TMC

TMC: অনাস্থা আনা যাবে না, সোজা কথা শাওনির

অনাস্থা প্রস্তাব প্রত্যাহার না করলে কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিলেন জেলা তৃণমূল সভানেত্রী শাওনি সিংহ রায়।

Advertisement
মফিদুল ইসলাম
নওদা শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০২১ ০৬:৩২

দলের নির্দেশকে অমান্য করে নওদা পঞ্চায়েত সমিতিতে অনাস্থার তোড়জোড় শুরু হয়েছিল। কিন্তু অনাস্থা প্রস্তাবে সই করা দলের সদস্যদের তলব করলেন জেলা তৃণমূল সভানেত্রী। অনাস্থা প্রস্তাব প্রত্যাহার না করলে কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিলেন জেলা তৃণমূল সভানেত্রী শাওনি সিংহ রায়।

শাওনি বলেন, ‘‘রাজ্যের নির্দেশ মতো তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতি, গ্রাম পঞ্চায়েতে অনাস্থা চলতে পারে না। বিষয়টি রাজ্য নেতৃত্বকেও জানিয়েছি। অনাস্থা প্রস্তাবে সই করা দলের সদস্যদের বলা হয়েছে অনাস্থা প্রস্তাব প্রত্যাহার করতে। অন্যথায় দলগত ভাবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’

Advertisement

বিধানসভা নির্বাচন পর্ব শেষ হতেই এবং পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতির মেয়াদ আড়াই বছর পূর্ণ হতেই জেলার বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতিতে অনাস্থা ঘিরে রাজ্যের শাসকদলের গোষ্ঠী কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছিল।

ইতিমধ্যে দলের নির্দেশকে উপেক্ষা করে জলঙ্গি, বহরমপুর, ডোমকল সহ একাধিক ব্লকে গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধানদের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে নতুন প্রধানও নির্বাচন করেছেন দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের একাংশ।

দলের প্রাক্তন জেলা সভাপতি তথা বর্তমান চেয়ারম্যান সাংসদ আবু তাহের খানের নিজের ব্লকেও একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতির অনাস্থার তোড়জোড় ঘিরে শাসকদলের গোষ্ঠী কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছিল। অনাস্থার তোড়জোড় ঘিরে তাহের ঘনিষ্ঠ ব্লক সভাপতি সফিউজ্জামান শেখ ও বিধায়ক সাহিনা মমতাজ খানের দ্বন্দ্বও চরমে উঠেছিল। তৃণমূল পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতিতে অনাস্থা আনলে ওই চক্রে যে বা যাঁরা জড়িত থাকবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থার কথা ঘোষণা করেছিলেন তাহের।

তবুও জেলা ও রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশকে অমান্য করে একের পর এক পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতিতে অনাস্থা আনা হলেও দল কারও বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতির অনাস্থা ঘিরে শাসকদলের গোষ্ঠী কোন্দল ক্রমশ বেআব্রু হয়ে পড়ছিল। চলতি সপ্তাহের প্রথমেই জেলা সভাপতির পদ থেকে সরানো হয়েছে আবু তাহেরকে। রাজনীতির কারবারিদের দাবি, কোন্দল মেটাতে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই জেলা সভাপতির মত গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে সরানো হয়েছে আবু তাহেরকে। দলের মুর্শিদাবাদ জেলা সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শাওনি সিংহ রায়কে। দলের বহরমপুর-মুর্শিদাবাদ ইউনিটের দায়িত্ব পাওয়ার পরেই শাওনি বলেছিলেন, "কোনও গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতিতে অনাস্থা আনা যাবে না।’’

শুক্রবার সদর মহকুমাশাসকের একটি নোটিস প্রকাশ্যে এসেছে। নওদা পঞ্চায়েত সমিতিতে লিখিত অনাস্থা প্রস্তাব প্রদানকারী ১৫ জন সদস্যকে ওই নোটিসে ২৫ অগস্ট মহকুমাশাসকের দফতরে হাজির থাকতে বলা হয়েছে।

সূত্রের খবর, দিন কয়েক আগেই তৃণমূল, বিজেপি ও নির্দল সদস্য মিলিয়ে মোট ১৫ জন সদস্য পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির বিরুদ্ধে লিখিত অনাস্থা প্রস্তাব ডাকযোগে সদর মহকুমাশাসকের কাছে পাঠিয়েছেন। তার পরিপ্রেক্ষিতেই মহকুমাশাসক অনাস্থা প্রস্তাবে সই করা সদস্যদের হাজিরার নোটিস পাঠিয়েছেন। যদিও অনাস্থা প্রস্তাবে যাঁরা সই করেছেন তাঁরা বলছেন, ‘‘এ বিষয়ে এখনই কিছু বলব না। যা বলার সময় বলবে।’’

সূত্রের খবর অনাস্থার তোড়জোড় শুরু হতেই অনাস্থা রুখতে বিধায়ক ঘনিষ্ঠরা সদস্যদের দার্জিলিং ঘুরতে পাঠানো হয়েছিল। দলের জেলা সভাপতি পরিবর্তন হতেই অনাস্থা হবে না ধরে নিয়েই ওই সদস্যরা বৃহস্পতিবার সকালে ঘরে ফিরেছিলেন। মহকুমাশাসকে নোটিশ পাওয়ার পর ফের তাঁদের গোপন ডেরায় রাখা হয়েছে।

পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ জুলফিকার আলি বলেন, ‘‘২৮ সদস্যের মধ্যে ১৫ জন সদস্য আমাদের সঙ্গে আছেন। যে করেই হোক অনাস্থা রুখব।’’

এলাকায় স্বচ্ছ ভাবমূর্তির বলে পরিচিত পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বিশ্বজিৎ ঘোষের বিরুদ্ধে অনাস্থা মানতে পারছেন না এলাকার অধিকাংশ মানুষ ও দলের বড় অংশের নেতা-কর্মীরা। শাওনি কি পারবেন দলের কোন্দল মিটিয়ে অনাস্থা রুখতে সেদিকেই তাকিয়ে রাজনীতির কারবারিরা।

আরও পড়ুন
Advertisement