প্রতীকী চিত্র।
তৃণমূল বিধায়কদের সংবর্ধনার দিন একটু পিছন ফিরে দেখলে দেখা যায়, দেওয়াল লিখন থেকে ফ্লেক্স, ব্যানার হোর্ডিংয়ের ছয়লাপ দেখে চক্ষুস্থির হয়েছিল বহরমপুরবাসীর। চলতি বছর বিধানসভা ভোটের প্রচারে তৃণমূলের জোড়া ফুলে সেজেছিল বহরমপুর বিধানসভার শহর থেকে গ্রাম। এমনকি মিটিং মিছিলেও ছিল অভিনবত্ব। মনোনয়ন জমা দিতে যাওয়ার পথেও সবুজ আবীর উড়িয়েছিলেন তাঁর সমর্থকরা। দলীয় পতাকায় মুড়ে ফেলেও বহরমপুরবাসীর মন পেতে মরিয়া বহরমপুরের তৃণমূল প্রার্থী নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায় “ত্রুটিমুক্ত প্রচার করতে জলের মত পয়সা খরচ করেছেন” বলে তাঁর ঘনিষ্ঠ জনরাই আলোচনা করতেন নির্বাচনকালে। আর তাঁর কাছে প্রচারে পিছিয়ে গিয়ে সে সময় বিরোধীরা ছুড়ে দিয়েছিলেন ব্যক্তিগত কটাক্ষও। সংসদীয় রাজনীতিতে প্রবেশের জন্য প্রথম লড়াই লড়তে মাঠে নেমে ‘প্রচার সর্বস্ব’ বিধায়ক পদ হাতছাড়া হলেও নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠানো তথ্যানুযায়ী খরচের হিসাবে জেলায় সবার চেয়ে এগিয়ে কিন্তু নাড়ুগোপালই।
বিধানসভা নির্বাচনে প্রচার বাবদ তিনি সর্বমোট ৩০ লক্ষ ৩২ হাজার ৯৯৯ টাকা খরচ করেছেন। প্রার্থী হিসাবে তাঁর নাম ঘোষণার পরমুহুর্ত থেকেই তাঁর নামে দেওয়াল লিখন শুরু হয়েছিল বহরমপুরে। আর তা চলেছিল কমিশনের বেঁধে দেওয়া নির্বাচন শুরুর ৭২ ঘণ্টা আগে পর্যন্ত। আর ওই বিধানসভাতেই ভোট প্রচারে ২২ লক্ষ ৬২ হাজার ৬৭৫ টাকা খরচ করে বিজেপি’র সুব্রত ওরফে কাঞ্চন কংগ্রেসের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছেন বিধায়ক পদ। আর বিধায়ক পদ ধরে রাখতে কংগ্রেস প্রার্থী মনোজ চক্রবর্তী চেনা মুখের সঙ্গে একুশের ভোট প্রচারে ১০ লক্ষ ৮ হাজার ৫২০ টাকা খরচ করেছেন বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়। কিন্তু বিধায়ক পদ ধরে রাখতে পারেননি।
সেই একই খরচের নিরিখে জেলার ২০টি আসনের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে আছেন খড়গ্রাম বিধানসভার প্রার্থী আশিষ মার্জিত। তিনি ২৭ লক্ষ ৯২ হাজার ৫৭ টাকা খরচ করেছেন। নাড়ুগোপালের স্টাইলে তিনিও প্রচার করেছিলেন বলে তাঁর দলেরই দাবি। আর তৃতীয় স্থানে আছেন লালগোলার বিধায়ক মহম্মদ আলি। তিনি ২৫ লক্ষ ৭৫ হাজার ৭৮৯ টাকা খরচ করেছেন বলে জানা যায়। প্রচারের খরচ ২৫ লক্ষ টাকার কম বেশি খরচ করেছেন তৃণমূলেরই আরও কয়েকজন। তাঁদের মধ্যে জলঙ্গির আবদুর রজ্জাক মোল্লা, নবগ্রামের কানাই চন্দ্র মণ্ডল, ডোমকলের জাফিকুল ইসলাম, বেলডাঙার হাসানুজ্জামান সেখ। তবে সবাই জিতে বিধায়ক হয়েছেন। কিন্তু প্রায় সমপরিমাণ টাকা প্রচারে খরচ করেও মানুষের মন একুশে জিততে পারেননি মুর্শিদাবাদের শাওনী সিংহ রায়। ওই একই দলের প্রবীণ নেতা সুব্রত সাহার ভোট প্রচারের খরচ অবশ্য দশ লক্ষও ছাড়ায়নি। উল্টে একুশের ভোটে জিতে তিনি হ্যাট্রিক করেছেন বিধায়ক হয়ে।
তবে একুশের বিধানসভা নির্বাচনে খরচের নিরিখে এঁদের কেউই খাতায় কলমে নির্বাচন কমিশনের বেঁধে দেওয়া সর্বোচ্চ ৩০ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা খরচ না করলেও ভোট প্রচারে প্রার্থীদের এতটাকা খরচ করা ও অর্থের উৎস নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।
তৃণমূলের রাজ্য সহ সভাপতি মইনুল হাসান বলেন “খরচের দরুণ প্রত্যেক প্রার্থীকে দল থেকে কিছু টাকা দেওয়া হয় চেকের মাধ্যমে। সর্বস্তরের মানুষের কাছ থেকে চাঁদা তোলা হয়। টান পড়লে প্রার্থী নিজেও কিছু খরচ করেন।” তবে সে কথায় মন ভেজাচ্ছে না কংগ্রেস। কংগ্রেস মুখপাত্র জয়ন্ত দাস বলেন, “জনমানসে সৎভাবে টাকা তোলার একমাত্র পথ দলের রসিদ।’’