খড়কুটোর মতো উড়ে গেল দূরত্ববিধি। মাস্কও নেই যথাস্থানে। কৃষ্ণনগরে ‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরে। মঙ্গলবার। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।
প্রথম দিন দুয়ারে সরকারের কোনও শিবিরেই কোভিড-বিধি মানার কার্যত কোনও চিহ্ন ছিল না। ভিড়়ের চাপ, ধাক্কাধাক্কির মধ্যে নামগন্ধ মেলেনি দূরত্ববিধির। আর সেই ভিড়়ে থাকা মানুষেরা অধিকাংশই মাস্কের তোয়াক্কা করেননি।
মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিন নিয়মবিধি মানার ব্যাপারে প্রশাসন কিছুটা সজাগ বা সতর্ক হলেও শিবিরে আসা বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে তেমন সচেতনতা চোখে পড়েনি। দু-একটি জায়গায় মাস্ক না থাকলে গেটে আটকানো হয় মানুষকে। হাতে স্যানিটাইজার দিয়ে এবং একটি করে সার্জিক্যাল মাস্ক ধরিয়ে তবে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। তবে সেই মাস্ক শেষ পর্যন্ত অনেকেরই নাকে ওঠেনি, হাতেই ধরা ছিল!
করিমপুর, রানাঘাট, তেহট্ট, চাকদহ-সহ বেশ কিছু জায়গায় সতর্কতা অবলম্বনের চেষ্টা ছিল, কিন্তু তাতে সাফল্য আসেনি। নবদ্বীপ, শান্তিপুর এলাকায় অসম্ভব ভিড়ে উবে গিয়েছে কারণে করোনা-বিধি। মঙ্গলবার তেহট্ট ১ ব্লকের পাথরঘাটা সাহাবুদ্দিন মন্ডল উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় দুয়ারে সরকার। সোমবারের মতো এদিনও ভোর বেলা থেকে লম্বা লাইন পড়ে লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের আবেদনের জন্য। আরো অন্যান্য প্রকল্পের আবেদন এর জন্য গ্রাহকদের সুবিধার্থে, করে দেওয়া হয় ব্যারিকেড। তবে অন্য প্রকল্পের ক্ষেত্রে সে ভাবে ভিড়় লক্ষ্য করা যায়নি। পুলিশ মোতায়ন থাকাই বিকেল পর্যন্ত সঠিক ভাবেই কাজকর্ম চলে দুয়ারে সরকারের।
চাকদহ ব্লকের তাতলা ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত মঙ্গলবার শিবির করেছিল কামালপুর আদর্শ বিদ্যাপীঠ (উচ্চ মাধ্যমিক) মাঠে। ভিড় হয়েছিল যথেষ্ট। দুপুরের পরে বৃষ্টি শুরু হলে সমস্যা বাড়়ে। তবে ত্রিপলের ব্যবস্থা ছিল। সকলের হাতে স্যানিটাইজার দেওয়া হয়েছে। যাঁদের মাক্স ছিল না তাঁদের মাস্ক দেওয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও নিয়ম মানেননি অনেকে। শান্তিপুর ব্লকে মঙ্গলবার থেকে দুয়ারে সরকার কর্মসূচি শুরু হল। এ দিন বেলগড়িয়া ২ পঞ্চায়েতের ঘোড়ালিয়া এলাকার একটি স্কুলে এবং নবলা পঞ্চায়েতের প্রফুল্লনগরের একটি স্কুলে এই শিবির বসে।
শান্তিপুর শহরের মধ্যে হ্যান্ডলুম অফিসে পুর এলাকার ১ থেকে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের জন্য শিবির বসে। এখানে লম্বা লাইনে অধিকাংশ মানুষের মুখেই মাস্ক দেখা যায়নি। কারও আবার মাস্ক থাকলেও তা ঝুলেছে গলায় বা থুতনিতে। কেউ-কেউ প্রশাসনিক কর্তাদের দেখে মাস্ক পরেছেন। ভিড়ের মধ্যে দূরত্ব- বিধি মানা হয়নি।
বেপরোয়া ভিড়ের ছবি দেখা গিয়েছে নবদ্বীপ হিন্দুস্কুল প্রাঙ্গণ এবং সংলগ্ন পথঘাটে। এদিন নবদ্বীপ পুর এলাকার ১ থেকে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের জন্য দুয়ারে সরকার কর্মসূচিতে নাম নথিভূক্ত করা হয়। লক্ষীর ভাণ্ডার প্রকল্পে ১৮০৩ জন নাম নথিভুক্ত করিয়েছেন এবং স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে নাম লিখিয়েছেন ৭৪৮ জন। মোট ২০টি কাউন্টার খোলা হয়েছিল। এরমধ্যে অর্ধেকই ছিল লক্ষীর ভাণ্ডার প্রকল্পের জন্য।
করিমপুর ১ ব্লকের মধুগাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার চেচনিয়া কৃষি-শিল্প বিদ্যানিকেতনের শিবিরে মাস্ক নিয়ে প্রথম থেকেই কড়া মনোভাব নেয় প্রশাসন। সোমবার বিকেলে এলাকায় মাইকে প্রচার করা হয়েছিল যে, মাস্ক না-পরলে শিবিরের ঢুকতে দেওয়া হবে না। তার পরেও যাঁদের মুখে মাস্ক ছিল না তাঁদের একটি করে মাস্ক দেওয়া হয়।