রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে প্রায় মাসখানেক আগে মিলেছিল এমন স্যালাইনের বোতল। ছবি:সুদেব দাস।
মাসখানেক আগের ঘটনা।
রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে এক রোগীকে স্যালাইন দিতে গিয়ে নার্সিং স্টাফের নজরে আসে, স্যালাইনের বোতলে যেন তুলো বা ছত্রাকের মতো কিছু ভেসে বেড়াচ্ছে। তড়িঘড়ি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই ব্যাচের সমস্ত স্যালাইন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন। রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরে খবর দেওয়া হলে ড্রাগ কন্ট্রোল তার নমুনা পরীক্ষার জন্য নিয়ে গিয়েছে।
ঘটনাচক্রে, মেদিনীপুর মেডিক্যালে প্রসূতি-মৃত্যুর পরে 'পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যাল' নামে উত্তরবঙ্গের চোপড়ার যে প্রস্তুতকারক সংস্থার নাম সামনে এসেছে, রানাঘাটের ওই স্যালাইন একই সংস্থার তৈরি। তবে মেদিনীপুরে প্রসূতিকে রিঙ্গার্স ল্যাকটেট (আরএল) স্যালাইন দেওয়া হয়েছিল আর রানাঘাটে ডেক্সট্রোজ় ইনফিউশন ইন নর্মাল স্যলাইন (ডিএনএস) স্যালাইনে মেলে সন্দেহজনক দ্রব্যের হদিস। শনিবার রানাঘাট মহাকুমা হাসপাতালে সুপার চিকিৎসক প্রহ্লাদ অধিকারী বলেন, "নমুনা পরীক্ষার পর রিপোর্ট যা-ই আসুক না কেন, ওই স্যালাইন কোনও ভাবেই ব্যবহার করা হবে না।"
মেদিনীপুরের ঘটনা সামনে আসতেই রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলিতে আরএল স্যালাইন ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশেষ নির্দেশিকা জারি করেছে স্বাস্থ্য দফতর। শনিবার কল্যাণী জেএনএমের সুপার চিকিৎসক অতনু বিশ্বাস বলেন, "ওই নির্দেশিকায় বেশ কিছু নির্দিষ্ট ব্যাচের স্যালাইনের কথা উল্লেখ করে সেগুলি ব্যবহার করতে মানা করা হয়েছে।"
কিন্তু মেডিক্যাল কলেজ বাদে যে সব সরকারি হাসপাতাল রয়েছে সেগুলির পরিস্থিতি কী?
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে রানাঘাট হাসপাতালে আরএল স্যালাইন দেওয়ার পর বেশ কয়েক জন রোগীর কাঁপুনি শুরু হয়েছিল। তার নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টও মেলেনি। ২০২৩ সালের জুলাই-অগস্টেও অস্ত্রোপচারের পর যে সব প্রসূতিকে একটি নির্দিষ্ট ব্যাচের আরএল স্যালাইন দেওয়া হয়েছিল, তাঁদের অবস্থা হঠাৎ খারাপ হয়। ড্রাগ কন্ট্রোল অবশ্য নমুনা পরীক্ষা করে প্রায় এক বছর পর সেই স্যালাইনকে ‘ক্লিনচিট’ দেয়।
নির্দিষ্ট কিছু ব্যাচ নম্বরের স্যালাইনে গোলমালের হদিস পেতে ড্রাগ কন্ট্রোলের রিপোর্ট পাওয়া জরুরি। কিন্তু বছর ঘুরে যাচ্ছে কেন? রাজ্যের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফরের বিশেষ সচিব ইউনিস ইসলাম বর্তমানে ড্রাগ কন্ট্রোলের বিষয়টি দেখছেন। শনিবার তাঁকে ফোন করা হলেও তিনি তা ধরেননি, মোবাইল বার্তারজবাবও দেননি।