প্রতীকী চিত্র।
বিদ্যুৎ মৈত্র
বহরমপুর
প্রাক্তন ব্লক সভাপতি আশিস সরকার ও বর্তমান ব্লক সভাপতি আইজুদ্দিন মণ্ডলের দ্বন্দ্বের জেরে বহরমপুর ব্লকের গুরুদাসপুর পঞ্চায়েতের পর এবার মণীন্দ্রনগর পঞ্চায়েতের প্রধান মনোজ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব জমা পড়ল বহরমপুর ব্লক উন্নয়ন আধিকারিকের কাছে। আর নিজের দলের নির্বাচিত প্রধানের বিরুদ্ধে স্বজন পোষণের অভিযোগ তুলে সেই অনাস্থা দেখালেন শাসকদলেরই অন্য আর একটা গোষ্ঠী।
মণীন্দ্রনগর পঞ্চায়েতের প্রধান মনোজ চক্রবর্তী অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে তোলা স্বজন পোষণের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “এক মাস কম তিন বছর আমি ওই পঞ্চায়েত চালাচ্ছি। এতদিন কোথাও কোনও অভিযোগ উঠলো না। এখন হঠাৎ করে আমার বিরুদ্ধে স্বজন পোষণের অভিযোগ কেন উঠল তা বলতে পারবো না। আসলে সময়টা বদলে গিয়েছে। সময় হয়েছে ‘এলোমেলো করে দে মা লুটে পুটে খাই’য়ের। তাই হয়তো অনাস্থা এনেছেন সদস্যরা আমার বিরুদ্ধে। প্রশাসন তদন্ত করলেই সত্যিটা জানতে পারবে।”
২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে মণীন্দ্রনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের ৩০টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস দুটি আর তৃণমূল ২৮টি জিতেছিল। ২৮ জন তৃণমূল সদস্যদের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৫ জনের ভোট পেয়ে মনোজ চক্রবর্তী প্রধান নির্বাচিত হয়েছিলেন ওই পঞ্চায়েতে। বর্তমানে ওই পঞ্চায়েতের হাতা কলোনির একজন সদস্য মারা যাওয়ায় সদস্য সংখ্যা ২৭ জন। তার মধ্যে ২৫ জন সদস্য মনোজ বিরোধিতায় সাক্ষর করে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছেন বুধবার।
আর এভাবেই জেলার ২৬টি ব্লকের ২৫৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতের অধিকাংশ পঞ্চায়েতেই হাত বদল হচ্ছে তৃণমূলের এক গোষ্ঠী থেকে আর এক গোষ্ঠীতে। অথচ নিজের দলের একে অপরের মধ্যে তিক্ততা, দ্বন্দ্ব মিটিয়ে পঞ্চায়েত অনাস্থা আনতে বারবার নিষেধ করেছিলেন তৃণমূলের জেলা নেতারা। সে কথায় কর্ণপাত করছেন না কেউই।
একুশের নির্বাচনের আগে জেলায় এসে তৃণমূলেরই একাংশের দল বিরোধী কাজ করায় তাঁদেরকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল সূত্রে দাবি, বহিষ্কৃতরা ছাড়াও দলে থেকে একাংশ সদস্য নির্বাচনে গদ্দারি করেছিলেন বলে অভিযোগ। নির্বাচনে বিপুল ভোটে জিতে দলেরই একাংশ অতি সক্রিয় সদস্য সেই সমস্ত গদ্দারদের বিরুদ্ধে দলবদ্ধ ভাবে ‘স্বেচ্ছায় শাসন’ করতে গিয়ে এই অনাস্থা এনে ‘প্রতিশোধ’ নেওয়ার চেষ্টা করছেন। ‘তাতে যে দলেরই মুখ পুড়ছে তা খেয়াল করছেন না কেউ’ দাবি প্রাক্তন এক ব্লক নেতার। দলের একাংশের আঙুল উঠছে জেলা সভাপতির দিকেও। দলের মুখ বাঁচাতে তাঁকে আরও সক্রিয় হওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছেন তাঁরা।
এদিকে নেতাদের নিজেদের মধ্যে কোঁদলের কারণে থমকে যাচ্ছে সেখানকার উন্নয়নের কাজ। বর্ষায় বসতি এলাকায় জল দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। রাস্তা ভেঙে চলাচলের অযোগ্য হয়ে উঠছে। পানীয় জলের সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। করোনা কালে গ্রামীণ এলাকায় শিকেয় উঠছে স্বাস্থ্যবিধি। গ্রামবাসীদের অনেকের এখনও টিকাকরণ হয়নি। সেদিকে খেয়াল না দিয়ে পঞ্চায়েতের ক্ষমতা দখলের জন্য একে অপরের সঙ্গে ঠোকাঠুকি চলছে দিন রাত, এমনটাই অভিযোগ গ্রামবাসীদের। আর তাতে ইন্ধন যোগাচ্ছেন নয়া বিধায়ক থেকে দলের ব্লক সভাপতি প্রায় সকলেই, অভিযোগ তৃণমূলেরই একাংশের।
যা নিয়ে তৃণমূলের নিন্দায় সরব বিরোধীরা। জেলা কংগ্রেস মুখপাত্র জয়ন্ত দাস বলেন, “জেলার ত্রিস্তর ব্যবস্থায় সরকারি দল এবং বিরোধী দল বলতে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠী প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিবাদমান। তাই দলের নিয়মনীতি তাঁদের কাছে মূল্যহীন। তাঁরা ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বলছে ‘খেলা হবে’। আর এই গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের দৌলতে সভাধিপতি নির্বাচিত করতেও তাঁরা সাহস পাচ্ছেন না। ফলে এক বছরের অধিক সময় উন্নয়ন বিশ বাঁও জলে।”
বিজেপির জেলা সভাপতি গৌরী শঙ্কর ঘোষ বলেন, “ তৃণমূল কোনওদিন উন্নয়নের রাজনীতি করেনি। ওরা ব্যক্তিগত মুনাফার রাজনীতিতেই সিদ্ধহস্ত। এ কারণেই নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব। আর তার জন্যেই এত অনাস্থা। তাতে বিপত্তি বাড়ছে গ্রামবাসীদের।”