধ্যক্ষদের ও মেন্টরকে নিয়ে বৈঠক ডেকেছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক।
জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ আনারুল হক গত বিধানসভা নির্বাচনে শমসেরগঞ্জে তৃণমূলের প?্রার্থীর প্রকাশ্যে বিরোধিতা করেছেন। এ ছাড়া জেলা পরিষদের খাদ্য দফতরের কর্মাধ্যক্ষ মইদুল ইসলাম সুতি কেন্দ্রের তৃণমূলর প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্দল হিসেবে লড়াই করেছেন। বৃহস্পতিবারও খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ মইদুল ইসলাম খাদ্য স্থায়ী সমিতির বৈঠক ডেকেছিলেন। সেই বৈঠকে অবশ্য খাদ্য স্থায়ী সমিতির তৃণমূলের জেলা পরিষদের সদস্যরা দলের নির্দেশে অনুপস্থিত ছিল। আর শুক্রবার সেই মইদুল ইসলাম ও আনারুল হকে সঙ্গে অতিরিক্ত জেলাশাসকের ডাকা বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন তৃণমূলের অন্য কর্মাধ্যক্ষরা।
বহিষ্কৃত এবং বিতর্কিত কর্মাধ্যক্ষদের সঙ্গে বৈঠকে যোগ দিলেন কেন? জেলা পরিষদের তৃণমূলের এক কর্মাধ্যক্ষ অবশ্য বলেন, ‘‘ওঁদের দল থেকে বহিষ্কার করলেও এখনও কর্মাধ্যক্ষ রয়েছেন। ফলে প্রশাসনিক বৈঠকে ওঁদের সঙ্গে থাকতেই হয়েছে।’’
খাদ্য দফতরের কর্মাধ্যক্ষ মইদুল ইসলাম বলেন, ‘‘অতিরিক্ত জেলাশাসক বৈঠক ডেকেছিলেন। কর্মাধ্যক্ষ হিসেবে সেই বৈঠকে যোগ দিয়েছিলাম।’’ একইসঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘আমি কখনই তৃণমূলের বিরোধিতা করিনি। স্থানীয় প্রার্থীর কার্যকলাপের বিরোধিতা করেছিলাম। ফলে আমি বরাবরই তৃণমূলের পাশে, দলনেত্রীর পাশে আছি। উনি (সুতির বিধায়ক) যদি ভাল কাজ করেন, তবে তাঁর পাশেও থাকব।’’ আনারুল হক বলেন, ‘‘শমসেরগঞ্জের প্রার্থী নিয়ে আমার আপত্তি ছিল। এছাড়া সারা জেলায় দলের হয়ে প্রচার করেছি। ফলে আমি কখনই তৃণমূলের বিরোধিতা করিনি। আমি তৃণমূলেই আছি।’’
জেলা পরিষদের দুই কর্মাধ্যক্ষ মইদুল ইসলাম ও আনারুল হকের বাড়ি তৃণমূলের জঙ্গিপুর ইউনিট এলাকায়। রাজ্য তৃণমূলের সহসভাপতি মহম্মদ সোহরব বলেন, ‘‘ওরা এখনও জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ রয়েছেন। স্বাভাবিক ভাবে জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষের ডাকা বৈঠকে তাঁদের সঙ্গে আমাদেরও যোগ দিতে হয়েছে।’’